• Uncategorized
  • 0

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ১)

সুমনা ও যাদু পালক – ১

খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যায় সুমনার। কে যেন নাম ধরে ডাকছে তাকে। অবাক হয় সুমনা। এত সকালে কে ডাকছে তাকে? পাশে শুয়ে মা তো এখন ঘুমোচ্ছে।তাহলে কে?
আচ্ছা ,মায়ের জ্বরটা কি ছেড়েছে? কাল রাতে তো কাশি হচ্ছিল খুব। সারারাত তো ঘুমাতে পারেনি। মায়ের কপালে হাত দেয় সুমনা। না, এখনও বেশ গরম কপাল। কি করবে সে এখন?
কাল তো মধু ডাক্তারের কাছে মায়ের জন্য ওষুধ আনতে গিয়ে ফিরে এসেছে। নগদ পঞ্চাশ টাকা না দিলে মধু ডাক্তার ওষুধ দেবে না বলে দিয়েছে । কোথায় পাবে সে পঞ্চাশ টাকা? নিরুপায় হয়ে জীবন মাস্টারের বাড়িতে গেছিল সে। জীবন মাস্টার দুই টাকা নিয়ে ওষুধ দেয়।হোমিওপ্যাথি ওষুধ। জীবন মাস্টার তিনদিনের ওষুধ দিয়েছেন। এটাও বলে দিয়েছেন যে, তিন দিন ওষুধ খাওয়ার পরেও জ্বর না কমলে রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে।
—– সুমনা—- সুমনা——
ওই তো আবার কে যেন ডাকছে তাকে। মনে হচ্ছে যেন উঠোনের ঈশান কোণ থেকে কেউ ডাকছে। খুব অবাক হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পায়ে পায়ে উঠোনে যায় সুমনা। ঈশান কোনে ঝাঁকড়া বেলগাছ টার গাছের নিচে গিয়ে দাঁড়ায়।
এদিক ওদিক তাকায়। কাউকে দেখতে পায়না।
হঠাৎ শোনে, কে যেন বলছে, “এইতো, এইতো আমি।”
আওয়াজ লক্ষ্য করে মস্ত বেলগাছটার মাথার দিকে তাকায় সুমনা। আরে কি সুন্দর একটা পাখি বসে আছে বেল গাছের মাথায়। খুব বড় নয় পাখিটা, কিন্তু দেখতে ভারী সুন্দর। উজ্জ্বল নীল রংয়ের পাখিটার গলার কাছটা হালকা বাদামি। কি পাখি ওটা? ভালো করে দেখতে না দেখতেই পাখিটা উড়ে চলে গেল। সুমনা বুঝতে পারল না যে, কে তাকে নাম ধরে ডাকছিল? ওই পাখিটা কি? ধুর তাও আবার হয় নাকি! পাখি কী কখনো মানুষের ভাষায় কথা বলতে পারে?

সুমনার বাবা নেই। সুমনা যখন খুব ছোট, তখন বাবা শহরে কাজ করতে গিয়ে হারিয়ে গেছে একদিন। মা তখন লোকের বাড়িতে মুড়ি ভেজে সংসার চালাতো। কিন্তু এখন অনেক মুড়ি মিল হয়ে যাওয়াতে কেউ আর মুড়ি ভাজায় না বাড়িতে। কাজ না পেয়ে খুবই কষ্টে দিন কাটছিল তাদের। শেষে বাধ্য হয়ে সরকার বাড়ির বড় গিন্নি মার কাছে কেঁদে পরে সুমনার মা। সরকার বাড়ির বড় গিন্নি কমলা দেবীর দয়ার শরীর। তিনি সব শুনে সুমনার মাকে তাঁদের রাধামাধব মন্দিরে ভোগ রান্নার কাজে নিয়োগ করেন। মন্দিরের পুরোনো পুরোহিত বাদল ঠাকুরের বয়স হয়েছে। চোখে ভালো দেখতে পান না। মাঝে মাঝে তাই ভোগের রান্না পুড়িয়ে ফেলতেন। সুমনার মা কাজে লাগাতে খুব খুশী হন তিনি।
মাস দুয়েক আগে মন্দিরের কাজে লেগেছে সুমনার মা। মা মন্দিরের কাজে লাগার পর থেকে ভালো মন্দ খেতে পাচ্ছে সুমনা। আতপ চালের ভাত, পুরু মুগডাল, পাঁচ রকমের ভাজা, দু তিন রকমের নিরামিষ তরকারি, টক, চাটনি পরমান্ন মিষ্টি থাকে ভোগে।

বাদল ঠাকুরের মনটা খুব ভালো। বেশি বেশি করে ভোগের প্রসাদ দেন মাকে। মা আর মেয়ে দুজনেরই পেট ভরে যায়।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।