ধারাবাহিক || ভ্রমণ সিরিজ || আফ্রিকার ডায়েরি- ৩ – সুব্রত সরকার

(নাইরোবি -গ্রেট রিফ্ট ভ্যালি- মাসাইমারা)
Jomo Kenyatta international Airport এর রানওয়েতে এসে মুম্বাই-নাইরোবির ইন্ডিগো বিমান শান্ত হয়ে থামল। কেবিন ক্রুর প্রধান ঘোষণা করলেন, ” সুপ্রভাত। স্বাগত। আমরা নাইরোবিতে এসে গেছি। আপনাদের অনেক ধন্যবাদ ইন্ডিগোতে সফর করার জন্য।”
মনের মধ্যে অসম্ভব সুন্দর একটা অনুভূতি হলো এই সময়, সত্যি তাহলে চলে এলাম আফ্রিকা! আমার স্বপ্নের ভ্রমণে প্রিয়জনদের সাথে চলেই এলাম তাহলে!..
নাইরোবি কেনিয়ার রাজধানী।
আফ্রিকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত ” মাউন্ট কেনিয়া” থেকে এই বিশাল ভূখণ্ডের নাম হয় “কেনিয়া”। ‘কেনিয়া’ কথার সোয়াহিলি ভাষায় অর্থ হল – “কিরিনিয়াগা বা কিরিনইয়া’। ইংরেজিতে হলো ” গডস্ রেস্টিং প্লেস “, প্রভুর বিশ্রামস্থল। অতীতে কেনিয়ার মালিক ছিলেন জাঞ্জিবারের সুলতান। পরবর্তী সময়ে ১৮৮৫ সালে জার্মানরা এর দখল নেয়। তারপর ১৮৮৮ – ১৯৬২, দীর্ঘ ৭৫ বছর ব্রিটিশরা শাসন করে। এরপর কেনিয়া স্বাধীন হয় ১৯৬৩ সালে। কমনওয়েলথ অফ নেশনসের সদস্য হয় ১৯৬৪ তে। আজ কেনিয়া স্বাধীন এক প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র।
কেনিয়ার উত্তর- দক্ষিণে সুদান ও ইথিওপিয়া, পূর্বে সোমালিয়া ও ভারত মহাসাগর, দক্ষিণে তানজানিয়া, পশ্চিমে ভিক্টোরিয়া হ্রদ ও উগান্ডা।
জনসংখ্যা আনুমানিক সাড়ে পাঁচ কোটি। বহু জাতির মানুষের বসবাস কেনিয়ায়। কিকুউউ সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ট, তারপরই হলো মাসাইরা। সংস্কৃতির বৈচিত্র্য, বিশাল বনভূমি, সমৃদ্ধ বনাঞ্চল নিয়ে কেনিয়া আফ্রিকার খুব আকর্ষণীয় এক ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন।
কেনিয়ায় ৬০ খানা ন্যাশনাল পার্ক রয়েছে। মোট জিডিপির ৬০ শতাংশ আসে পর্যটন থেকে। তারপর কৃষি ও চা-কফি থেকে। কেনিয়ার চা- কফি খুব উৎকৃষ্ট।
বিশ্ব শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যে প্রথম কেনিয়ান একজন নারী – ওয়াঙ্গারি মুতা মাথাই। তিনি ছিলেন অধ্যাপক, পরিবেশবিদ এবং সমাজকর্মী।
কেনিয়ার জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। অলিম্পিকে সোনা জেতা দেশ কেনিয়া।
ক্রিকেট বিশ্বকাপে একবার বড় অঘটন ঘটিয়েছিল কেনিয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দিয়ে।
কেনিয়ায় নানাধর্মের লোক বসবাস করেন। প্রোটেস্ট্যান্ট খৃষ্টান ৪৫%, রোমান ক্যাথলিক ৩৩%, মুসলমান ১০%, সনাতন ১০% এবং অন্যান্য ২%।
কেনিয়া দিয়েই শুরু হবে আমাদের আফ্রিকান সাফারি। আজ আমরা নাইরোবি থেকে সরাসরি মাসাইমারা চলে যাব।
এয়ারপোর্টের বাইরে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে আফ্রিকার ট্রাভেল এজেন্সি ‘nylak africa safari” র প্রতিনিধি মাসা। আজ এবং আগামীকাল মাসার ল্যান্ড ক্রজারে করে নাইরোবি থেকে মাসাইমারা যাব। এবং মাসাইমারা ঘুরে চলে যাব তানজানিয়া। তারপর তানজানিয়া ভ্রমণ শেষ করে আবার কেনিয়ায় ফিরে আসব।
বিমানের দরজা খুলে দিয়েছে। ধীরে ধীরে নেমে এলাম। ঘড়িতে সময় সকাল ৫. ৪৫। এটা আফ্রিকার সময়। ভারতীয় সময় থেকে আড়াই ঘন্টা পিছিয়ে।
বাইরে ভোরের বাতাস বেশ সুমধুর। একটা নতুন সকাল, নতুন দেশ, নতুন ভ্রমণে এসেছি- তাই মনের সব সুক্ষ-সুন্দর অনুভূতিগুলো তীব্র হয়ে ধরা দিল হৃদয়ে। প্রবল ভালোলাগার আনন্দ টের পাচ্ছি। বিমান থেকে নেমে রানওয়েতে দাঁড়িয়ে থাকা বাসে গিয়ে উঠলাম। এই বাস পৌঁছে দিল নাইরোবি এয়ারপোর্টের ডিপার্চার গেটে। সেখানে ইমিগ্রেশন পর্ব খুব সহজেই মিটল। পাশেই ছিল মানি এক্সচেঞ্জ কাউন্টার। আমেরিকান পঞ্চাশ ডলার ভাঙিয়ে পেলাম ছ’হাজার একশো পঞ্চাশ কেনিয়ান শিলিং। আপাতত এই শিলিংটা পথ খরচের জন্য নেওয়া হলো। প্রয়োজন মত আবার ভাঙিয়ে নেব।
লাগেজ নিয়ে ধীরে ধীরে বাইরে বেরিয়ে এলাম। বাইরে তখন ট্যুরিস্টের নাম লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে অপেক্ষা করছে এজেন্সির লোকজনরা।
আমরা খুঁজছি মাসাকে। সোহমের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে মাসার। ও বলেছে ,বাইরে থাকবে। মাসাকে তো আগে আমরা দেখি নি। তাই চিনতে পারব না। মাসাই হয়তো আমাদের খুঁজে নেবে!.. হ্যাঁ ঠিক তাই। দেখতে পেলাম বেশ লম্বা একটু ঢ্যাঙ্গা টাইপের এক কালো যুবক ছুটতে ছুটতে আসছে, হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা – “SOHAM SUBRATA…”
আমরা হাত তুলে হাসলাম। মাসা ছুটতে ছুটতে আমাদের কাছে এসে হেসে বলল, “জাম্বো!.. জাম্বো!.. কারিবু!.. ওয়েলকাম!…”
আমরা বললাম, “গুডমর্নিং।”
এরপর লাগেজ নিয়ে এগিয়ে চললাম পার্কিং জোনে। খুব সামান্য পথ। আমাদের জন্য দারুণ এক ল্যান্ড ক্রুজার নিয়ে মাসা এসেছে। গাড়িটাকে দেখেই মন খুশ হয়ে গেল! এমন ল্যান্ড ক্রুজারে আগে কখনো চড়ি নি। তাই বাড়তি এক আনন্দও হলো!..
মাসা একা আসে নি। মাসার সঙ্গে ছিল মাইকেল। ওরা দু’বন্ধু। মাসা ড্রাইভার, মাইকেল গাইড।
পার্কিং জোনের পাশেই ছিল একটা ওয়াশরুম। চটজলদি আমরা তিনজনই ব্রাশ করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। কারণ এখন প্রায় পাঁচ-ছ’ঘন্টার এক লম্বা জার্নি শুরু হবে। ডেস্টিনেশন মাসাইমারা!.. সেই স্বপ্নের মাসাইমারা!..গর্বের মাসাইমারা!..সারা পৃথিবীর জঙ্গলপ্রেমীদের কাছে স্বর্গ, একটা স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখার নির্মল আনন্দ।
ব্রাশ করে সকালের প্রথম চা টা পেলে ভালো হোত। কিন্তু মাসা বলল, “এগিয়ে চলুন। ভালো জায়গায় গাড়ি দাঁড় করাবো। মর্নিং টি- কফি ও ব্রেকফাস্ট ওখানে করবেন।।”
”ভালো জায়গাটার নাম কি মাসা?” আমরা জানতে চাইলাম।
মাসা বলল, ” Great Rift Valley “।
আবার চমক!.. আবার আবেগের বন্যায় ভেসে গেলাম। সেই বিখ্যাত গ্রেট রিফ্ট ভ্যালি!.. কত নাম শুনেছি! গল্প শুনেছি!.. আজ তাকে প্রথম দেখব। আর অত বড় অনন্ত এক উপত্যকার কতটুকুই বা একটু চা বিরতির ছোট্ট অবকাশে দেখে নিতে পারব! তবু তো দেখব আজ গ্রেট রিফ্ট ভ্যালিকে!..
মাসার হাতে ল্যান্ড ক্রুজার টগবগ করে ছুটছে। প্রথম সকালের রাস্তাঘাট বেশ ফাঁকা। তারমধ্যে পথও সুন্দর। ল্যান্ড ক্রুজারে চড়ার মজাই অন্যরকম।
নাইরোবি রাজধানী শহর। তাই চারপাশে চোখ ধাঁধানো অনেক কিছু আছে। এয়ারপোর্ট থেকে গ্রেট রিফ্ট ভ্যালি আসতে সময় লাগল কমবেশি দু’ আড়াই ঘন্টা। নতুন একটা দেশকে দেখছি, তার রাজধানী শহর, তার ন্যাশনাল পার্কের বাউন্ডারি ( নাইরোবি ন্যাশনাল পার্ক), অনেক স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি দেখলাম। মাসার সঙ্গেও টুকটুক করে গল্প হচ্ছে । তথ্য সংগ্রহ চলছে। মাসার সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলে ভাবের আদান-প্রদান করা যায়।
নাইরোবির পথের দু’ধারে লালমাটির অনেক রাস্তা চোখে পড়ল। কাঁটা ঝোপ গাছ – আকাশিয়ারা দাঁড়িয়ে আছে। পথ ঘাট ভালো। গাড়ি ছোটাতে কোনও অসুবিধা হচ্ছে না। মাসা গ্রেট রিফ্ট ভ্যালির কাছাকাছি এসে বলল, “নাও ইউ এনজয় ইওর ব্রেকফাস্ট ইন দ্যা গ্রেট রিফ্ট ভ্যালি।”
ব্রেকফাস্ট শুনেই মনে পড়ল ‘উগালির’ কথা। আসার আগে জেনেছিলাম, আফ্রিকায় জলখাবারে ‘উগালি’ খুব জনপ্রিয়। এটা একধরণের রুটি। ভুট্টার আটা দিয়ে তৈরী হয়।
পথের ধারের সুন্দর এক ভিউ পয়েন্ট ও কিউরিও শপযুক্ত জায়গায় গাড়ি দাঁড় করাল মাসা। এখানকার এই কিউরিও শপগুলোয় পাবলিউ টয়লেট থাকে। বিনা পয়সায় সবাই তা ব্যবহার করে। মাসা আমাদের বলে দিল, “তোমরা টয়লেট ইউজ করে পাশের দোকানে ব্রেকফাস্ট করে নাও। থার্টি মিনিটস টাইম দিলাম।”
গ্রেট রিফ্ট ভ্যালিতে ভেড়ার লোমের টুপি, জ্যাকেট, মাসাই মুখোশ, বর্শা, মাসাই চাদর অঢেল বিক্রি হচ্ছে। প্রচুর দরদাম করে কিনতে হয় এসব। নাহলেই পকেট চিচিংফাঁক!..
সকালে বেশ মিষ্টি একটা রোদ উঠেছে। ওয়াশরুমের কাজ সেরে এবার আমরা রেস্টুরেন্টের পথে পা বাড়ালাম।
ছোট্ট জমজমাট এক রেস্টুরেন্ট। বেশ ভীড়। আমাদের মত নানান দেশের পর্যটকরা রয়েছেন। অনেক কষ্টে ভিড়ের থেকে খাবার যোগাড় করলাম। উগালি নয়, পেলাম মান্ডাজি( Mandazi)। রেস্টুরেন্টের কুক কাম বয় উইলিয়াম বলল মান্ডাজির নাম। এটা আমাদের ফুলকো লুচির মত। নরম ও সুস্বাদু। ওমলেট, মান্ডাজি ও কফি খেলাম তিনজনে। খরচ পড়ল দশ ডলার। কেনিয়ান শিলিং ছিল, ডলার নিচ্ছে দেখে আমরা ডলারই দিলাম।
এই রেস্টুরেন্টের চাতাল থেকে গ্রেট রিফ্ট ভ্যালিকে দারুণ উপভোগ করলাম। চোখ ধূ ধূ দিগন্তে হারিয়ে যায়। কী বিশাল এক উপত্যকা।
গ্রেট রিফ্ট ভ্যালি সোয়াহিলিতে Bonde la ufa. এই বিখ্যাত উপত্যকার দৈর্ঘ্য ৬- ৭ হাজার কিলোমিটার। প্রস্থ ৪৮ – ৬৪ কিলোমিটার। এ সত্যিই এক মহা উপত্যকা!
পূর্ব আফ্রিকার এই মহা ভ্যালিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, হ্রদ, পর্বত ও আগ্নেয়গিরি।
গ্রেট রিফ্ট ভ্যালি দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার জর্ডন থেকে শুরু হয়ে পূর্ব আফ্রিকা তথা আফ্রিকার শৃঙ্গ অঞ্চলকে অতিক্রম করে দক্ষিণ পূর্ব আফ্রিকার মোজাম্বিক পর্যন্ত বিস্তৃত। কেনিয়া, ইথিওপিয়া এবং তানজানিয়ার ঘেরাটোপে এই উপত্যকা অপার রহস্য নিয়ে অতীব সুন্দর। এবার বাকি পথটা গ্রেট রিফ্ট ভ্যালিকে দেখতে দেখতেই যাব। পথে কেনিয়ার একের পর এক গ্রাম, শহর, জনপদ, বাজার আসছে। আর নানারকম আফ্রিকানদের দেখছি। নতুন একটা দেশের অচেনা ভূপ্রকৃতি ও অজানা মানুষদের দেখতে দেখতে যাওয়ার মজা খুব উপভোগ করলাম। পথে মাঝে মাঝে রিসর্ট ও লজের দেখাও পেয়েছি। গ্রেট রিফ্ট ভ্যালিতে একটা দুটো রাত থাকতে পারলে ভালোই লাগবে। আমাদের ভ্রমণ সূচীতে তা নেই। আমরা এভাবেই মহা উপত্যকাকে দেখতে দেখতে প্রায় পাঁচ ঘন্টার সফর শেষ করে মাসাইমারায় প্রবেশ করলাম। পথে যখন প্রথম মাসাইদের দেখতে পেতে শুরু করেছি, সে এক দারুণ আনন্দ উত্তেজনা। এই মাসাইরা আমাদের স্বপ্নে বহুকাল ধরে রয়েছে। আজ প্রথম স্বচক্ষে দেখলাম। এ কম আনন্দ নাকি মুসাফির জীবনে!..
মাসাইমারায় আমাদের লজের নাম AA Mara Lodge. ল্যান্ড ক্রুজার থেকে নেমে রিসেপশনে প্রবেশ করতেই হাতে শরবত দিয়ে আপ্যায়ন করে বলল, “জাম্বো। জাম্বো। কারিবু”।
এই “জাম্বো। জাম্বো। কারিবু।” সারা আফ্রিকার সম্পদ। প্রথমেই ওরা এমন করে সবাইকে আপন করে নেয়। দেখা হলেই মিষ্টি হেসে বলবে, “জাম্বো। জাম্বো। কারিবু।” তোমাকে স্বাগত। ওয়েলকাম।
AA Mara Lodge বেশ বড়। ছড়ানো বাগান। কটেজ। সুইমিং পুল। বার। রেস্টুরেন্ট। ডাইনিং হল। পার্কিং লট। বারবিকিউ স্পটও দেখতে পেলাম।
ডুলুং- সোহম রুমে গেছে। ওরা তৈরী হচ্ছে। আমি একা একা একটু ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম লজের চারপাশে। হঠাৎই বেশ কয়েকজন মাসাই এসে ছেঁকে ধরল আমাকে। ওদের আবদার, “চলো আমাদের মাসাই ভিলেজে।”
“কোথায় তোমাদের গ্রাম?” জানতে চাইলাম।
ওদের মধ্যে যে একটু বড় সড় চেহারার কথাবার্তায় ভালো, সে বলল, “আমার নাম ডেভিড। আমি সর্দার। তোমরা চলো আমাদের গ্রামে। পাশেই আমাদের গ্রাম। নাচ দেখাব, গ্রাম দেখাব। ঘর দেখাব। “
আমি তো দ্বিধায় পড়ে গেছি। কি বলব বুঝতে পারছি না। মাসাইদের সঙ্গে এমন হঠাৎ করে অন্তরঙ্গ হওয়ার সুযোগ এসে যাবে ভাবি নি। এমন সময় কোথা থেকে মাসা এসে হাজির। আমাকে এভাবে মাসাইদের হাতে বন্দী দেখে মাসা সোয়াহিলিতে ওদের কি সব বলল, তখন দেখি ওরা আমাকে ছেড়ে দিয়ে বেশ খুশি মনেই বলল, “ওকে। ওকে। তুমি আগে গেম ড্রাইভ করে এসো। বিগ ফাইভ দেখো। কাল সকালে যেও আমাদের গ্রামে।”
মাসাইদের দলটা চলে যাচ্ছে। মাসাও চলে গেল। মাসা গল্পের ছলে একবার বলেছে, ওর মা মাসাই, বাবা কিকুউউ। তাই ও উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ। আমি একা দাঁড়িয়ে আছি। লম্বা ছিপছিপে চেহারার রংবাহারি চাদরে ঢাকা লাঠি হাতে লোকগুলো চলে গেল। ওরা সবাই মাসাই। সবার আগে যাচ্ছে ওদের সর্দার ডেভিড। আমি স্বপ্নেও ভাবি নি, এভাবে ওদের সঙ্গে আলাপ পরিচয় হবে। বন্ধুত্বের সূচনা হবে। মাসাইমারায় এসেই এমন ভাবে মাসাইদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব, আন্তরিক নিমন্ত্রণ আমার মত মুসাফিরের ভাগ্যে অপেক্ষা করছিল, এ যে কত বড় প্রাপ্তি!..অভাবিত উপহার!..
হে পথ, তোমাকে প্রণাম!..”কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক বলা যায়!..” “How many roads must a man walk down / before you call him a man!..” জানি না সে পথের হিসেব!.. মনে মনে বলি, অনেক পথ পেরিয়েই আমি এসেছি তোমার কাছে আফ্রিকা!..
শুরু হোক এবার আফ্রিকান সাফারি।
শুরু হোক মাসাইমারা অভিযান!..
ক্রমশ…