গ এ গদ্যে সঞ্জীব সেন

জিরো জিরো সেভেন

যখন‌ মন‌ ভালো থাকে না , তখন ঝোঁক পড়ে অতীতে । অতীতের কোনো মুহূর্ত যা একদা স্ফুরিয় আনন্দ এনে দিয়েছিল ।‌তখন সেই ছেলেবেলার কিম্বা বয়ঃসন্ধিকালের ছেলেটিকে খুঁজতে ইচ্ছা হয়। আর সেই সূত্রে খনন‌যন্ত্রটি খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে আসে পুরোনো কোনো ম্যাগাজিন আর তাতে লেখা জিরো জিরো‌ সেভেন বন্দুক হাতে বন্ড , জেমস বন্ড। মার্টিনি ককটেল হিসাবে ভদকাতেই সাচ্ছন্দ্য বোধ করে । পদমর্যাদায় এস আই এস এর প্রধান নিয়োগ করা হয় যা পরবর্তীতে এম আই সিক্স নাম দেয়া হয়েছে। জিরো জিরো সেভেন কোডে কাউকে শুট আউট এর অনুমতি দেয়া হয়েছে ‌ যার পোশাক ছিল ডিনার জ্যাকেট আর রোলেক্স কিম্বা ওমেগা ঘড়ি । বন্ডের হাতিয়ার বলতে জীবনের সাথে রসিকতা । “নেভার সে নেভার এগেইন ” সিনেমায় প্রবল শক্তিশালী ভিলেন তখন বন্ডকে নাগালের মধ্যে পেয়ে যায় তখন হাতের সামনে একটি শিশি ছুড়ে দেয় আর ভিলেন কাতরাতে কাতরাতে বিদায় নেয় । কনারি শিশির দিকে তাকালে তো দেখতে পায় লেখা ‘বন্ড’স ইউরিন স্পেশিমেন । ততদিনে ইংরাজী মিডিয়ায় থেকে বাংলা মিডিয়াম স্কুলে আসা ছেলেটির থেকে জেনে গেছি জেমস বন্ড মানে দারুণ একসান আর ফ্রেঞ্চ কিস ,লিপলক কিস । আর যা আমাকে কবিতার ভাষায় বলতে হয় যে স্পর্ধা এনে দিয়েছিল।‌ আমার হলে গিয়ে জেমস বন্ড এর প্রথম সিনেমা পিয়ার্স বর্সনান এর গোল্ডেন আই । সেই থেকে শুরু । প্রথম জেমস বন্ড কে চাক্ষুষ দেখা । অবশ্য আগেই ধারণা হয়েছিল তেলতেলে পাতার ম্যাগাজিনে।‌ছুচোবাজি বানানোর জন্য কেজি দরে কিনে আনা তেলতেলে ম্যাগাজিনে।‌সেকথায় হয়ে আসছি । প্রথম সিনেমা দেখে মনে হল এই হচ্ছে তাহলে জেমস বন্ড তার কাছে কোনো বাধাই বাধা নয় । যেভাবেই হোক লক্ষ্যে পৌঁছে যাবেই । এক হিরো তার মানুষ মারতে হাত কাঁপে না। প্রেমে পড়ার ক্ষেত্রে শত্রু মিত্রর বাছবিচার নেই । ভয়ঙ্কর ভিলেনের সামনে দাঁড়িয়ে মুখে হাসি লেগে থাকে ।নারী শরীর ছোঁয়ার ব্যপারে কোনো ছুতমার্গ নেই।এই জেমস বন্ডের কোনো স্টেডি গার্লফ্রেন্ড নেই ! জেমস বন্ডের সিনেমা পাগল হয়ে গেলাম। তারপর “ডাই এনাদার ডে। টু মরো নেভার ডাই। দ্য ওয়ার্ল্ড ইস নট এনাফ।” তবু কেন ক্রেগ ড্যনিয়েল‌ বন্ডের ভিতর হৃদয় নামের জিনিস টা ঢুকিয়ে দিয়ে একজন প্রেমিক হিসেবে তুলে ধরল।ক্যাসিনো রয়াল থেকে বন্ডের বিনির্মাণ শুরু হয়। মনে পড়ে “ক্যাসিনো রয়াল‌” সিনেমায় বিখ্যাত ট্রেনদৃশ্য ভেসপার যখন‌ বন্ডের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে ইগো তখন ড্যানিয়েল ক্রেইগের মুখে এক অভিব্যক্তি প্রকাশ পায় বন্ড প্রথম অস্থির হয়ে ওঠে । যে চোঁখের ইশারায় মেয়েদের কাবু করে ফেলে ভেসপারকে বলছে‌ আমার চোখে চোখ রাখো প্লিজ তুমি জানো আমি পারবো , জুয়া তো তিনি খেলেছেন এমন‌ বিপন্নতা প্রথম লাগছে । অথচ” গোল্ডেন আই “মনোপলি” বলে তোমার তোমার‌ ইগো থেকে জেদ ধরে আছো তখন বন্ডের মুখে কোনো‌ অভিব্যক্তি ধরা পড়ে না। তবে কি ট্রমা । বন্ডের সাইকোলজিকাল রিপোর্ট বলছে চাইল্ডহুড ট্রমা । সেই ট্রমার উৎস জানা যায় ” স্পেকটর” সিনেমায় রোফেল্ডের চরিত্রের মাধ্যমে। তখন ক্লাইমেক্স বন্ড চাইন্ডহুডে পৌঁছে যাচ্ছে। এখানে যে দুজন‌ বন্ডের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তারা কেউ বন্ডগার্ল নন। একজনকে ইংল্যান্ডের রানীর চেয়েওমান্য করেন আরাক জন মানিপেনি । এম এর মৃত্যুর পর বন্ডের আবেদনগুলো পাল্টে যায় যা নজর এড়ায়নি। এম এর মৃত্যুর পর “স্কাইফল” তারাখসার মত মাটির পৃথিবীতে এসে পরে। “স্পেকটর” সিনেমায় মনিকা বালুচ্চির মত সেক্সী কুয়িন এর সামনে চুম্বনদ‌শ্যে আগের মতোই বন্ডকে সে হাজির করেছে। বন্ডের চরিত্র এ অনেকেই অভিনয় করেছে । বন্ডগার্লও এসেছে অনেক । আবেদনময়ী রহস্যময়ী নারী শরীর নিয়ে। তবু মনে হয় তেলতেলে কাগজের ম্যাগাজিনে প্রথম আলাপ হওয়া “ডক্টর নো” সিনেমার শন কনারি আর উরসুলা আড্রেস আর সবচেয়ে সবচেয়ে বেশী বন্ড হয়েছে সে অক্টোপুসির রজার মুর‌। আর এই ছবিতে দুজন ভারতীয়ও ছিল সেই দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সিনেমা। কবির বেদী ও বিজয় অমৃতরাজ । আর লিভ এন্ড লেড ডাই সিনেমায় রজার ম্যুর আর জেন সিমোর ।কিম্বা দ্য “স্পাই হুঁ ইস লাভ মি ” যেখানে রজার ম্যুর জেমস বন্ড ইস্পাতের দাঁত ওয়ালা ভিলেন জস । সুন্দরী গুপ্তচর ক্যরোলাইন‌ মুনরো । তখন শুধু মুগ্ধ চোখে জেমস বন্ড কে দেখা ।‌ আমি পিয়ার্স ব্রসনান এর থেকে হলে গিয়ে দেখা তার আগে এ মার্কা ব ই হলে গিয়ে দেখা চাপের ব্যপার ছিল শুনেছি অনেক পরীক্ষা দিতে হতো এডাল্ট হয়েছি কিনা!পরে জেনেছি এসব বানানো কথা।‌ জেমস বন্ড এর সিনেমার আরেকটি দিক হল থিম সং।ইউ অনলি লাইভ টয়াইস এর নেনসি সিনেট্রা কিম্বা না টাইম টু ভাইস কিম্বা দ্য ওয়ার্ল্ড ইস নট এনাফএর থিম সং। তখন বন্ডের ছবি পেলেই কেঁটে রাখছি । বলাবাহুল্য তখন তো মোবাইল ছিল না । এইটুকুই আমাদের প্রাপ্তি । আমার এক বন্ধুর বাবার কমন ডায়লক ছিল ছেলে নিজেকে কি ভেবেছেন জেমস বন্ড ! আর বলিউড এর প্রেম চোপড়া বন্ডের কায়দায় বলতে শুরু করল মেরা নাম হ্যায় প্রেম ,প্রেম চোপড়া।যাক সেকথা, অর্ধশতাব্দী পেরিয়েও জনপ্রিয়তার শীর্ষে ।শন কনারি সম্প্রতি চলে গেলেন উনিশশো‌ তেষট্টি তে বাঙালি কে মাত করে দেওয়া” ডক্টর নো” সিনেমার নায়ক। যেখানে দারুণ সেক্স এপিল নিয়ে সমূদ্র সৈকতে দাঁড়িয়ে গান চলছে “আন্ডার দ্য ম্যাঙ্গো ট্রি ” আর জল থেকে উঠে আসছে ক্ষিণতম বিকিনিতে উরসুলা আড্রেস। সেক্স আর ভায়োলেন্স এক মিশেলে যা থ্রিলার সিনেমার জন্য আদর্শ মনে করেছিল যারা তারা হয়ত ভুলেই গেছিল এর পিছনে ওই সিনেমার পেছনে আয়ান ফ্লেমিং গল্প ও উপন্যাস তিনি থ্রিলার কাহিনী তে যুগান্তর ঘটিয়েছিলেন।।‌১৯৫৩ সাথে বন্ড সিরিজের প্রথম বই টা ক্যাসিনো রয়াল‌।‌যদিও সিনেমায় একুশতম। ষাট বছর পরেও বিশ্বজুড়ে একভাবে সমাদৃত। জানতে ইচ্ছে করে এই বন্ড কি লেখকের কল্পনার ‌নায়ক না রক্তমাংসে‌ এর কোনো অস্তিত্ব আছে। জানতে ইচ্ছে করে না কোথা থেকে পেলেন এমন‌ সৃষ্টির রসদ।‌নিজের জীবনেই আসে লুকিয়ে আছে তার প্রেরণা আর জেমস বন্ড কে নিয়ে লিখে ফেললেন এগারোটা উপন্যাস ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখনও শেষ‌ হয়ে যাইনি।‌ নৌসেনার গুপ্তচর বিভাগের অফিসারটি বলেছিলেন এমন এক গুপ্তচর এর গল্প লিখব যা অন্যসব গুপ্তচরকে ছাপিয়ে যাবে । ‌কথা রেখেছিলেন আয়ান ফ্লেমিং ‌।আর বিশ্বজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছিল গুপ্তচর এর কীর্তিকলাপ নাড়িয়ে দিয়েছিল ।সবাই উৎসুক ছিল জানতে জিরো জিরো সেভেন কোডধারি গুপ্তচর এর আসল পরিচয়। কাল্পনিক চরিত্র না সত্যিই কোনো অস্তিত্ব আছে ! সম্প্রতি নথি বলছে জেমস বন্ড গল্প হলেও সত্যি । জানা যায় পশ্চিম লল্ডনের মহাফেজখানা থেকে পাওয়া কিছু ডকুমেন্ট নিয়ে কাঁটাছেড়া করছিলেন‌ তখন জানা হল‌ রায় ইয়ো টমাস কি নামের এক ব্রিটিশ গুপ্তচরের। জানতে পারেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এর সময় হয়াইট র্যাবিট‌‌ ছদ্মনামে কাজ করতেন‌। তার সঙ্গে এই জেমস বন্ড চরিত্রের অনেক মিল আছে । আবার কেউ কেউ বলেন এই বন্ড লেখকের মানসপুত্র । কেউ বলেন এটি লেখকের নিজের যে জীবনের ছায়া । যাইহোক জেমস বন্ড নিয়ে বলতে গেলে শেষ হয় না । ছয় দশক পরে বন্ড আজ ও মানুষের মনে সমান জায়গা নিয়ে আছে । শোনা যাচ্ছে বন্ড হিসাবে এবার এক মহিলা গুপ্তচর আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে যার‌ নাম নাকি শাহানা রশিদা লিঞ্জ । আপাতত সেই দিকেই তাকিয়ে থাকি আমি ও আমার মত বন্ড ভক্তরা।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।