ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ৭৬)

সুমনা ও জাদু পালক

সুমনা বুঝতে পারছিল না, বাগানের শেষ প্রান্তে এত বড় ঘরটা কিসের জন্য তৈরি করা হয়েছে। সে এটাও বুঝতে পারছিল না যে,, সুবর্ণ দণ্ড তাকে আকর্ষণ করে এখানে নিয়ে এলো কেন।
ঘরটা যেমন বড়, তার সামনের দরজাটিও তেমনি প্রকাণ্ড। ওই দরজার পিছনে কি আছে?
দরজার গায়ে তো বিশাল তালা ঝোলানো। ওই তালা খুলে সুমনা কিভাবে জানতে পারবে যে, ঘরের ভিতরে কি আছে। ওই তালার চাবি নিশ্চয়ই হূডু সযত্নে কোথাও রেখে দিয়েছে।
সেই চাবি না পেলে সুমনা তালা খুলবে কিভাবে? আর তালা না খুললে ভিতরে কি আছে জানবে কিভাবে?
তবে এটা ঠিক যে, সুবর্ণ দণ্ড তাকে যখন এখানে নিয়ে এসেছে, তখন এর পিছনে ঘরের ভিতরে বিস্ময়কর কিছু আছে।
সুমনা চেষ্টা করল ওই দণ্ডের সাহায্যে তালা খোলা যায় কিনা। কিন্তু ব্যর্থ হল। খুব হতাশ হয়ে পড়ল সে। সে এটাও বুঝতে পারছিল যে, তার অদৃশ্য হয়ে থাকার সময় আস্তে আস্তে শেষ হয়ে আসছে। কোন উপায় না পেয়ে সে মনে মনে অদৃশ্য কন্ঠের সাহায্য প্রার্থনা করল। অদৃশ্য কন্ঠ সে প্রার্থনায় উত্তর দিয়ে বলল, ওই তালা ভয়ানক শক্তিশালী।
——- ওটা কি হূডুর মন্ত্রপুত তালা?
——- না, মন্ত্রপুত নয়।
——- বুঝতে পারলে কিভাবে?
——– ওটা ওটা যদি মন্ত্রপূত তালা হত, তাহলে তুমি যখন স্বর্ণদণ্ডটি নিয়ে ওটা খোলার চেষ্টা করছিলে,তখন ওই তালা শক্তিশালী স্বর্ণদণ্ডের সঙ্গে অন্যরকম আচরণ করত। আমার মনে হয় ওটা মন্ত্রপুত নয়, তবে প্রচন্ড শক্তিশালী একটা তালা। একটা বড় ধরনের অস্ত্র ও বলতে পারো, যেটার মোকাবিলা করতে হবে তোমাকে। ওর সঙ্গে লড়াই করতে গেলে তোমাকে এমন কিছুর সাহায্য নিতে হবে যা ওই তালার চেয়েও শক্তিশালী।
——- হে অদৃশ্য কন্ঠ, তুমি কি আমাকে ভারী কোন পাথর জাতীয় বস্তুর সাহায্যে তালা খোলার পরামর্শ দিচ্ছ?
—– না।
—– তাহলে হাতুড়ি বা ওই জাতীয় কোন বস্তুর সাহায্যে তালা ভাঙ্গার পরামর্শ দিচ্ছ?
——–না।
——– তাহলে?
———— তুমি ভেবে দেখো রাজকুমারী রত্নমালা, তোমার কাছে আরও শক্তিশালী অস্ত্র আছে, যা যে কোন শত্রুর যেকোনো শক্তিশালী অস্ত্রের মোকাবিলা করতে পারে।
——- আমার কাছে তো কোন অস্ত্র নেই।
——- অবশ্যই আছে। তুমি একটু ভাবলেই তার সন্ধান পেয়ে যাবে। অতীতের ঘটনা স্মরণ করো।
সুমনা চোখ বন্ধ করে ভাবতে শুরু করলো। এমন কোন শক্তিশালী অস্ত্র তার কাছে আছে, যার সাহায্যে সে ওই তালা খুলতে পারে। অদৃশ্য কন্ঠ তো তাকে অতীতের ঘটনা স্মরণ করতে বলল।
একটু ভাবতেই সুমনার মনে পড়ে গেল, বানর রাজের দেওয়া শক্তিশালী গদার কথা।
সেই গদা তো অনেক কিছু মোকাবিলা করতে পারে বলে বানর রাজ তাকে জানিয়েছিল।
মনে মনে বানর রাজের উদ্দেশ্যে প্রণাম জানিয়ে সুমনা ওই গদাকে আহ্বান করল।
মুহূর্তের মধ্যেই একটা ঝকঝকে গদা এসে গেল তার হাতে। সেটা আকৃতিতে খুব বিশাল না হলেও তাকিয়ে দেখলেই বোঝা যায় যে যথেষ্ট শক্তপোক্ত।
গদাটা এতটাই পরিষ্কার এবং ঝকঝকে যে, সেদিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে মনে হয় যেন চোখ ঝলসে যায়। সুমনা সেই গদা টিকে কে নমস্কার জানিয়ে বলল, বানর রাজের দেওয়া মন্ত্র পুত গদা আপনি। আজ প্রচন্ড বিপদে পড়ে আপনার শরণাপন্ন হয়েছি। আমার সামনে যে ওই বিশাল তালা ঝুলছে দরজার গায়ে, ওই তালা খুলে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করতে হবে আমাকে। কিন্তু ওই তালা খোলার চাবি আমার কাছে নেই‌। তাই আপনার কাছে প্রার্থনা জানাচ্ছি যে, আপনি আমার সহায় হয়ে ওই তালা খুলতে সাহায্য করুন।
সুমনার কথা শেষ হতে না হতেই সে হঠাৎ অনুভব করলো ,তার হাতে ধরা গদা টি যেন তার
হাতকে নিয়ন্ত্রণ করছে। পর মুহুর্তে সে বিচিত্র ভঙ্গিতে তার ডান হাত উপর দিকে তুলে প্রচন্ড জোরে গদাটা নিক্ষেপ করলো তালাটিকে লক্ষ্য করে।
না, সে করল না। মনে হলো যেন কোন অদৃশ্য শক্তি তাকে দিয়ে এই কাজটা করিয়ে নিল। ওই মস্ত গদা ছুটে চলল তালাটাকে লক্ষ্য করে। চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই প্রচন্ড জোরে আঘাত করল তালাটাকে । ভয়ানক শব্দ করে ওই মস্ত তালাটা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।