ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ৯৩)

সুমনা ও জাদু পালক

হঠাৎ বাঁধভাঙ্গা নদীর জলস্রোতের শব্দের মত একটা আওয়াজ কানে ভেসে এল। যেন অনেক মানুষ কিছু বলতে বলতে দূর থেকে ছুটে আসছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই রাজা ও রানীর জয়ওওদধ্বনি দিতে দিতে হাজির হলো রাজার মন্ত্রীগণ, ,রাজসভার সভাসদেরা, রাজ অন্তঃপুরের কর্মচারী বৃন্দ এবং প্রাসাদ রক্ষী সৈন্যদল। তারা সমস্বরে বলছিল,’জয় মহারাজ রুদ্র মহিপালের জয়, জয় রানী মায়াবতীর জয়, জয় পুষ্প নগরের জয়।
রাজা রুদ্রমহিপাল হাত দেখিয়ে থামালেন ওদের। রাজা বললেন, তোমরা আমার জয়ধ্বনি দিও না। দুষ্টু জাদুকর হূডুর কালা জাদু থেকে আমাকে ও আমার প্রিয় রাজ্যকে অভিশাপ মুক্ত করতে সাহায্য করেছে দুটি কিশোরী, রাজকুমারী রত্নমালা‌ ও রাজকুমারী চন্দ্রকান্তা। আরো সাহায্য করেছেন পরীদের দেশের রানী।
সবার উপরে আছেন দেব হরিহর। তাঁর আশীর্বাদ ছাড়া আমরা কিছুতেই ওই দুষ্টু জাদুকরকে পরাভূত করে আমাদের রাজ্যকে উদ্ধার করতে পারতাম না।

রাজা রুদ্র মহিপালের কথা শুনে জনতার মধ্যে মৃদু গুঞ্জন ধ্বনি উঠলো। মহারাজ হাত দেখিয়ে সবাইকে থামতে বললেন।
গুঞ্জন থামতেই মহারাজ বললেন, হে আমার প্রিয় রাজকর্মচারীগণ, হে প্রিয় রাজ্যবাসীগণ, তোমরা অনেকেই জানো না যে, এখন থেকে আমাদের রাজ্যের আরাধ্য দেবতা শুধু প্রভু বিষ্ণু নন, বিষ্ণু এবং দেবাদিদেব মহাদেবের মিলিত রূপ ‘দেব হরিহর হবেন আমাদের সবার উপাস্য। তাঁর আশীর্বাদে আমরা আমাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সুস্থ থাকবো, শান্তিতে থাকবো, আনন্দে থাকবো।
ওই দূরে দেখো, জলাশয়ের পাড়ে দেব হরিহর মূর্তি রূপে বিরাজ করছেন। ওই মূর্তি আমি মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করব, আমার রাজ্যের ঘরে ঘরে দেব হরিহরের পূজা অর্চনা হবে। তোমরা সবাই মিলে বলো ,দেব হরিহরের জয়।
রাজা রুদ্র মহিপাল থামতেই সম্মিলিত জনতা একসাথে জয়ধ্বনি দিয়ে উঠলো, জয় ,দেব হরিহরের জয়!
রাজা রুদ্রমহিপাল এবং রানী মায়াবতী দেব হরিহরের জয়ধ্বনি করে উঠলেন।
সম্মিলিত জয়ধ্বনির মাঝখানেই প্রায় ছুটতে ছুটতে ওখানে এসে উপস্থিত হল পুষ্প নগর রাজ্যের রাজকুমার হিরন কুমার, রাজকুমার দনুজ দমন আর রাজকুমারী চন্দ্রকান্তা। ওরাও জনতার সুরে সুর মেলালো।
সবাই থামতেই পরী রানী রাজা রুদ্র মহিপালের উদ্দেশ্যে বললেন, হে মহারাজ, দুষ্টু জাদুকর হূডু
অচেতন হয়ে মাটিতে পড়ে আছে ঠিকই, ওর জ্ঞান ফিরলেই ও কোন শয়তানি করার চেষ্টা করতে পারে।
রানী মায়াবতী বললেন, জাদুকরকে তাহলে কারারুদ্ধ করা হোক।
——-না, সেটা মস্ত ভুল হবে মহারানী। কোন না কোন কৌশলে অথবা শয়তানি শক্তি ও বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে হূডু বেরিয়ে যাবে কারার ভিতর থেকে। আর তাহলে সারা পৃথিবীর অশুভ শক্তি ওর সমর্থনে এমন কিছু করতে পারে যাতে সমস্ত শুভশক্তি আবার বিপন্ন হয়ে উঠবে।
পরীরানীর কথা শুনে রাজা বললেন, হে পরী রানী, আপনি তাহলে বলুন যে, জাদুকর হূডুকে কোথায় কিভাবে বন্দি করে রাখা হবে।

——-মহারাজ, আপনি কাউকে আদেশ করুন, একটা মাঝারি আকৃতির তাম্র নির্মিত ঘট ,ঘটের ঢাকনা ও এক টুকরো লাল বস্ত্র খন্ড নিয়ে আসতে।

——কী হবে পরীরানী?
——-হূডুকে বন্দী করব!

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।