T3 শারদ সংখ্যা ২০২২ || তব অচিন্ত্য রূপ || বিশেষ সংখ্যায় সুনীপা শী

ভাগীদার

মিনতির দুই জমজ মেয়ে দুষ্টু ও মিষ্টু। এরা দুই জন একে অপরের থেকে তিরিশ সেকেন্ড এর ছোটো বড়ো । দুষ্টু বড়ো আর মিষ্টু ছোটো। দুষ্টু র সভাব চরিত্র একে বারেই শান্ত। আর মিষ্টু হলো দুষ্টু র একে বারে বিপরীত। সে বড়ো দুরন্ত ও চঞ্চল। মাথায় তার সব সময় দুষ্টু বুদ্ধি লেগেই থাকে। মিষ্টু যে দুষ্টু র থেকে এতো দুরন্ত তা মিনতি ও তার পাড়া প্রতিবেশী রা কেউ জানত না। সবাই জানত মিনতির বড়ো মেয়ে দুষ্টু ই খুব দুরন্ত। কারণ মিষ্টু সাড়া দিনে যত অন্যায় করে সব দুষ্টু র উপর চাপিয়ে দেয়। দুষ্টু ও মিষ্টু র অন্যায় গুলো কে প্রশয় দিয়ে মিষ্টু র অন্যায় এর দায় দুষ্টু নিয়ে নেয়। তারবদলে তাদের মা মিনতির কাছে কখনো বকা কখনো বা মার সব ই মিষ্টু র বদলে দুষ্টু খেতো।
মিনতি যখন তার দুই মেয়ের জন্য একই রঙের জামা নিয়ে আসত দুষ্টু যে জামা টা নিতো মিষ্টু ও সেই জামা টাই নিতে চাই তো। মিষ্টু বোন হয় বলে দুষ্টু মিষ্টু কে সেই জামাটা দিয়ে দিতো।
দুষ্টু পড়াশোনা বেশ ভালো। মিষ্টু পড়াশোনা য় তেমন একটা ভালো ছিল না। অথচ মিষ্টু প্রতিবছর ক্লাসে ফার্স্ট হতো। কি করে? দুষ্টু মিষ্টু পাশাপাশি একই সাথে পরীক্ষা দিতো। দুষ্টু প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর দিতো। মিষ্টু সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারত না। মিষ্টু সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারত না বলে পরীক্ষার খাতায় নিজের নামের জায়গায় দুষ্টু র নাম লিখে রাখত। পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবার পর মাস্টারমশাই যখন খাতা জমা নিতে আসতেন ঠিক তখনি মিষ্টু দুষ্টু র হাত থেকে পরীক্ষা র খাতাটা নিয়ে নিতো। আর মিষ্টু র পরীক্ষার খাতাটি দুষ্টু র হাতে ধরিয়ে দিতো। তারপর দুষ্টু র খাতা থেকে দুষ্টু র নাম মুছে নিজের নাম লিখে মাস্টারমশাই কে দিয়ে দিতো। মিষ্টু বোন হয় বলে দুষ্টু মাস্টারমশাই এর কাছে কোন অভিযোগ করত না। পরীক্ষার রেজাল্ট বের হলে ক্লাসে মিষ্টু ফার্স্ট হতো। আর দুষ্টু সাধারণ ভাবে পাশ করত। মিষ্টু ক্লাসে ফার্স্ট হওয়া দেখে মিনতি মিষ্টু কে খুব করে আদর করত। আর দুষ্টু কে বলত সারাদিন দুষ্টুমি না করে বোন এর মতন লেখাপড়া য় অন্তত একটু ভালো হও। দুষ্টু শুধু মৃদু ভাবে হাসত। তারপর মিষ্টু কে জরিয়ে ধরে বলত তুই ক্লাসে ফার্স্ট হয়েছিস আমি খুব খুশি হয়েছি। তুই বিশ্বাস কর মা কোন দিন কিছু জানতে পারবে না কে আসলে দুষ্টু আর কে শান্ত। সবাই যেমন জানে আমি দুষ্টু মানে দুরন্ত আর তুই মিষ্টু মানে ভালো তেমনি জানবে।
কিছুদিন পর মিষ্টু র দুই দিন ধরে জ্বর হয়। দুই দিন ধরে দুষ্টু মিষ্টু র মাথায় জল পট্টি দেয়। দুষ্টু মিষ্টু র মাথায় জল পট্টি দিতে দিতে দুষ্টু মিষ্টু কে বলে মিষ্টু জ্বরে তে তোর খুব কষ্ট হচ্ছে না রে? দুই দিন ধরে তুই বিছানায় একই ভাবে শুয়ে আছিস আমার একদম ভালো লাগছে না। তুই কোন অন্যায় করছিস না বলে আমাকে সবাই বলছে দুষ্টু এই দুই দিন ধরে তুই এতো চুপচাপ হয়েগেলি কেন? এতো বছর ধরে তোর সব দুষ্টুমি অন্যায় এর ভাগ যে আমি নিয়েছি আর আজ তোর এই জ্বরের ভাগ যে আমি নিতে পারছি না। ভগবান তুমি মিষ্টু কে এখুনি ভালো করে দাও। মিষ্টু র বদলে….. সঙ্গে সঙ্গে মিষ্টু দুষ্টু র মুখ খানা চেপে ধরে বলে না দুষ্টু না। তুই আমার এই জ্বরের ভাগ একদম নিবি না। এতো বছর ধরে আমার সব অন্যায় এর ভাগ তুই নিজের ঘারে নিয়েছিস। তুই বছরের পর বছর আমার হয়ে মায়ের কাছে বকা খেয়েছিস মার খেয়েছিস। আমার সব অন্যায় এর দায় তুই নিয়েছিস। আজ আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি এবার থেকে তুই দেখিস তোর মিষ্টু সত্যিই খুব ভালো ও শান্ত হয়ে যাবে। আর আমি কখনো কোন অন্যায় করব না। দুষ্টু তখন মৃদু হেসে বলল তুই আর অন্যায় না করলে আমি ও তাহলে তোর অন্যায় এর ভাগীদার হবো না।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।