|| মানচিত্র আর কাঁটাতার, হৃদয় মাঝে একাকার || বিশেষ সংখ্যায় তপশ্রী পাল

অন্য স্বাধীনতা

দিনটা ১৫ই আগস্ট। যাদবপুরের কলোনি মাঠে সকাল থেকে ফাটা মাইকে বাজছে “মুক্তির মন্দির সোপানতলে” আর “কদম কদম বাড়ায়ে যা”। দুটো মাত্র ধোপদুরস্ত শাড়ীর একটা ইস্তিরি করতে করতে ঊষা শুনছে খুড়োমশাইয়ের গলা মাইকে “আইজ হইলো গিয়া সেই দিন যেদিন, আমাগো দ্যাশ সাহেবগো তাড়াইয়া স্বাধীন হইছিলো! ঘরে ঘরে কতো পোলা জান দিছিলো, শহীদ হইছিলো তার ইয়ত্তা নাই! তাই আইজ আনন্দের দিন! কিন্তু আমাগোর আনন্দের দিন হেইদিন আইবো যেদিন এই কলোনীর মানুষগুলারে সরকার মানুষের চোক্ষে দ্যাখবো! আমরা আমাগো এই টালির ঘরের এক চিলতা জমি আমাগো নিজের কইতে পারবো! …” খুড়োমশাইয়ের গলা ভেঙ্গে আসে। তিনি একবার মাইক হাতে পেলে আর ছাড়েন না। সিনিয়ার মানুষ বলে তিনি পতাকা উত্তোলনের ভার পেয়েছেন, কিন্তু এতো বকবক করেন বলে পিছন থেকে মনে হয় ছেলেরা মাইক নিয়ে নিয়েছে। ঊষা শোনে মাইকে বলছে “আমাদের অনুষ্ঠান এখানেই শেষ, যাওয়ার আগে সবাই রসগোল্লা নিয়ে বাড়ি যাবেন।“ শাড়ী ইস্তিরি করে মেশিনে বসে ঊষা, কাল ব্লাউসটা ছিঁড়ে গেছে। একটু সেলাই চালিয়ে নিতে হবে। মেশিনে একটা সায়াও লাগানো আছে। বোন রমার একটা সায়া সেলাই করছিলো কাল। ওর একটাও সায়া নেই। সব ফাটা। ঊষারা ছয় বোন, চার ভাই, বাবা, বুড়ি জেঠিমা সবাই এই দু ঘরের একচালা টালির বাড়িতে বাস করে। মাটির ঘর। মেঝেও মাটির। মাটিতে ঢালা বিছানা করে একঘরে বোনেরা আর এক ঘরে ভাইরা শোয়। সামনের দাওয়ার একদিক ঢেকে ঘরের মতো করে, সেখানে বাবার বিছানা করা বাড়ির একমাত্র চৌকিতে। জেঠিমা এক চিলতে রান্নাঘরেই শুয়ে পড়েন রাত্রে। বাড়ির পিছনে পুকুরের ধারে হোগলাবনের গায়ে একটা আলাদা ছোট ঘর করে বড়োভাই কমল আর তার বৌ থাকে।
ছোট্ট পার্স খুলে সবিতা দেখে মাত্র দুটো টাকা পড়ে। এই দিয়েই মাসটা চালাতে হবে। হাওয়াই চটি পরে বেরোতে যাবে, এমন সময় খুড়োমশাই আর মেজদা অমল ঢুকলো। হাতে একটা শালপাতায় কটা রসগোল্লা। ঊষা জিজ্ঞাসা করে “কি আনছোস? অই মিষ্ট তোরাই খা, আমারে দিস না, গা গোলায়। সে জানে, সে না খেলে একটা ভাই বা বোন খেতে পারবে। খুড়োমশাইয়ের চোখে ভারী প্লাস পাওয়ারের চশমা। তার ওপর দিয়ে তাকিয়ে উত্তেজিত ভাবে অমলকে বললেন “অরা আমারে কথাই কইতে দিলো না! কও, অন্যায় কিসু কইসি?” অমল চুপ করে থাকে। তখন তিনি ঊষার দিকে তাকিয়ে বললেন “ঊষা, আইজ গান করবা না?” খুড়োমশাই দারুণ গান করেন । পুরোনো দিনের তারাপদ চক্রবর্তীর গান, ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের গান, ভজন এমনকি উত্তর সুচিত্রার সিনেমার গান! বাড়িতে একমাত্র সম্বল একটা পুরোনো হারমোনিয়াম আর একজোড়া তবলা। বাংলাদেশ থেকে একবস্ত্রে চলে আসার সময়, সবিতা এইদুটোকে জোর করে খুলনার নৌকোয় তুলেছিলো! গান যে তার আজন্ম ভালোবাসা! ঊষা বললো “অখন থাক খুড়ামশাই, সন্ধায় বসুম। এখন টিউশন আছে, যাই।“ “যাও গিয়া, আমিই গাই! এই অমল, তবলাখান ধর দেখি!” খুড়ামশাই এই কলোনিতেই থাকেন। তাদের মতোই পূর্বপাকিস্থান থেকে পালিয়ে এসেছেন উদবাস্তু হয়ে। বাবার কিরকম এক দূরসম্পর্কের ভাই হন। এখানে এসে এই পরিবারটিকে খুঁজে পেয়ে আবার সম্পর্ক স্থাপন করেছেন।
সুদর্শন অমল বহু কষ্টে টিউশন করে এম এ পড়ছে । এদেশে এসে বড়দাদা কমল শুধু একটা ছোট্ট চাকরী পেয়েছে পুলিশের ওয়ারলেসে। বিয়েও করেছে। সে আত্মভোলা। নিজের বিড়ি আর চাকরীটুকু বজায় রাখতে পারলেই খুশী! তার বৌ শোভার সারাদিনই প্রায় রান্নাঘরে কাটে। এই বিশাল পরিবারের রান্নার ভার তার। বাকী ভাই বোনেদের দেখাশোনার ভার পুরোই অমলের ওপর। ছোট দুই ভাই স্কুলে পড়ছে। বোনেরাও তাই।
বাবা সারাদিন বসে গড়গড়ায় তামাক খান। তার চোখ উদাস হয়ে দূরের দিকে তাকিয়ে থাকে! এখনো তার মন জুড়ে রয়েছে শীতলাক্ষ্যা নদীর পাড়ে যে থানায় তিনি দারোগা ছিলেন, ঘোড়ায় চড়ে বন্দুক নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন, বিপ্লবীদের খোঁজে গন্ধ শুঁকে বেড়াতেন, সেই সব কথা। নিজের দেশ ছেড়ে যে তিনি অন্য কোথাও রয়েছেন, তার ব্যক্ত মন সে কথা মানে না। কথাবার্তা প্রায় বলেন না বললেই চলে।
চটি গলিয়ে ঠিক বেরিয়ে যাওয়ার মুখে অমল বললো “ঊষি, অরা তোরে পাকা দেখতে আইবো কাইল। চিঠি দিসে। ওদের পসন্দ হইছে। ছেলে নিজে আইবো। তোর লগে কথা কইবো।“ মুখটা সহসা লাল হয়ে ওঠে ঊষার!
১৯৪৭ এর দাঙ্গার সময়, বাবার বন্ধু মনসব চাচার জন্য শুধু কোনরকমে মুসলমান হামলাবাজদের হাত থেকে বেঁচেছিলো ঊষা! নইলে সেদিন তার ইজ্জত বাঁচতো না। বাবার ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন থানায় চাকরী। তাই ওরা সব ভাইবোন বরিশালের গৈলার গ্রামে দেশের বাড়িতেই থাকতো। বেশ কয়েক বিঘা জমি, পুকুর দিয়ে ঘেরা বাড়ি! চারদিকে নারকেল গাছ! বাড়ির সামনেই নদী! আর বাড়ির পুকুরে কতো মাছ! রোজ মাছেদের খাবার দিতো ঊষা, কোলে কাঁখে ভাই বোনদের নিয়ে! এতোগুলো ছেলেমেয়ে হওয়ায় মা অসুস্থ, গায়ে রক্ত কম। তাই নিয়েও মা সকাল থেকে রান্না করতো। ঊষার মনে পড়ে বাড়িতে রোজ মাছের অন্তত তিন চার পদ তো হতোই। চাল মোটা হলেও শুধু নানা মাছের গন্ধে খাওয়া হয়ে যেতো! আর মনে পড়ে দেশের বাড়িতে ধুমধাম করে দুর্গা পুজো! বড়ো নৌকোয় ঠাকুর আসতো রাত্রে! কদিন কী হইচই! এমন সময়, এক বর্ষার রাতে হঠাত মা মারা গেলো! বাবা ঠিক দুদিনের জন্য এসে চলে গেলো! কী যে হয়েছিলো মায়ের বুঝতেই পারেনি ঊষা।
তারপর একদিন শুনেছিলো দেশ স্বাধীন হচ্ছে! বাবা খুশী নয়। ইংরেজরা চলে যাবে! তাহলে থানার কী হবে? চাকরীর কী হবে? ঊষার ছোট্ট মাথায় কিছু ঢুকতো না। ইস্কুল বন্ধ হয়ে গেলো! শহর জুড়ে দাঙ্গা! আসপাশের মুসলমান ঘরের চাচা চাচীরা, যাদের সঙ্গে জন্ম থেকে ওঠা বসা, মাকে কুমড়োর সালুন দিয়ে যেতো রহিমা চাচী! সবার চোখের দৃষ্টি কেমন বদলে গেলো! মুসলমানেরা বললো ঐ দেশ নাকি ওদের! হিন্দুদের সব ইন্ডিয়ায় চলে যেতে হবে! ইন্ডিয়া! সেখানে কোথায় যেতে হবে? ভেবেই পায় না ঊষা! তারপর সেই ভয়ঙ্কর দিন! সন্ধ্যার অন্ধকারে তার ইজ্জত লুটতে এসেছিলো ইবলিশ চাচা, রহিমার বর! ভাবতেই পারেনি ঊষা! তখন ফ্রক পরা ইজের পরা ছোট্ট মেয়েটি! মনসব চাচা দেখতে পেয়ে ওকে টেনে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়েছিলো আর কাটারি নিয়ে তাড়া করেছিলো ইবলিশ চাচাকে! তারপরেই বাবা এলো, মনসব চাচা বললো “এখানে তোমাগো থাকা আর নিরাপদ না! ঐ বাংলায় তোমাগো কেউ আসে?” মামারা কিছুদিন আগে হাওয়া বুঝতে পেরে এই বাংলায় চলে এসেছিলো। বাবা ওদের খুলনার নৌকোয় চাপিয়ে সেখানে পাঠিয়ে দিলো!
ছোট্ট ঊষার দেশ হারিয়ে গেলো, বন্ধু হারিয়ে গেলো, ছোটবেলা হারিয়ে গেলো। সন্তোষপুরের কলোনীতে মামাদের মাটির বাড়িতে এসে উঠেছিলো ওরা বড়ো তিন ভাইবোন! বাকীরা একেবারে ছোট! বাবার সঙ্গে কিছুদিন পরে এসেছিলো। মামার বাড়িতে মামীরা বাড়ির সব কাজ, রান্না চাপিয়ে দিয়েছিলো ঊষার ঘাড়ে। সবার রান্না করে, ভাইদের জামা কেচে, কলেজের জোগাড় করে ঢাকুরিয়ায় ইস্কুলে পড়তে আসতো ঊষা অনেকখানি হেঁটে! ইস্কুল করে হেঁটে যখন ফিরতো, পেটে তখন জলন্ত খিদে! বাড়ি এসে বাসন মেজে রাতের রান্না বসাতে হতো। চোখ ঘুমে ঢুলে আসতো! কাজ করে করে হাত শক্ত হয়ে গেলো। মন আরো শক্ত!
তারপর জোর করে হোগলাবন কেটে রিফিউজিরা আস্তানা গাড়লো। সবার নামে একটু করে জমি। এক হাটু কাদার মধ্যে বাঁশ পুঁতে এই ঘরদুটো তুলেছিলো কমল আর অমল মিলে। এ জমি তাদের কেউ দেয়নি। এই হোগলাবনে এখানকার ঘটি বাসিন্দারা আসতেই ভয় পায়। ঢাকুরিয়ার এধারে কেউ পা দেয় না! সবাই ভয় পেয়ে বলে বাঙ্গালদের কলোনী!
মনটা আজ কেন যেন এলোমেলো হয়ে আছে ঊষার আর শুধু পুরোনো কথা মনে পড়ছে! বয়স তো থেমে নেই। নয় নয় করে সাতাশ বছর হলো! কে আর কলোনীর মেয়েকে বিয়ে করবে? ছোট ছোট এতোগুলো ভাই বোন! বোনগুলো লতার মতো বেড়ে উঠছে! রমা,জবা তো খুবই সুন্দরী! দেখলে কলোনীর ছেলেরা হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। ওদের শরীর ফ্রকের সীমায় আর বাঁধ মানে না। রমা তো শাড়ি ধরেছে!
টিউশন সেরে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরলো ঊষা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে! চারিদিকের ঘর থেকে শাঁখের আওয়াজ আসছে! ঘরে হ্যারিকেন নিয়ে মেঝেতে ঢালা বিছানায় পড়তে বসে গেছে ভাইবোনগুলো! বাবার তামাকের গন্ধ নাকে ভেসে আসছে আর সঙ্গে রান্নাঘর থেকে মুসুর ডালে রাঁধুনি ফোড়নের গন্ধ আর বেগুন ভাজার গন্ধ দরমার ঘরের দেওয়াল ভেদ করে এসে ঊষার খিদেটা বাড়িয়ে দিলো! বড়োবৌদি রাঁধে দারুণ! এইবার তেলে চুনোমাছ পড়লো! ঝাঁঝালো সরষের তেলের সঙ্গে মাছের গন্ধ! রান্নাঘরে গিয়ে ঢুকলো ঊষা! ওকে দেখেই সমস্ত শরীর দুলিয়ে হাসলো শোভা! বৌদির সঙ্গে ভারী ভাব ঊষার! কাছাকাছি বয়স। বললো “চলো রান্না সাইরা আজ আটটার রেডিও নাটক শুনতে যাবা মামাবাড়ি! যাবা!” নাটক শুনতে বড়ো ভালোবাসে ঊষা আর ভালোবাসে উত্তর-সুচিত্রার সিনেমা দেখতে! কিন্তু সে তো পয়সার ব্যাপার। এ মাসে আর হবে না। শোভা মুখ মুচকে বলে “আমি ছবি দেখসি!” “কার ছবি! কও” আকাশ থেকে পড়ে ঊষা! “কেন? ত-বাবুর! বেশ দ্যাখতে কিন্তু! লম্বা চেহারা, চোউখে মোটা ফ্রেমের চশমা!” মুখ লাল হয়ে ওঠে ঊষার! বলে “কি যে কও তার ঠিক নাই! গাছে কাঁঠাল গোফে ত্যাল!” “উহু! কাঁঠাল আর গাসে নাই! টপ কইরা পড়বে এইবার!” বলে আবার সমস্ত শরীর দুলিয়ে হাসে শোভা! ঊষা বলে “চলো চলো রান্না শ্যাষ করো!” বাইরে খুড়োমশাই হাঁক পাড়ে “ঊষি, কই গেলি! গান হবে না?” এই রে! এখন গান গাইতে বসলে নাটক শোনার আগে পৌঁছোতে পারবে? তাও হারমোনিয়ামটা টেনে উঠোনে নিয়ে টুলের ওপর রাখে ঊষা। অমনি অমল তবলা নিয়ে মাটিতে বসে যায়! কণা আর রমাও চলে আসে। আসে সাধন। আকাশে চাঁদ উঠেছে! কলোনীর বাড়িগুলো আলোর বন্যায় ভেসে যাচ্ছে! পাশের বুড়িদের ঘরের মুরগীগুলো কঁ কঁ করে ঘরে ঢুকে গেলো! আজ সবই কেমন সুন্দর লাগছে। ঊষা গান ধরলো “গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু!” খুড়োমশাই গাইছেন বরিশালের ইলিশের গান “রাজার ভোজনিয়া মাছ, ছাওয়াল কান্দুনিয়া মাছ, রান্ধুনি পাগলা মাছ ইলশা রে!” ঊষা হঠাত গেয়ে উঠলো “মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান!” অমল তবলায় বোল তুলেছে! জমে উঠেছে গান! হঠাত শোভা বললো “সাড়ে সাতটা বাজতে আসে!” ব্যাস! এক লাফ দিয়ে উঠে চটি পরে ঊষা হাওয়া!
শোভা আর ঊষা চলেছে পুকুরের ধার ঘেঁষে, হোগলাবন পেরিয়ে সন্তোষপুরের দিকে! প্রায় আধঘন্টা হাঁটতে হবে! শোভা বললো “অরাও বইশ্যাইল্যা! আমাগো মতো! তোমার পসন্দ?” “আমার আবার পসন্দ অপসন্দ! দেখিই নাই!” আস্তে বলে ঊষা! “দ্যাখবা দ্যাখবা, কাল ভাল কইরা দেইখ্যা লইয়ো!” বলে শোভা। “আইচ্ছা! কী দেইখ্যা আমারে পছন্দ করলো কও দেহি! কলোনীর মাইয়ারে তো ভদ্দরলোকে বিয়া করতে চায় না! আমারে অতোদূরে লইয়া গিয়া শ্যাষে…“ ভয়ে ভয়ে বলে ঊষা। “না না, অমল সব বুইঝা লইছে। অর লগে অনেক কতা হইছে!” স্বান্তনা দেয় শোভা।
পরদিন শোভার বিয়ের একটা শাড়ী পরে, চ্যাটালো খোঁপা বেঁধে, সুচিত্রা সেনের ঢঙ্গে ছিটের নতুন ব্লাউস পরে চা নিয়ে ঢুকলো ঊষা। একটু কালোর দিকে, বেশ লম্বা, ভালো স্বাস্থের ছেলেটি, মুখচোখ উজ্জ্বল, গল্প করছে মেজদা অমলের সঙ্গে। আস্তে করে চা নামিয়ে রাখলো ঊষা। একটু পরে অমল ওদের কথা বলার সুযোগ করে দিয়ে বেরিয়ে গেলো। বাইরে অনেকগুলো পা পর্দার তলা দিয়ে চোখে পড়ছে। বৌদি, বোনেদের অসীম কৌতুহল। ছেলেটি বললো “তোমাকে আগে কোথায় দেখেছি যেন!” পরিষ্কার বাংলায় তুমি করে বললো! কোন বাংগাল টান নেই। ভয়ে ভয়ে ঊষা বলে “আপনি আমারে দ্যাখবেন কোথায়? আপনি তো সেই দুর্গাপুর না কোথায় চাকরী করেন!” “তুমি কি ছোটবেলায় গৈলায় থাকতে?” হঠাত বলে ছেলেটি। “অ্যাঁ! হ্যাঁ, থাকতাম। আমাদের দ্যাশ তো!” দেশের ভাষা বেরিয়ে যায় ঊষার! “আমাদের পাশের গ্রাম হবিবপুর! তুমি ছোটবেলায় পাঠশালা যেতে একটা কালির ডাব্বা হাতে ঝুলিয়ে! নাক দিয়ে সিকনি পড়তো! আমি দেখেছি তোমাকে!” সত্যিই তো পাঠশালা যেতো ঊষা! এ ছেলে তাকে অতোদিন আগে দেখে ঠিক মনে রেখেছে! কি লজ্জা, শিকনি পড়াটাও মনে আছে! ঊষার মুখচোখ লাল হয়ে উঠলো! ছেলেটি বলে চলে “দেখো আমি কমুনিস্ট পার্টি করি! আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু আসল স্বাধীনতা আসেনি। ধনী গরীব, বড়ো ছোট, হিন্দু মুসলিম – মানুষে মানুষে এইসব ভেদাভেদ দূর হয়নি! আমরা এ সব দূর করতে চাই! দেখবে তখন কলোনীর মানুষও এদেশে সমানভাবে গ্রাহ্য হবে।“ চশমার আড়ালে চোখদুটো জ্বলজ্বল করে ছেলেটির। সে ওর চ্যাটালো খোঁপাও দেখেনি, ছিটের ব্লাউসও নয়! এ তো অন্যরকম মানুষ! মূহুর্তেই ছেলেটিকে ভালোবেসে ফেললো ঊষা। সে আজ সেই অন্য স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে শুরু করলো!
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।