ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ৭০)

সুমনা ও জাদু পালক

চন্দ্রকান্তা কে বেদির উপরে বসতে বলে মহারাজা রুদ্রমহিপাল সুমনাকে নিয়ে বাম দিকের সুড়ঙ্গ পথ ধরে এগিয়ে চললেন। বেশ কিছুক্ষণ যাওয়ার পরে সামনে এক জায়গায় এসে একটা লোহার নিশ্ছিদ্র বন্ধ দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেলেন রাজা। সুমনা দেখল, রাজা ‘নম বিষ্ণু’ ‘নম বিষ্ণু’ ,’ নম বিষ্ণু’ মন্ত্র তিনবার উচ্চারণ করে দরজার গায়ে তিন বার আঘাত করলেন। দরজার গায়ে প্রণাম করে বললেন,” চক্রপানি আদেশ দিলেন নিষেধ নিলেন তুলে, রাজার কার্যে লৌহ কপাট যাক এখনি খুলে!”
রাজা রুদ্রমহিপাল এই মন্ত্র উচ্চারণ করার পরেও বন্ধ দরজা খোলার কোন লক্ষণ দেখা দিল না। রাজা বারংবার ওই মন্ত্র উচ্চারণ করে চললেন, কিন্তু অবস্থার কোন পরিবর্তন হলো না।
গুপ্ত সুরঙ্গ পথে রাজা ঘেমে উঠলেন। রাজা অসহায়ের মত সুমনার মুখের দিকে তাকালেন।
তখন সুমনা বলল, হে রাজন, আপনার মন্ত্রে সামান্য পরিবর্তন আনুন, বন্ধ দরজা খুলে যাবে।
—- কি করব?
—- আপনি বন্ধ দরজার গায়ে তিনবার আঘাত করে বলুন,” নম হরিহর দেবায় নমঃ!”
তারপর দরজার গায়ে প্রণাম করে বলুন,” দেব‌ হরিহর আদেশ দিলেন, নিষেধ নিলেন তুলে,/
রাজার কার্যে লৌহ কপাট যাক এখনি খুলে!”
রাজা বললেন, কিন্তু ……?
অদৃশ্য কন্ঠ বললো, “মহারাজ, রাজকুমারী রত্নমালা যা বলছে তাই করুন। আমার মনে হয় বন্ধ দরজা খুলে যাবে।”
—- বেশ বেশ,করছি‌।
রাজা দেব হরিহরের নাম করে বন্ধ দরজায় তিনবার আঘাত করলেন। তারপর দরজার গায়ে প্রণাম করে মন্ত্রটা বলতেই বন্ধ দরজা আস্তে আস্তে খুলে গেল।
রাজা খোলা দরজা দিয়ে সুমনাকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলেন।
এদিকে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরে চন্দ্রকান্তা নিছক কৌতূহলের বশবর্তী হয়ে এগিয়ে চলল সামনের দিকে। মনে ইচ্ছা, গুম ঘর দেখবে। অনেকটা এগিয়ে যাওয়ার পর সামনের পথ আলো আঁধারী। চন্দ্রকান্তা হাত বাড়িয়ে হাতড়ে হাতড়ে এগিয়ে চলল। আরো কিছু যাওয়ার পর সামনের পথ রুদ্ধ। মস্ত বড় লোহার গেট দিয়ে আটকানো। সেই গেটের গায়ে একটা ছোট্ট ছিদ্র দিয়ে বাইরে থেকে অতি সামান্য আলো আসছে ভিতরে। চন্দ্রকান্তা ওই ছিদ্র দিয়ে চোখ লাগিয়ে দেখল, বহু দূরে প্রবাহিত হচ্ছে নদী। চন্দ্রকান্তা চেষ্টা করলে দরজা খোলার, ইচ্ছে নদীর কাছে যাওয়ার। তাদের রাজ্যে তো আগে এরকম অনেক নদী ছিল। চন্দ্রকান্তা সখীদের নিয়ে সেই নদীতে স্নান করতে যেত। কিন্তু জাদুকর হূডু তাদের রাজ্যকে মরুভূমিতে পরিবর্তন করায় কতদিন নদীর জল স্পর্শ করা হয়নি। তাই নদী দেখে চন্দ্রকান্তার খুব ইচ্ছে হলো, নদীর কাছে যাওয়ার। কিন্তু কোনভাবেই দরজা খুলতে পারল না। তাই আবার সে ফিরে চলল আগের জায়গায় সেই রক্তবর্ণ বেদীর কাছে। কিন্তু গুমঘরটা কোথায়? ওটা তো দেখা হলো না। চারিদিকে সতর্ক দৃষ্টি ফেলে এগিয়ে যেতে যেতে চন্দ্রকান্তা দেখতে পেল, রাস্তার ডান দিকে এক জায়গায় একটা ছোট্ট ঘর। দরজা খোলা। ঘরের ভিতরটা অন্ধকার। খোলা দরজা দিয়ে তবুও কৌতুহলী চন্দ্রকান্তা ভেতরের দিকে তাকায়। ঘরের গভীরতা বোঝার জন্য হাততালি দেয়। পরপর তিনবার। আর তারপরেই ওর কানে যায় একটা হিস হিস শব্দ। কেমন যেন একটা আঁশটে গন্ধ এলো ওর নাকে ।ততক্ষণে ঘরের ভিতরের অন্ধকারটা ওর চোখ সওয়া হয়ে গেছে। হঠাৎ যেন ওর মনে হল ঘরের ভিতরে কিছু একটা নাড়াচাড়া করছে। কিন্তু কি? এখানে তো কিছু থাকার কথা নয়। চন্দ্রকান্তা পিছন ফিরে আগের জায়গায় দ্রুত পায়ে যাওয়ার চেষ্টা করল। তখন দেখতে পেল একটা বিশাল ময়াল সাপ তার দিকে এগিয়ে আসছে। চন্দ্রকান্তা ছুটতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল। আর বিশাল হাঁ করে ময়ালটা টুপ করে গিলে নিল থাকে। ময়ালের পেটের ভিতরে গভীর অন্ধকারে তলিয়ে গেল চন্দ্রকান্তা।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।