দেশ-অন্তর সংসর্গ তে শিবাজী সান্যাল (মুম্বাই)

এই অপেক্ষা

সুমন বেশ ভাল গান গাইত।
“ ইন্ডিয়ান আইডল ” থেকে অডিশন দিয়ে ওর সিলেকশন হলে ও মুম্বাই এল। এই স্বপ্নের বিশাল শহরে প্রতিযোগিতায় প্রতি সপ্তাহে ভাল গান করে ও বেশ এগোতে লাগল। সারা দেশে পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ল , সামনে বসা সব বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালকরা ওর মধ্যে এক বিরাট সম্ভাবনার কথা বলত। রাতে ফোনে ও বিভাকে সব বলত , ” মনে হচ্ছে সবকিছু এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে । ” বিভা বলত , “ ভগবান করুণ তুমি সফল হও। কিন্তু তুমি জানো হাতে আমাদের খুব বেশি সময় নেই। বাবা তোমাকে নিজের পায়ে দাঁড়াবার জন্য এক বছর সময় দিয়েছে , নইলে আমার বিয়ে অন্য জায়গায় দেবেন। ” কথাটা সত্যি , তার মধ্যে চার মাস ইতিমধ্যে চলে গেছে। এর মধ্যে প্রতিযোগিতায় ও শেষ তিন জনের মধ্যে এসেও এবার নিষ্কাসিত হল। এরপর শুরু হল জীবন যুদ্ধ , সারাদিন অনেক জায়গায় ঘোরা , সিডি দেখানো , কিছু প্রতিশ্রুতি , অনেক অবহেলা , কিছুই কাজ হচ্ছে না। কিছু দল ওদের শো তে নিয়ে যায় , সামান্য কিছু টাকা হাতে দেয় । একটি হোটেলে রাতে গান গায় নামমাত্র টাকা পায় , কখনও কিছু টিপস হাতে এলে তা উপরি। আরও সময় কেটে গেছে , বিভা ফোনে ওর অস্থিরতার কথা বলে , বলে বাবা ইতিমধ্যেই অন্য ছেলে দেখতে শুরু করেছে। সুমন কি করবে ভেবে পায় না।
সময় বসে থাকে না। হাজার চেষ্টা করেও সুমন তেমন কিছুই সফলতা অর্জন করতে পারল না। ওকে দেয়া এক বছর সময় এক সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেল। মাঝে বিভা প্রায়ই ফোন করে ওর ভয়ের কথা বলত , কিছু একটা করতে বারবার অনুরোধ করত , তারপর ওর ফোন আসা কমতে লাগলো, একসময় সমস্ত বন্ধ হয়ে গেল ।
সেদিন সন্ধ্যাবেলা ছোট বোন মালার ফোন এল , বলল ও যেন আর বিভার সঙ্গে কোন যোগাযোগ না রাখে । ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। সুমন পাথরের মত বসে রইল । ওর মনে পড়ল তিস্তার পারে ওরা হাতে হাত ধরে গল্প করতে করতে হেঁটে বেড়াত , সিনেমা হলে বসেও কত কথা – সিনেমা কিছুই দেখা হত না , একবার প্রচণ্ড বর্ষায় ও বিভাকে বুকে জড়িয়ে একটি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ভিজেছিল। সুমন ধারাবির ঘরটি থেকে বেড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতে কাছের খোলা জায়গাটায় গিয়ে রাতের আকাশের দিকে তাকাল। সেই একই দৃশ্য , হাজার তারা , সপ্তর্ষিমণ্ডল , পূর্ণ চাঁদ – আজ কি পূর্ণিমা ? সব ঠিক তেমনই আছে , শুধু এক কঠিন কষ্টকর স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা বুকটা তোলপাড় করছে। আজ থেকে জীবনটাই বদলে গেল।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।