ধারাবাহিক || ভ্রমণ সিরিজ || সুব্রত সরকার – ১০

।। জাপানের ডায়েরি ।।

“নদীর ধারে বাস, ভাবনা বারোমাস”। কিন্তু হয় যদি হোটেল নদীর ধারে, মন ভেসে যায় বারেবারে!..
টোকিও শহরের খুব সুন্দর এক হোটেল- Kawasaki King Sky Front Tokyo Rei Hotel. পর পর দু’রাত থাকা এই হোটেলে। হোটেলের ঘর-বারান্দা থেকে শান্ত বহমান এক নদীকে সারাদিন দেখা যায়। নদীর নাম – সুমিদা। অনেকে বলে সুমিদা- গাওয়া। নদীর উৎস আরাকাওয়া নদী থেকে। এ নদীর জলে মাছ ধরাও দেখেছি। জাপানী জেলে জাল ফেলে মাছ ধরছে। বাইরে তখন টিপ টিপ বারিষ। আমি বাতায়নে দাঁড়িয়ে সে দৃশ্য দেখে এই সূদুূরে এসেও কি আনন্দই না পেয়েছি। সুমিদা নদীর জল ছলাৎ ছল দেখি নি। ঢেউহীন শান্ত নদী বড় সুন্দর দেখাচ্ছিল বৃষ্টির দিনে।

হোটেলের ঘর থেকে শুধু নদী নয় একটা এয়ারপোর্টও দেখা যায়। আকাশফড়িং উড়ে যাওয়া- নেমে আসা দেখারও একটা মজা উপভোগ করেছি।
জাপানের রাজধানী শহর টোকিও। হোনশু দ্বীপের এই শহরে চার চারটে এয়ারপোর্ট আছে। জাপানের ৪৭ তম জেলা হিসেবে টোকিওকে বৃহত্তম শহরের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এই শহরের আয়তন ২৪০ বর্গ কিলোমিটার। ঘনবসতিপূর্ণ একটা শহর। প্রায় এক কোটি তিরিশ লক্ষ মানুষ বসবাস করে।

আমাদের জাপান ভ্রমণ শুরু হয়েছিল ওসাকা দিয়ে, শেষ হবে টোকিও থেকে। মাঝের একসপ্তাহ কত কিছুই না দেখা হলো জাপানের। হয়তো কিছু কিছু বুড়ি ছুঁয়ে দেখার মত দেখাও হয়েছে। সব মিলিয়ে তবু বলব, নতুন একটা দেশ বেড়ানোর আনন্দ পেয়েছি। জাপান খুবই উন্নত, সুশৃঙ্খল দেশ। তাই জাপান ভ্রমণে একটা আনন্দ সত্যিই পাওয়া যায়। কত বড় বড় শহরে থাকলাম। সবশেষে এসেছি টোকিওতে। এই শহরে দু’রাত থাকা। খুব ঝলমলে ঝকঝকে শহর টোকিও। দিনের আলোর টোকিও যেমন মুগ্ধ করে, রাতের টোকিও তেমন চমৎকার। টোকিও খুবই প্রাণবন্ত ও উচ্ছল সুন্দর এক শহর।

আমাদের ট্যুরের আজ নবমী, কাল বিজয়া! তাই “যেও না নবমী নিশি”গাওয়ার আগে সারাদিন টোকিওর যতটুকু পারি দেখে নিতে হবে। সারাদিনের আইটেনারি জানা আছে। তাই সময় মত সবাই জলখাবার খেয়ে নিলাম। কিন্তু বেরতে পারলাম না হোটেল ছেড়ে। টিপ টিপ বারিষ হো রাহি… সকাল থেকে এই রিমিঝিমি গিরি শাওন দেখছি! আমার কিন্তু এমন বৃষ্টি দেখে বেশ ভালোই লাগছিল। জাপানে এসে বৃষ্টি দেখাও হলো। বৃষ্টিতে একটু ভিজতেও মন চাইছিল! আমাদের ট্র্যাভেল লাইভ এর গাইড অশোকদা জানালেন,”আবহাওয়ার পূর্বাভাষ বলছে সকাল নটা পয়তাল্লিশ এর পর বৃষ্টি ধরে যাবে। আকাশ পরিষ্কার হবে। মেঘ উড়ে গিয়ে রোদ হাসবে। আমরা দশটায় সবাই যেন হোটেলের লবিতে পৌঁছে যাই। গাড়ি ছাড়বে তখন।”

টোকিও শহরের আজ প্রথম দর্শনীয় জায়গা হলো -Imperial Palace. সত্যিই দশটার সময় কি সুন্দর রোদ হেসে উঠল। বৃষ্টি ছুটি নিয়ে চলে গেছে কোন অজানায়। আমাদের বাস এগিয়ে চলল। নতুন একটা শহরকে দেখছি। বড় বড় অট্টালিকা চারপাশে। রাস্তার ধারে সারি সারি গাছও চোখে পড়ল। চেরি গাছ তো আছেই, সঙ্গে আরও অন্যান্য গাছও দেখলাম। খুব পরিস্কার পরিচ্ছন্ন শহর। দেখতে দেখতে ইম্পেরিয়াল প্যালেসের উদ্যানে এসে গাড়ি থামল। আমাদের জাপানী গাইড কাওয়াসাকি সবাইকে নিয়ে এগিয়ে চললেন প্যালেসের কাছে। তাঁর কথা মতো এই প্যালেস হলো – The residence of Japan’s Emperor…This historic site provides a tranquil retreat from the city’s hustle and a fascinating glimpse into Japan’s rich imperial heritage, blending tradition with serene natural beauty.
এই রাজকীয় উদ্যানবাটি দূর থেকেই দেখতে হলো। ভেতরে প্রবেশ নিষেধ। দ্বাররক্ষীরা তাঁদের দায়িত্বে অবিচল হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সম্মুখে। ইম্পেরিয়াল প্যালেস সংলগ্ন উদ্যান, পরিখা ও সবুজ ঘাস জমির বুগিয়াল অসাধারণ বলা যায়। তার ওপর বনসাই করা ঝাউগাছগুলো অপরূপ সুন্দর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভীষণ মিষ্টি একটা নরম রোদ উঠেছিল , সেই রোদ গায়ে জড়িয়ে এই প্যালেস ও উদ্যান দেখে সবাই বেশ আনন্দ করেছি।

এবার আমরা সদলবলে চলেছি জাপানের বিখ্যাত প্রাচীনতম এক মন্দির দেখতে, নাম তার – Asakusa Kannon Temple, a rich historical and religious site.
আসাকুসা কেনন বিখ্যাত বৌদ্ধ মন্দির। সদর দরজাটা বিশাল। মূল মন্দির চত্বরে পাঁচটা প্যাগোডা রয়েছে। সারা বছর এই সুমহান মন্দিরে সারা পৃথিবীর পর্যটকরা আসেন। দেখার মতই সুন্দর দর্শনীয় এই মন্দির ও তার সংলগ্ন সব কিছু।
মন্দির চত্বরে প্রবেশ করে আরও একটা আকর্ষণীয় জিনিস দেখতে পাওয়া যায়, তা হলো কিমোনো পরিহিতা জাপানী সুন্দরীদের। চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে, ফটোসেশান করছে অপূর্ব সুন্দর সব কিমোনো পরিহিতা সুন্দরীরা। এবং আশ্চর্য আবদার করে তাঁদের ফোটো তুলতে চাইলে, হাসি মুখে আবদার মেনে নিচ্ছেন। উপস্থিত অনেক পর্যটকরাই কিমোনো সুন্দরীদের ছবি তুলছে মনের আনন্দে। সেলফি তুলতেও নেই মানা! এই সব কিমোনার দাম শুনে অবাক হয়েছি। জাপানের পথে ঘাটের অনেক দোকানে দেখেছি লেখা আছে, কিমোনো ভাড়া পাওয়া যায়। উৎসবে- অনুষ্ঠানে জাপানী মহিলারা মনে হয় এই সব বহুমূল্য কিমোনা ভাড়া করেই পড়েন।
আসাকুসা মন্দির ভ্রমণ একই সঙ্গে পবিত্র ও সুন্দর। মন্দিরের পরিবেশ এবং স্থাপত্য এতই দৃষ্টিনন্দন যে মন ভালো হয়ে যায়।
এই মন্দিরের মূল কাঠামোটা ১৯৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল, ১৯৫০ সালে তাকে পুনরায় নির্মাণ করা হয়। এই বিখ্যাত টেম্পলের পাশেই রয়েছে বিখ্যাত এক শপিং সেন্টার- Nakamise Shopping Arcade.

এই শপিং এরিয়াটায় জিনিসপত্রের দাম তুলনামূলক কম। এবং অনেক বৈচিত্র্য আছে। প্রিয়জনকে উপহার দেওয়ার জন্য নানাররকম কম বাজেটের অনেক জিনিস পাওয়া যায়। আমিও তেমন দুটো জিনিস কিনে ফেললাম। এখানে একটা সুন্দর অভিজ্ঞতা হয়েছিল, আমার পকেটে তখন যথেষ্ট ইয়েন নেই। ডলার ভাঙাতে হবে। দোকানী ডলার নেবে না। আমার কাছে আমেরিকান ডলার। কিমোনো পরিহিতা সুন্দরী সেই দোকানীই আমাকে একটু দূরের 7Eleven এর কাউন্টারে নিয়ে গিয়ে ডলার ভাঙাতে সাহায্য করলেন কি সুন্দর হাসিমুখে। ভ্রমণে এই সব ছোট ছোট সুখস্মৃতি সারাজীবনের সঞ্চয়। আর কোনওদিনই হয়তো তাঁর সঙ্গে দেখা হবে না, কিন্তু তাঁর কথা মনে তো থাকবেই, এই ডায়েরির পাতায়ও তাঁর কথা লিখে রাখলাম।

টোকিও শহরের বিখ্যাত Tokyo Sky Tree আসাকুসা টেম্পলের পাশেই রয়েছে। মন্দির থেকে এই সুউচ্চ টাওয়ারটি দেখা যায়। আমরা আসাকুসা মন্দির ও শপিং সেন্টার ঘুরে বেড়িয়ে এবার পায়ে পায়ে পৌঁছে গেলাম টোকিও স্কাই ট্রির কাছে।
আধুনিক টোকিওর গর্ব বলা যায় এই স্কাই ট্রি।Japan’s tallest structure, offers breathtaking 360 degree views from its observation decks, with panoramic vistas extending to Mount Fuji on clear days..এই টাওয়ারের চূড়ায় পৌঁছে মুগ্ধতা গ্রাস করে নেয়, দু-চোখ নিবিড় পর্যবেক্ষণে চারপাশের সব কিছুকে দেখতে দেখতে বিস্ময়ে অভিভূত হয়। এ এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। এখানেও প্রচুর পর্যটকের ভিড়। টাওয়ার থেকে যেমন টোকিওর চারপাশকে দেখা যায়,আনন্দ উপভোগ করা যায়। তেমন টাওয়ারের মধ্যেও রয়েছে আনন্দ করার নানান ব্যবস্থা। শপিং, ডাইনিং এর অঢেল আয়োজন।

টোকিও টাওয়ারের উচ্চতা ৩৩৩ মিটার ( ১০৯২ ফুট)। জাপানের দ্বিতীয় সর্ব্বোচ্চ কাঠামো। আইফেল টাওয়ার থেকে অনুপ্রাণিত এই টাওয়ারটির স্থপতি হলেন তাচু নাইতো। ১৯৫৮ সাল থেকে এটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর রং করা হয়। রং করতে সময় লাগে এক বছর। সাদা ও কমলা রং করা হয় আন্তর্জাতিক বিধি মেনে। জাপানের “টোকিও স্কাই ট্রি” ও দুবাইয়ের “বুর্জ খলিফা” আজ বিশ্বের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় দুটি ডেস্টিনেশন।
আজকের মধ্যাহ্নভোজন আমাদের নিজেদের ইয়েন ভাঙিয়ে করতে হলো। এটাই ছিল পূর্ব চুক্তি। টোকিও টাওয়ারের মধ্যে বিশাল রেস্টুরেন্ট। সেখানে যে যার বাজেট অনুযায়ী খেয়ে নিলাম। তারপর আজকের শেষ এবং বিশেষ দর্শনীয় জায়গা হলো – রেনকোজি টেম্পল।
এখানে একটা কথা বলা প্রয়োজন- সফরসূচী অনুযায়ী কিন্তু রেনকোজি টেম্পল ছিল না এবারের পুরো আইটিনারিতে। ট্রাভেল লাইভ এটা করায় না। ট্রাভেল লাইভের নির্ধারিত সূচী অনুযায়ী ছিল আজকের বিকেলের শেষ ভ্রমণে রেইনবো ব্রিজ এবং ওডাইবা। কিন্তু আমাদের সকলের বিশেষ অনুরোধে রেনকোজি টেম্পল ঠিক হয়। আমরা বাদ দিই রেইনবো সেতু ও ওডাইবা। এরজন্য মিস্টার কাওয়াসাকি এবং ট্রাভেল লাইভের গাইড অশোকদাকে ধন্যবাদ।

রেনকোজি টেম্পল ভারতীয়দের কাছে একটা আবেগ। আর বাঙালিদের কাছে তো খুবই স্পর্শকাতর এক মন্দির। তার একমাত্র কারণ নেতাজী সুভাসচন্দ্র বোস। বিতর্কিত সেই বিষয়, নেতাজীর চিতা ভস্ম এখানে আছে কি নেই, তা আমাদের কাছে খুব বড় হয়ে ওঠে নি, আমরা গিয়েছিলাম সুদূর জাপানেও তাঁর নামে একটা মন্দির রয়েছে, এটাকে দর্শন করার আনন্দ পেতে।
টোকিও শহর থেকে সড়কপথে অনেকটা যেতে হয়েছিল। জাপানি গাইড কাওয়াসাকি অবাক হয়েছিলেন আমাদের নেতাজী সম্পর্কে এত আবেগ দেখে। কাওয়াসাকি বারবার গান্ধীজীর কথা বলছিলেন। আমরা নেতাজীর কথা বিস্তারিত ভাবে যখন তাঁকে জানালাম, কাওয়াসাকি মুগ্ধ হয়ে শুনেছেন। তারপর যখন সেই মন্দির প্রাঙ্গনে দাঁড়ালাম সকলে, কাওয়াসাকির মধ্যেও দেখেছিলাম সেই শ্রদ্ধামিশ্রিত আবেগ। কাওয়াসাকি কিছুতেই পুরো নাম বলতে পারছিলেন না, বারবার বলতেন “চন্দ্র বোস। ইওর চন্দ্র বোস।” আমরা তাইই মেনে নিয়েছিলাম, হ্যাঁ আমাদেরই তো নেতাজী সুভাসচন্দ্র বোস!
রেনকোজি একটি বৌদ্ধ মন্দির। ১৫৯৪ সালে এই প্যাগোডা আকৃতির ছোট্ট সুসংহত মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৯৪৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে এখানে নেতাজির চিতা ভস্ম রাখা রয়েছে। যদিও এটি বিতর্কিত। আমরা এই মন্দিরে প্রবেশ করে নেতাজীর একটি আবক্ষ মূর্তি ছিল প্রাঙ্গনে, সেই মূর্তির পাশে প্রণত হয়েছি, প্রণাম করেছি তাঁকে। মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করে কেউ আর সেই বিতর্কিত চিতা ভস্ম দেখার উৎসাহ বোধ করি নি।
নেতাজীর মূর্তির ঠিক পেছনেই ছিল কালো পাথরে খোদাই করা অটল বিহারি বাজপেয়ীর নিজের হাতে হিন্দিতে লেখা এই কথাগুলো -“রেনকোজি মন্দিরে দ্বিতীয়বার আসতে পেরে আমি অতিশয় আনন্দিত। এখানে ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান সেনানী নেতাজী সুভাসচন্দ্র চন্দ্র বসুর স্মৃতি সুরক্ষিত আছে।”
অটল বিহারী বাজপেয়ী। ০৯.১২.২০০১.

শেষ বিকেলে রেনকোজি টেম্পল দেখার মধ্যে দিয়ে একটা বিতর্কিত বিষয়ের ইতিহাসকে ছুঁয়ে এক অন্যরকম স্মৃতি সঞ্চয় করলাম। এই মন্দির সংলগ্ন একটা ছোট্ট পার্কেও গেলাম। পার্কে ঢুকেই চেরি ফুলের বাগান দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। সাদা ও গোলাপি রঙের ফুলে ফুলে ভরা চেরিগাছগুলো যেন প্রাণখুলে হাসছে মনে হল আমাদের দেখে!
Sanshinomori Park & Kyu Sando Kana- toro ঘুরে বেড়িয়ে ভালোই লাগল। বাগানে থোকা থোকা অনেক ক্যামেলিয়া ফুল ও সরোবরে রাজহাঁস দেখেছি। পার্কের মধ্যে Sericulture Experiment Station রয়েছে দেখলাম।
রেনকোজি টেম্পল ও সংলগ্ন অঞ্চলের পার্ক দেখে আমাদের আজকের ভ্রমণ শেষ হলো।
জাপান ভ্রমণে আজ ছিল নবমী। এবার ফিরে চলেছি টোকিও শহরে। রাত ঠিকানার হোটেলে। সন্ধে হয়ে গেছে। পথের আলোকসজ্জায় সাজানো শহরকে দেখতে দেখতে এগিয়েে চলেছি। হঠাৎ কানে ভেসে এলো একজন সহযাত্রী বলছেন, মায়ানমারে একটু আগেই ভয়ংকর ভূমিকম্প হয়েছে। কম্পনের মাত্রা ৭.৭, স্থায়িত্ব ছিল ৮০ সেকেন্ড এবং তার জের এসে পড়েছে থাইল্যান্ড, দক্ষিণ- পশ্চিম চীন ও ভিয়েতনামে। ব্যাংকক শহরেও অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে । এমন দুঃসংবাদ শুনে সবাই একটু মুষড়ে পড়লাম। আগামীকাল আমাদের ব্যাক টু প্যাভিলিয়ন- কলকাতায় ফেরা টোকিও থেকে ভায়া ব্যাংকক হয়ে। সেই ব্যাংককে যদি নামতে না পারি তো কি হবে?
এরপর শুরু হলো নানান আলোচনা বাসের মধ্যে -আগামীকাল বাড়ি ফেরার কি হবে উপায় এটা বড় ভাবনা!
মায়ানমারের ভূমিকম্পে কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার খবর ও নানান ভিডিও মুহূর্তের মধ্যে এসে গেছে সবার মোবাইলে। মন খারাপ হয়ে গেল ভিডিও ও খবরগুলো শুনে!..বেশ কয়েকমাস আগে মিজোরাম সীমান্তের চাম্ফাই বেড়াতে গিয়ে মায়ানমারে ঢুকে ওদের বিখ্যাত রিডিল লেক দেখে এসেছিলাম। তখনই মনে মনে ভেবেছিলাম, মায়ানমারে একবার বেড়াতে যাওয়ার কথা! সেই মায়ানমারে বিপর্যয়, আমি জাপানে বেড়াতে বেড়াতে শুনলাম, মন বিষন্ন হয়ে গেল!
টোকিও শহরে ফিরে ডিনার করে হোটেলে চলে এলাম। আজ নবমী নিশি। কাল সকালে ব্রেকফাস্ট করে একবারে বেরিয়ে যাব হোটেল ছেড়ে দিয়ে। হাফ ডে ট্যুর করে সরাসরি এয়ারপোর্টে যাওয়া। লাগেজ শেষবারের মত গুছিয়ে নিতে নিতে ভাবছি, শুধুই কি পাটভাঙ্গা জামাকাপড় গুলো নিয়ে ফিরে যাওয়া, এই ব্যবহৃত কাপড় জামাগুলোর মধ্যে রয়ে গেছে জাপানের ধুলো- বালি- বৃষ্টিও! কত স্মৃতি, কত কিছু দেখার মুগ্ধতা দু’মুঠো ভরে নিয়ে যাচ্ছি। ভ্রমণপাখি মন আমার এমন করেই উড়ে বেড়াক, ভেসে বেড়াক, গেয়ে বেড়াক গান- “পাখি আমার নীড়ের পাখি অধীর হল কেন জানি / আকাশ কোণে যায় শোনা কি ভোরের আলোর কানাকানি…”

ক্রমশ…
আগামী পর্বে শেষ হবে এই ডায়েরি।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *