বালতাল ক্যাম্প ছাড়িয়ে দুলকি চালে চলেছি। এক কিলোমিটার মতো রাস্তা বেশ ভালোই। পূর্বের গোমুখ, যমুনোত্রী বা কেদারনাথ যাত্রার মতো রাস্তা হবে, তখনো ভাবছি। আশে পাশে যাত্রীরা চলেছেন। অবাক হয়ে দেখছি, অধিকাংশ যাত্রীদের পোশাক আশাক আর সরঞ্জাম কে। ধুতি, পাঞ্জাবী, তার উপর ধুসো কম্বল জড়ানো। হাতে লাঠি, বগলে পুঁটলি। পায়ে মোটা টায়ারের চপ্পল। ভাবি এরাই তো সত্যিকারের তীর্থ যাত্রী। আমাদের মতো হাজার একটা প্রোটেকশন নিয়ে আসেননি। মনে স্হির বিশ্বাস, ভগবান সব ব্যবস্থা করে রাখবেন। তাঁর কাছে যেতে গিয়ে যদি মৃত্যু হয় তো পরম সৌভাগ্য। তাঁরা তাই মনের সুখে চলেছেন। পাশ দিয়ে আমাদের ঘোড়া চলেছে। আমাদের দল এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়েছে। আমার সঙ্গে খালি শম্পা। ত্রিপুরার বাসিন্দা এই মেয়েটির সাথে আমার শুরু থেকেই দাদা বোনের সম্পর্ক। ওর মা মেয়ে আমার সাথে আছে দেখে নিশ্চিন্ত হয়ে ডুলি নিয়ে এগিয়ে গেছেন। আমরা গল্প করতে করতে চলেছি। দুই কিলোমিটার যাবার পর জঘন্য রাস্তা শুরু হলো। কাদা, জমা জল, পা পিছলে গেলে সোজা খাদে। আমাদের সহিস আবার আঙুল দিয়ে নীচে দেখান। দেখি নীচে কয়েকটি ঘোড়ার লাশ পড়ে আছে। কষ্ট আর ভয় দুই হয়। জিজ্ঞেস করি আচ্ছা এখানে রাস্তা সারাই করে না কেন? সহিস বলেন যে সারা বছর বরফে ঢাকা, এই মাস দুয়েকের জন্য রাস্তা খোলে। সারা বছর বরফ চাপা থেকে এমনিই রাস্তা বিগড়ে যাবে। তাছাড়া এদিকে আতঙ্কবাদীর ভয় ও আছে। ভালো রাস্তা তারা রাখতে দেবে না। মনে পড়ে কাগজে পড়া বেশ কিছুদিন আগের কথা। সেবছর অমরনাথ যাত্রায় হামলা চালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। অনেক নিরীহ যাত্রী শহীদ হয়েছিলেন। তাই এদিকে নিরাপত্তার খুব কড়াকড়ি। প্রতিটি মোড়ের বাঁকে এক জন করে সেনা জওয়ান মোতায়েন। ভয় ও কষ্ট মিলিয়ে চলতে থাকি। সাতটা বাজে। খিদে পায় কিন্তু কেন জানি না খেতে মন চায় না। আরো আধা ঘন্টা পরে একটি ধাবায় দাঁড়িয়ে পড়ি। চা, কয়েক পিস পাকৌরা আর একটি সিগারেট খেয়ে আবার ঘোড়ার দিকে যাই কিন্তু সহিস বাধা দেন। বলেন আব থোড়া পায়দল যানা পড়েগা। কেন? চুক্তি ছিলো পুরো অমরনাথ গুহার সামনে ঘোড়ার আস্তাবলে গিয়ে নামার। সহিস কোনো কথা না বলে সামনের দিকে আঙুল দেখান,যা দেখি, আক্কেল গুড়ুম হয়ে যায়।