ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ১৯)

সুমনা ও জাদু পালক

পরীরা আকাশের বুকে মিলিয়ে গেছে অনেকক্ষণ আগে ।তবু আকাশের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে সুমনা। আবার যদি দেখতে পেত ওদের তো খুব ভালো হতো ।ওদের সঙ্গে গল্পগুজব করতো। ওদের কাছে পরিরাজ্যের কথা জানতে চাইতো।
ছোট ‌থেকে এই পরীদের গল্প বাবার মুখে, ,মায়ের মুখে অনেকবার শুনেছে সে । কিন্তু পরীদের চোখে দেখা এই প্রথম ।আচ্ছা, সত্যি কি ওরা এসেছিল?
অদৃশ্য কন্ঠ বলে উঠল ,এসেছিল তো ।তার প্রমান তো তোমার হাতেই ।
—–মানে ?
—-হাতের মুঠোয় পুরে রেখেছ সাত পরীর ডানা থেকে খসে পড়া সাত রংয়ের সাতটা পালক ।

আরে তাইতো ,সুমনা ভুলেই গেছিল পালক গুলোর কথা।ও হাতের মুঠি খুলতেই পালক গুলো স্প্রিং এর পুতুলের মত ওর হাত থেকে লাফিয়ে বেরিয়ে গেল ।তারপর ওরা চক্রাকারে ঘুরতে থাকলো সুমনার মাথার উপরে। সাত রংয়ের সাতটা পালকের গা থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছিল লাল ,নীল, হলুদ ,সবুজ, আসমানী ,বেগুনি আর কমলা রঙের আলো। চক্রাকারে ঘুরতে ঘুরতে ই ওরা বলল সমস্বরে, সামনে তোমার অনেক পরীক্ষা সুমনা। অনেক সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে তোমাকে। আর সেই সমস্যার মোকাবিলা করতে গিয়ে হয়তো হারিয়ে ফেলতে পারো আমাদের ।তাই আমরা এখন চলে যাচ্ছি। কোন বিপদে পড়ে আমাদের স্মরণ করলেই চলে আসব আমরা। তোমাকে বিপদের হাত থেকে উদ্ধার করার চেষ্টা করব ।এখন আমাদের বিদায় দাও বন্ধু।
সুমনা ছলছল চোখে বললো, বিদায় পালক বন্ধুরা ।

ওই পালকগুলো দৃষ্টির আড়ালে যেতেই অদৃশ্য কন্ঠ বলে উঠলো,দুধরাজ চলো, এবার সময় হয়েছে যাবার।
‌চওড়া করে ডানা ছড়িয়ে দিয়ে দুধরাজ আবার উড়তে শুরু করল আকাশে ।এগিয়ে চলল সামনের দিকে ।পেরিয়ে গেল দুধ নদী। নদী পেরিয়ে আবার নিচে দেখা যাচ্ছে মাঠ ,গ্রাম, রাস্তা। দুধরাজ তাহলে নিচে নামছে না কেন ?পাখা গুটিয়ে ছুটছে না কেন মেঠো পথ ধরে ? অদৃশ্য কন্ঠ বলে উঠল ,একটু পরেই তোমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে ।আবার অবাক হয় সুমনা । ও কে? কেমন করে ও সুমনার মনের কথা সব বুঝতে পারে?
বেশ কিছুক্ষণ একটানা ওড়ার পরে দুধরাজের পিঠে বসে এক অদ্ভুত জিনিস নজরে এলো সুমনার। সামনে বিশাল জলরাশি। তার যেন কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। মস্ত উঁচু উঁচু ঢেউ উঠছে আর পড়ছে ।আর কি গর্জন জলের !এখান থেকেই শোনা যাচ্ছে শব্দ ।
এটাই কি তাহলে সমুদ্র?
বাবার মুখে সমুদ্রের কথা অনেকবার শুনেছে সুমনা, কিন্তু দেখেনি কখনো।
দুধরাজ উড়ে চলেছে সমুদ্রের উপর দিয়ে ।নিচে জলের দিকে তাকাতেই ভয় পেয়ে যায় সুমনা। যদি কোনো ভাবে পড়ে যায় সে?
অদৃশ্য কন্ঠে বলল ,কী সুমনা, ভয় লাগছে?
—- হ্যাঁ ।
—– এক কাজ কর তুমি।
—– কি ?
—– দুহাতে দুধরাজের গলা জড়িয়ে ধরে চোখটা বন্ধ করে রাখো। চোখ বন্ধ থাকলে নিচের জল দেখতে না পেলে, ভয় লাগবে না তোমার ।
সুমনা তাই করল। দুই হাতে শক্ত করে দুধরাজের গলা জড়িয়ে ধরলো। তারপর চোখ বন্ধ করে দিল। বেশ কিছুক্ষন এভাবে থাকার পর হঠাৎ মনে হল ,দুধরাজ যেন নিচে নামছে। তাহলে কি সাগর পেরিয়ে এলাম ?
না, এখন চোখ খুলবো না ।
আরো একটু পরে মনে হলো যেন কোন শক্ত জায়গায় এসে দাঁড়িয়ে গেল দুধরাজ। তবু সুমনা ভয়ে চোখ খুলছে না দেখে অদৃশ্য কন্ঠ বলল, আর ভয় নেই এবার চোখ খুলতে পারো
সুমনা ।আমরা এখন পৌঁছে গেছি সুখ সাগরের বুকে, হাসিখুশি দ্বীপে।
ধীরে ধীরে চোখ খুললো সুমনা। সূর্য উঠছে। ভোরের সূর্যের হাল্কা আলোয় রাতের আঁধার কাটছে একটু একটু করে ।মনে হচ্ছে যেন কেউ দুধের সরের মত পাতলা একটা কালো চাদর খুব ধীরে ধীরে সরিয়ে নিচ্ছে পৃথিবীর শরীর থেকে ।কিন্তু এ কোন জায়গায় তাকে নিয়ে এলো দুধরাজ? চারিদিকে তো বিশাল বিশাল গাছ ,জঙ্গল ।সুমনা তো খুব ভালোবাসে গাছপালা ।এখানে জানা অজানা কত গাছ ,কত লতা। লতা গুলো জড়িয়ে আছে গাছকে। আর লতাগুলো থেকে ঝুলছে থোকাথোকা রংবেরঙের নানা ফুল।কিন্তু ওরা অমন কেন?

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।