এসো সোনার বরণ রাণী গো, শঙ্খ কমল করে, এসো মা লক্ষ্মী, বোসো মা লক্ষ্মী, থাকো মা লক্ষ্মী ঘরে… আজ কোজাগরী। জনহীন রাজপথ ভেসে যাচ্ছে পূর্ণিমার রোশনাইয়ে। এবার পুজো দুইদিন ব্যাপী। কোথাও আজ, কোথাও কাল। আমাদের বাড়ি আজ পূজা ছিলো। একটু আগে, প্রসাদ খেয়ে হাঁটতে বেরিয়ে ছিলাম। অধিকাংশ লোক জানেন যে আমি পটুয়া পাড়ায় থাকি। কাল যাঁদের বাড়ি পুজো, তাঁরা ভিড় করে ঠাকুর কিনছেন। বেশ লাগছিল দেখতে। মায়ের সুন্দর সুন্দর প্রতিমা মূহুর্তের মধ্যে বিক্রি হয়ে পূজিত হতে যাচ্ছে। দেখছি আর হাঁটছি। হঠাৎ করেই চোখ গেল আমার এক বন্ধুর স্টুডিওর সামনে এক চিলতে জায়গায়। ভাঙাচোরা এক প্রতিমা দাঁড়িয়ে রয়েছেন একাকী। তাঁর সামনে কোনো ক্রেতার ভিড় নেই, কেউ যে কিনবে না, সেটা দেখে বোঝাই যাচ্ছিল। স্টুডিও তে কাজ করে, এমন কারিগর কে ডেকে আমি জিগ্যেস করলাম.. কি ব্যাপার রে? এই মূর্তির এমন অবস্থা কেন? আরে বোলো না দাদা। জল লেগে নষ্ট হয়ে গেছে, তাই ফেলে রেখেছি। কেউ তো আর নেবে না।
মনটা হঠাৎই একটু ভার হয়ে গেল। এই মূর্তিটি যেন আমাদের সমাজের কিছু মেয়ের মূর্ত প্রতীক। অন্য সবার মতোই তারা একসাথে গড়ে উঠতে শুরু করে, কিন্তু কোনো পরিস্থিতি তে হয়তো তারা পিছিয়ে যায় সবার চোখে। মনে, কাজে লক্ষ্মী সরূপা হয়েও অনেকেই তাদের হেয় করে তাদের বহিঃরুপের জন্য । খুব করে মনে পড়ে গেলো আমার এক দিদির কথা। মিষ্টি দেখতে, তার উপর উচ্চশিক্ষিতা। কিন্তু বিয়ের পর ঘোরতর সংসারী। তার অধিকাংশ বান্ধবীরা যখন তার থেকেও কম কোয়ালিফাইড হয়েও প্রচুর রোজগার করে টাকা ওড়াচ্ছে, সে তখন মন দিয়ে সব ছেড়ে ঘরকন্না করছে। আমার কাছে গৃহলক্ষ্মীর প্রকৃত উদাহরণ সেই দিদিটাই। আবার আমার চেনা জানা অনেক জন আছে, যারা গুণে কিছু না হয়েও স্রেফ রূপ ও অভিনয়ের সৌজন্যে লোকের কাছে সন্মান পায়। সামনে তাদের সাজ দেখলে অনেকেই তাদের লক্ষ্মী প্রতিমা ভাবে, কিন্তু তারা নিজের পরিবারের পাশাপাশি অনেকের সংসার ধ্বংস করে দেয়। এরা কি অলক্ষ্মী নয়? ধারে ভারে এদের সংখ্যাই দিন দিন বেড়ে চলেছে। বাড়ি ফিরে, ঠাকুরঘরে দাঁড়ালাম।আসনে বসা মা যেন আমাকেই দেখছেন। মায়ের কাছে একমনে প্রার্থনা জানাই যেন মা সেই সন্মান না পাওয়া মেয়েদের সন্মান দেন, কারণ মা লক্ষ্মী তাদের মধ্যেই বিরাজ করেন, যাঁরা হৃদয়ে তাঁকে নিয়ে চলেন।