উপন্যাস ‘এক যে ছিল মেঘ’ – বইচর্চায় সঞ্জীব সেন

উপন্যাস এক যে ছিল মেঘ

লেখক- অভিনন্দন সরকার

পত্রিকা দেশ শারদীয়া

মন হল বিষম বস্তু, মন নিয়ে গবেষণা কম হয়নি, মন কোথায় থাকে , মন কি, আর গবেষণা করতে গিয়ে দেখা যায় পুরোটা ফক্কা, এবারের শারদীয়ার অভিনন্দন সরকার এর মনস্তাত্বিক উপন্যাস’ এক যে ছিল মেঘ” এবছরের পড়া আমার সবচয়ে বেশী তৃপ্তিদায়ক উপন্যাস । উপনাস্যের সূচনালগ্নে টয়রা নামের ছোট মেয়েটির ঘুম ভেঙেছে, স্কুলে ফাংসন রবীঠাকুরের ড্যেথ আ্যানিভারসারি তে ,আজকের দিনে বৃষ্টি হবে না । বৃষ্টি না হলে সে নাচবে না, বাবা তাকে বোঝায় গল্পে মেঘ যদি কাঁদে তবে বৃষ্টি তো হবেই, টয়রা বেবি অবাক হয়, গল্পে কি বৃষ্টি নামাতে পারে, যে উপন্যাসের শুরুটা এমন সুন্দর বোঝাই যায়, এর ভিতরে নিশ্চয় ম্যাজিক্যাল কিছু আছে, আর জানতে গেলে পুরোটা পড়তে হবে । এই গল্পে মেঘ কে আমার ভাল লেগেছে । আর তার থেকে বেশী ভাল লেগেছে  প্রান্তর কে । প্রান্তর হল মেঘলার শেষ পেশেন্ট । মেঘলার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে কানাডায়, শতুদ্রুর সাথে যে কানাডায় কিভাবে সংসার গোছাবে এই হিসাবেই সে মশগুল আর একদিকে প্রান্তর যে মেঘলার মনের চিকিৎসা করে যাচ্ছে, মেঘলা প্রান্তরকে যত এনালিসিস করছে তত সে নতুন ভাবে ধরা দিয়েছে, এই উপন্যাস একটা জার্নি মেঘ টু প্রান্তর কিম্বা প্রান্তর টু মেঘ এর বাইরে আর কোন স্টেশন নেই হল্ট স্টেশনে শতুদ্রু একমাত্র যাত্রী আর শিলিলিপির কথা ভুললে চলবে না । প্রান্তরের ফাস্ট লাভ, উপনাস্যের এই প্রান্তর কে খুব হিংসা হল আমার , কি আছে ওর ভিতর বারেবারে মেয়েরা নিজে থেকে প্রেমে পরে,।এই উপন্যাসের আরাক টি চরিত্র শিলালিপি , শিলালিপি প্রান্তরকে ভালবেসেছিল । আর প্রান্তরও । প্রান্তরের ,সাথে শেষ শেসনে প্রান্তর এসে বলে আপনার এই চেম্বার বন্ধ হবে না,  তাই সব কিছু সেটেল করতে দেরি হয়ে গেল । আপনি ভিডিও কনফারেন্সে কানাডা বসে চিকিৎসা করবেন, এমন একজনকে না ভালবেসে থাকা যায় । মেঘ যে নিজেও খুঁজেছিল এমনই একজনকে জীবনে, ও যে প্রান্তরের প্রেমে পরে যাচ্ছে বুঝতে পেরেছিল অনেক আগেই। না হলে অবাঙালী বন্ধুর কাছ থেকে যখন জানতে পারে নিজের বাড়ী ছেড়ে মেসবাড়িতে থাকে তখন থেকেই প্রান্তর কে ওর বাড়িটি গুছিয়ে আগের মত করে তোলায় ঊৎসাহ দেবে কেন! শেষপর্যায়ে প্রান্তর নিজের বাড়ি থাকতে শুরু করে , কিন্তু শিলালিপির কাছে ফিরে যাবে না আর, এখানেই বোঝা যায় মন কি ভাবে মানুষকে চালিত করে । উপন্যাস টা আসলে একটা জার্নি, মনের চিকিৎসক থেকে একজন মনের রোগী ।আর ডেস্টিনেশন হল কে পেশেন্ট কেই বা রোগী! তাই নয় কী ? উপন্যাসের শেষে মেঘ কেঁদে ছিল,, আর আকাশ জুড়ে মেঘ করেছিল বৃষ্টি করেছিল বরীঠাকুরের মৃত্যুদিনে মনখারাপেরের দিন মেঘ তো কাদবেই ! বাবার কথাই ঠিক হল, টয়রাবেবিও খুশি । মেঘ যদি কাঁদে তবেই বৃষ্টি হবেই তাই মেঘ কে কাদতেই হবে  ! গোটা উপনাস্যটায় লেখকের সহজাত দক্ষতার আবার একটা প্রামাণ পাওয়া গেল, শুরু থেকেই গল্পের ভিতরে নিয়ে যাওয়া । এবারের দেশ পত্রিকায় পড়া উপন্যাসগুলোর সবচেয়ে আগে রাখব এই মনসকতাত্বিক প্রেমের উপন্যাসটিকে ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।