ভাষান্তরে (অনুবাদ সাহিত্য) তপোব্রত মুখোপাধ্যায়

লিওপোল্ড সিডার সেঙ্ঘর (কবি এবং বিপ্লবী। সেনেগালের প্রথম রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রেক্ষিত বাদেও তাঁর সাহিত্যকৃষ্টি তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সেঙ্ঘরের লেখায় তাঁর সেনেগালীয় শিকড়ের কথা উঠে এসেছে বারবার।)
সিনের রাত্রি
নারী, আমার কপালে রাখো তোমার সর্বসন্তাপহরা দুটো হাত, তোমার হাত
পালকের চেয়েও নরম।
রাতের হাওয়ায় দুলে উঠছে উঁচু তালগাছের মাথারা
উঠছে না ধ্বনিমর্মর। ঘুমপাড়ানি গান অবধি নয়।
নৈঃশব্দের সুর আমাদের কাঁপিয়ে তুলছে।
শোনো, এই গান শোনো, শোনো আমাদের কৃষ্ণ ধমনীর রক্তের স্পন্দন,
শোনো
কুয়াশার আড়ালে হারিয়ে যাওয়া গ্রামের অন্তর থেকে আফ্রিকার
কৃষ্ণ ধমনীর জাগ্রত স্পন্দন।
এখন, যখন ক্লান্ত চাঁদ আলগোছে তার জলের বিছানায় ঢলে পড়ছে,
যখন উচ্চ হাসির শব্দেরা গেছে থেমে, আর চারণকবিরা
মায়েদের পিঠের উপর শিশুর মতো মাথা হেলিয়ে ঢলে পড়েছে অঘোর ঘুমে।
এখন, যখন নর্তকীদের পা আরও ভারী হয়ে এসেছে, আর ভারী হয়েছে
সমস্ত গায়কের জিহ্বা।
এই সময় তারাদের এবং রাত্রির যে তার দুধসাদা গাউনের আড়ালে নিজেকে
ঢেকে রেখে স্বপ্ন দেখে এই মেঘের পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে।
যেন এক ঘোর-মাখা ধীর আভা ছড়াচ্ছে বাড়িগুলোর ছাদ। এত অসংশয়
কী বলছে ওরা তারাদের?
চুল্লীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ হয়ে নিভে গিয়েছে মিষ্টত্ব ও তিক্ততার সবটুকু আবেশ।
হে নারী, স্পষ্টতার আবেশে জ্বালো আলো, আর বিছানায় ঘুমের আবেশী শিশুদের
তাদের পূর্বজদের কথা বলতে দাও, যেমন তাদের পূর্বজরা এক কালে করতেন।
শোনো এলিসা-র মতো সেই প্রাচীনের থেকে উঠে আসা ডাক, যেমন আমরা,
নির্বাসিত,
কেউ তারা মরতে চায়নি, পাছে তাদের বংশধারা বালির অতলে হারিয়ে যায়।
আমায় এই ধোঁয়াটে কুঁড়ে-ঘরের ভিতর থেকে আশাবাদী পবিত্র সেই সত্তাদের
আগমনের কথা শুনতে দাও,
তোমার বুকের মাঝে আমার মাথা, আগুনের মাঝে গরম নরম আটার বলের মতো
জ্বলতে দাও,
ঘ্রাণে নিতে দাও আমায় প্রয়াত সব পূর্বজ-স্মৃতি, তাদের মতো করে আমায়
বলে উঠতে দাও, আমায় বাঁচতে শিখতে দাও
ডুবে যাবার আগে, ডুবুরি যায় গভীরে যত তারও গভীরতর,
অন্তরতর ঘুমের অতলে।