-“আরে….ইশ্….কি যে বলো! ও এইমাত্র ল্যাপটপ বন্ধ করে টয়লেটে ঢুকলো।”
-“অ। এখন বুঝি ফোনটা নিয়ে ঢোকেনা? বদভ্যাসটা গেছে তাহলে।”
-“হ্যাঁ গো! আসলে সব সময় তো ওই ফোন নিয়েই কারবার, সারাদিন এত বকবক করতে হয় যে কাজের বাইরে ফোন আর ধরেই না বলতে পারো, অবশ্য তোমাকে আর কি বলব, তোমার হাজব্যান্ডও তো সেলসেই, তাইনা?”
-“হ্যাঁ, আর বলিস না! একেবারে ভাজা ভাজা হয়ে গেলাম। কানের সামনে এত বকবকানি, কোনদিন শুনবি ছন্দাদি মাইনাস হয়ে গেছে.…”
-“এই যাহ্! বাজে কথা বোলো না!”
-“বাজে কথা নয়, ঠিকই বলছি। তোর বরকে জিজ্ঞেস করিস, আর যাই হোক, ছন্দা মিত্র বাজে কথা বলেনা।”
-“হ্যাঁ, তোমাদের সবার কথাই শুনেছি ওর মুখে। সত্যি স্কুলের বন্ধুদের মধ্যে এতটা বন্ডিং দেখা যায়না আজকাল। আমার তো বহুদিন পর পর দেখা হয়, ওই বাবার বাড়ি গেলে কখনো, তোমাদের মতো ফোনে এতটা যোগাযোগ নেই। দেশে ফিরছো নাকি এর মধ্যে?”
-“না রে! এবছরও পুজোটা মিস হয়ে গেল! আগামী বছর দেখা যাবে। দেশে ফিরলে তো তোরা একঘরে করে দিতিস। আসতিস দেখা করতে? আর আমি গেলেও তোর বর বোধহয় দরজা থেকেই কুলোর বাতাস দিয়ে বিদেয় করতো!”
-“হাঃ হাঃ! তুমি খুব মজার ছন্দাদি। এখন আবার কারো বাড়ি কুলো থাকে নাকি? তা, ছেলেমেয়েরা কেমন আছে?”
-“ওদের কথা আর বলিস না। এখন বড় হয়ে গেছে, এখন আর মায়ের দরকার নেই, বুঝলি? এখন আমার সবকিছু বাজে, ‘নট আপ টু দ্যাট মার্ক’ যাকে বলে। একটু বকাঝকা দেব তার তো উপায় নেই। কে জানে যদি আবার চাইল্ড অ্যাবইউজের ফাঁদে ফেলে দেয়! বিশ্বাস নেই। তোর ছেলে তো মা ন্যাওটা হয়েছে, ঠিক তোর বরের মতো, তুই এসব বুঝবিনা।”
-“ইস্ কি সব বলছো! ওরা কোথায়? তরুণ দা কোথায়?”
-“আরে এখন তো মাত্র সাড়ে পাঁচটা, ওরা ঘুমোচ্ছে। আমি উঠে পড়ি, ঘুম ভেঙে যায়। কফির কাপ নিয়ে ফোন করছি, তোর বর তো কে ধরা যায় না এসময় ছাড়া! বাড়িতেও ফোন করি। সময় কাটে কিছুটা।”
-“একটু ওয়াক নিলে পারো তো!”
-“ধুর! কে হাঁটতে যাবে! ওসব তোদের জন্য। কমবয়সী মেয়ে তোরা, শরীরটা ফিট না রাখলে বর আদর করতে ভুলে যাবে। আর কিছু প্ল্যান আছে নাকি? নিবি আর একটা? ছেলে তো ছ’বছরে পা দিল। নিলে আর দেরি করিসনা। অবশ্য না নিলেই বা তোকে বলছে কে! যা কেয়ারিং শ্বশুর শাশুড়ি পেয়েছিস! আমার তো মাথা খেয়ে ফেলেছিল ছোটটার জন্য। ভাগ্যিস ছেলে হয়েছিল! নইলে হয়তো আবার ছেলের জন্য ঘ্যানঘ্যান করতো! এত আনকালচার্ড ব্যাকওয়ার্ড লোকজন আমার শ্বশুর বাড়িতে তুই ভাবতে পারবি না! জানিস এখনও দেশে গেলে এমন ভাব করে যেন ওদের ছেলে একেবারে দুদুভাতু! কিস্যু বোজেনা, জানেনা, যেন বিশ্বসুদ্ধ লোক ওদের ছেলেকে ঠকিয়ে পথে বসাবে। আর ছেলেও তেমনি, এমন নেকুপুষুমুনু হয়ে মায়ের আঁচল ধরা হয়ে থাকবে, যেন সত্যিই গোবেচারা। আমি তো জানি তোদের তরুণদা কি চীজ! হাড় ভাজা ভাজা করে গেল! তোর বর তো বুঝদার! মা এবং স্ত্রীর মধ্যে ব্যালেন্স করতে জানে। আমারটা দুপেয়ে গাধা! ইস্ আমি একাই বলে যাচ্ছি! হ্যালো, মধুরিমা, আছিস তো? এখনও তোর বর বোরোয়নি?”
-“না গো! একবার ঢুকলে একঘন্টা কাবার করে বেরোয়! আর বোলোনা।”
-“সত্যি! আমাদেরই যেন দুনিয়ার তাড়া! এই দ্যাখনা, এখন তো কতবছর হয়ে গেল একার সংসার, চাইলে বারোটা পর্যন্ত ঘুমোলেও কেউ বলার নেই, তবুও ঠিক সাড়ে পাঁচটায় ঘুম ভাঙ্গবে! একদম সময় নষ্ট করতে পারিনা। কতকিছু করার থাকে। ওরা ওঠার আগে আমার স্নান ব্রেকফাস্ট সব হয়ে যায়, একদম ঘড়ি ধরে, ডট ন’টায়। ওরা তারপর ওঠে, তিনজন একসাথে হুড়োহুড়ি। আচ্ছা, শোন, তোর বর বেরোলে বলিস আমি কল করেছিলাম, আমি দেখি সৈকতকে ধরা যায় কিনা! ওর সাথে অনেকদিন আড্ডা হয়নি। সৈকতকে চিনিস তো? আমাদেরই স্কুলের, সিনিয়ার ছিল দুবছরের। আমাকে তো জানিস, দোস্ত বানাতে ওস্তাদ। আচ্ছা চল, তোকে আর আটকে রাখবো না, চা কফি খা তোরা। কী খাস এসময়? চা না কফি? আমি বাবা একদম টু হিপড্ টিস্পুন সুগার, কনডেন্সড্ মিল্ক ঢেলে কফি। সাথে কুকিজ। দুবেলা। ইদানীং মাঝেও হচ্ছে দু একবার, মুটিয়ে গেছি জানিস? তোরা তো ইনস্টায় আসিসও না, কতো ছবি আপলোড করেছি! আমার বন্ধুরা সব ছোটলোক, একটু ভালো ভালো কমেন্ট করবে তা না, ডেকে বললেও দ্যাখেনা!”
-“আসলে, ছন্দাদি, জানোই তো আমারও তো এখন সারাদিন ল্যাপটপ খুলে বসে থাকা, তাই আলাদা করে আর সোশ্যাল হওয়া হয়ে ওঠেনা। আর এখন অনলাইনে ক্লাস নিতে হচ্ছে, আমাদের বাচ্চারা এখনও সড়গড় হয়ে ওঠেনি, ওদের প্রচুর ক্যোয়ারীজ ক্লীয়ার করতে হয়, তার ওপর ছেলেমেয়েদের সবার স্মার্টফোন নেই, তাদের জন্য নিজের তাগিদে নোটস্ তৈরী করা, আর ছেলেটা বিচ্ছু হয়েছে, ওকে সামলানো হোলটাইম জব, মা বাবা দেখেন বলে রক্ষে!”
-“ঠিক আছেরে। রাখি তাহলে। তোর বরকে বলিস আমি প্রচুর গালাগাল দিয়েছি। চল, বাই, টেক কেয়ার।”
“মাই গুডনেস! এত কথা কে বলে! উন্মাদ একেবারে! এই, তোমার বান্ধবীর বকবক শুনলাম, এর জন্য কী দেবে? দিব্যি পাশে বসে ঠ্যাং নাচিয়ে গেলে! নেক্সট বার আমি আর কল রিসিভ করব না।” মধুরিমা সুহাসের দিকে ফিরে বলে।
“আরে, রাগ কোরোনা সুন্টুমনা বউ আমার, আজ রাত্রের রুটি আমি করে দেব। খুশী? দাও, এবার এক কাপ পাতলা লিকার দাও দেখি, মাথাটা ধরে গেছে।” সুহাস উড়ন্ত চুমু ছুঁড়ে দেয় মধুরিমার দিকে।