ভ্রমণ সিরিজে শতদ্রু ঋক সেন – ২৩

তুমি ডাক দিয়েছ কোন সকালে 

বারোটা নাগাদ শ্রীনগরের হোটেল ঘরে ঢুকে সবে ফ্রেশ হতে যাবো, কানে এলো পুরোহিত মশাইয়ের হাঁক, ওহে ঋত্বিক, চলো বেরোই।
হ্যাঁ, এই রুমেও দেবনাথ দা আর পুরোহিত মশাই আমার পার্টনার। আমার ঋক নামকে পুরোহিত মশাই যে কোন খুশীতে ঋত্বিক বলে ডাকতেন, তা আজো বোধগম্য হয়নি। সে নাহয় হলো, কিন্তু অতো রাতে, তায় অচেনা জায়গা, উপরন্তু কাশ্মীর, উনি যেতে চাইছেন কোথায়?
খোলসা করলেন উনি নিজেই। ওনার মদ্যপান করার ইচ্ছা হয়েছে, তাই এতো রাতে উনি মদ কিনতে বেরোবেন। একাই যেতেন, রাস্তায় একবার আমি ওনাকে একটা ভদকা ককটেল এর রেসিপি বলায়, আমাকেও নিয়ে যেতে চান। নির্মল দা শুনতে পেয়ে এমন ঝাড় দিয়েছিলেন ওনাকে যে আর সেদিন ওনার বেরোনোর সাহস হয়নি। তবে পরবর্তীতে আমি শ্রীনগরেই ঐ ককটেল বানিয়ে খাইয়ে ছিলাম ওনাকে। খুব খুশী হয়ে আর একটু বেসামাল হয়ে আমাকে অনেক কিছু বলেছিলেন সেদিন। একটি হাসিখুশি মানুষ যে কতো বেদনা বুকে চেপে ঘোরে, তার জলজ্যান্ত উদাহরণ ছিলেন ঐ পুরোহিত ঠাকুর। কিন্তু সে অন্য দিনের গল্প। তবে এই মদ কেনা নিয়ে পরে একটি ঘটনা হয়েছিল, সেটা এই ফাঁকে বলে নিই।
কাশ্মীরে অমরনাথ যাত্রার সময় খুব কড়াকড়ি করে। ঐ সময়টা ৯৫ শতাংশ মদের দোকান বন্ধ থাকে। বাকি ৫ শতাংশের খোঁজ একমাত্র সেয়ানারাই জানে। আমাদের হোটেল ম্যানেজার ছিলো সেরকম এক সেয়ানা।আমরা যেখানে ছিলাম, তার পাশের হোটেলের বেসমেন্টে ঐসময় মদ বিক্রি হতো গোপনে। আমাকে সেটা ম্যানেজার চিনিয়ে দিয়েছিল। যা ২০১৬ সালে আমার উপকারে এসেছিল। সেবার লাদাখ থেকে ফেরার সময় আমি আর আমার দুই সঙ্গিনী, শ্রীনগর ডাল লেকের হাউসবোটে তিন রাত ছিলাম। সেটিও ছিলো অমরনাথ যাত্রার সময়। আমাদের তিন জনের বাই উঠেছিল মদ খাবার। আমি জল থেকে ডাঙায় উঠে অটো নিয়ে গেছিলাম সেই বেসমেন্টে। ফেরার সময় অটো ওয়ালা গালে হাত দিয়ে বলেছিল, ক্যা তাজ্জব কি বাত। হাম লোকাল আদমি, হামকো কোই খবর নেহি ইস ওয়াক্ত দারু কাঁহা মিলতা, আউর আপ কিতনি দূর সে আয়ে হ্যায়, আপকা পাশ সব ইনফরমেশন। আপ কাতিল চিজ হ্যায় জনাব। এটা প্রশংসা না শ্লেষ সেটা আজ অবধি বুঝতে পারিনি।
লাদাখ ভ্রমণ আপাতত ভবিষ্যতে থাক, ফিরে আসি ২০১১ সালে। ক্লান্ত শরীরে একটি দারুণ ঘুম দিয়ে পরদিন দলের এক কাকিমাকে সাথী করে আসি ডাল লেকের ধারে। উদ্দেশ্য, শিকারা ভ্রমণ।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।