ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ৪০)

সুমনা ও জাদু পালক

মহাকচ্ছপ এর গমনপথের দিকে তাকিয়ে সুমনা অদৃশ্য কন্ঠের উদ্দেশ্যে বলল, বন্ধু অদৃশ্য কণ্ঠ, কে জানে কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে এখানে?
অদৃশ্য কন্ঠ বলল, মহাকচ্ছপ যে জিনিসের কথা বলল,তা মহামূল্যবান।ওই লাল মুক্তার যে সমস্ত গুণাবলীর কথা মহা কচ্ছপের মুখে শুনলাম, তা যদি সত্যি হয়, তাহলে আগামী দিনে ওই লাল মুক্তা অনেক কাজে দেবে আমাদের এই অভিযানে। একটু অপেক্ষা করে দেখাই যাক না কি নিয়ে আসে মহাকচ্ছপ।
ধীরে ধীর সূর্যের শেষ আলোকরশ্মি হারিয়ে গেল ।নেমে এল গাঢ় অন্ধকার। পাথরের মূর্তির মত নিশ্চল দাঁড়িয়ে আছে দুধ রাজ। সুমনার খুব ইচ্ছে করছিল ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে অঞ্জনা নদীর পাড়ের বালিতে পা ডুবিয়ে হাঁটাহাঁটি করে। কিন্তু তার জন্য তো আবার বন্ধু অদৃশ্য কন্ঠের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তাছাড়া চারিদিক যেরকম অন্ধকার নেমে এসেছ,তাতে অচেনা জায়গায় নিচে নামা ঠিক হবে না।
এইসব নানারকম ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ সুমনা দেখল দূর থেকে একটা আলোকমালা যেন এগিয়ে আসছে ওর‌ দিকে।
বিস্মিত হলো সুমনা।ওটা আবার কী?
অদৃশ্য কন্ঠ বললো, ভয় পেয়ো না ,ওটা জোনাকির মালা। দেখবে, কিছুক্ষণের মধ্যেই তোমার চারদিক আলোয় ঝলমল করবে।

সত্যি তাই হল ।কিছুক্ষণের মধ্যেই জোনাকির দল সুমনার চারিদিকে আর পুরো এলাকাটায় ছড়িয়ে গেল। অসংখ্য জোনাকির দেহ থেকে বেরিয়ে আসা সেই টিপ টিপ আলোতে অপূর্ব মায়াময় পরিবেশ সৃষ্টি ‌হল। সুমনা বিস্মিত চোখে জোনাকির খেলা উপভোগ করতে লাগল।
হঠাৎ একটা উজ্জ্বল আলো লাগলো সুমনার চোখে। সুমনা দেখল মহা কচ্ছপ এগিয়ে আসছে। ওর খোলার ভিতর থেকে লম্বা গলা টা বের করেছে। মুখে করে কি যেন একটা নিয়ে আসছে। আর সেটা থেকেই ঠিকরে বেরোচ্ছে উজ্জ্বল আলো। মহা কচ্ছপ কাছে আসতে দেখা গেল, ওর মুখেচব্য ধরা আছে একটা বড় লাল রংয়ের মুক্তা। ওই মুক্তা থেকেইআলো বেরোচ্ছে। সেই আলোতে আলোকিত হয়ে গেছে চারিদিক।
অদৃশ্য কন্ঠ বললো,সুমনা, এবার তুমি দুধরাজের পিঠ থেকে নেহমে যাও।
—–কেন বন্ধু, অদৃশ্য কণ্ঠ?
—— মহা কচ্ছপের কাছে হাতজোড় করে ওই লাল মুক্তা চেয়ে নাও।ওই ফ্তৈ, তোমার কাজে আসবে।ছ্যছ্য
দুধরাজ সামান্য নিচু হতেই সুমনা লাফিয়ে নামল বালিয়ারির উপরে। তারপর মহা কচ্ছপের কাছে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে হাতজোড় করে বলল, কাছিম দাদু, মুক্তা পাহাড় থেকে যে অমূল্য লাল মুক্তা তুমি নিয়ে এসেছো, দয়া করে ওটা আমাকে দাও। ওটা আমাকে দিলে আমি চির কৃতজ্ঞ থাকব।
কথা শেষ করে সুমনা মহা কচ্ছপের সামনে হাত মেলে ধরল। মহাকচ্ছপ লাল মুক্তা সুমনার প্রসারিত হাত দিয়ে বলল, এতক্ষণে দায় মুক্ত হলাম আমি।
——মানে?
——- জাদুকর হূডু বহু বছর ধরে নদীর নিচে বন্দি করে রেখেছিল আমাকে। সেই অবস্থা থেকে আমাকে মুক্ত করেছি তুমি। আমার ঠাকুর্দা আমাকে বহু বছর আগেই বলেছিল, এক মনুষ্য কন্যা অভিশাপমুক্ত করবে আমাকে। মুক্তা পাহাড় থেকে লাল মুক্তা এনে আমি যেন তাকেই দিই। আমি ঠাকুর্দার নির্দেশ পালন করেছি’। রাজকুমারী রত্নমালা, এই মহামূল্যবান রত্ন খুব সাবধানে রেখো।
—– অবশ্যই কাছিম দাদু।
অদৃশ্য কন্ঠ বলল,হে মহাকচ্ছপ, আগামীকাল প্রভাতে আমরা নতুন পথে রওনা হব। আপনি প্রাচীন এবং বিজ্ঞ। আমাদের সামনের পথ সম্পর্কে যদি কিছুটা ধারণা দেন তো উপকৃত হব।
মহা কচ্ছপ বলল, এখান থেকে সোজা উত্তর মুখে গিয়ে একটা বিশাল জঙ্গল পাবে। ছোটখাটো পাহাড় ও আছে কয়েকটা ওখানে।
ওটা হচ্ছে বৃহল্লাঙ্গুল আসমানী বানরের দেশ ।
—–আসমানী বানর!তারা কি খুব ভয়ংকর কাছিম দাদু ?সুমনা জিজ্ঞাসা করে।
—- না ,সেরকম কিছু নয়। তবে ওরা খুব গোঁয়ার গোবিন্দ। কোন কারণে একবারে রেগে গেলে সহজে শান্ত হতে চায় না। আবার কারো সঙ্গে ভাব হলে তাকে মাথায় তুলে রাখে।
ওদের সঙ্গে ভাব জমিয়ে যদি ওদের দেশ টা পেরিয়ে যেতে পারো তো আর কোন বিপদ নেই রাস্তায়।
—— তারমানে আমরা কি জাদুকর হূডুর রাজ্যে পৌঁছে যাব?
—-না, ওই বানরদের দেশ অতিক্রম করতে পারলেই একটা বিশাল মরুভূমি দেখতে পাবে। ওই মরুভূমিতেই আছে জাদুকর হূডুর প্রাসাদ।
——- ধন্যবাদ।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।