T3 ।। কবিতা পার্বণ ।। বিশেষ সংখ্যায় শম্পা রায় বোস
by
·
Published
· Updated
রাধা দিদি –
তোমার জন্য আজও বসে আছি রাধাদিদি।
সেই যে পৌষ সংক্রান্তির দুপুরে, মিঠে রোদে চুল শুকোতে শুকোতে এক বয়েম কুলের আচার দেবে বলেছিলে?
চুলে বিলি কাটতে কাটতে কথা দিয়েছিলে,
ভোরের কুয়াশা দেখাবে, ঘাসের উপর ছোট্ট ছোট্ট শিশির বিন্দু দেখাবে,
খেজুর রসও খাওয়াবে।
খেজুর পাতা বেয়ে কিভাবে টপ টপ করে মাটিতে পড়ে যাওয়া রস,
ধরিত্রী মা পান করে খুশি হন,
তাও তো দেখাবে বলেছিলে।
সেই যে গেল বোশেখ মাসের দুপুরে আমার হাতে একটা নুন হলুদ মাখানো কাঁচা আম দিয়ে বলেছিলে,” তেলে আম মজে গেলেই তোমায় দিয়ে যাব মামনি। পান্তা ভাতে খেও”।
কই তুমি তো আর এলে না?
কত কথা বলার ছিল।
আচ্ছা তোমার বাড়ির সেই কাকাতুয়াটা আর কোনও নতুন কথা শিখেছিল?
আমেজ আলী চাচা এখনও কি শীতের ভোরে খেজুর রস নিয়ে আসে?
একবার ঘুম থেকে টেনে তুলে বাটি ভর্তি রস খাওয়াতে খাওয়াতে বলেছিলে,” খেয়ে নাও দিদিভাই। এমন টা আর কোত্থাও পাবে না।”
আমার কথা তোমার মনে না?
একবার রথের মেলায় আমাকে এক ডজন কাঁচের চুড়ি পরিয়ে বলেছিলে,” তোমার হাত দুটো একদম রাজকন্যের মতো।”
সেই চুড়ি গুলো এখন আর হাতে হয় না।
গরম পড়লেই
তুমি পলাশ ফুলের মালা গেঁথে আমায় সাজিয়ে দিতে সুন্দর করে।
আচ্ছা দিদি, পলাশ গাছটা এখনও ফুল দেয়?
নাকি সেও বুড়ো হয়ে গেছে তোমার মতো?
শেষ বার কোঁচড়ে করে ফুল এনে বলেছিলে, ” নাও গো মামনি দিদি পলাশ এনেছি তোমার জন্য।তুমিই গেঁথে নাও।চোখে দেখি না। বুড়ো হয়েছি তো?”
আমি ভিজে চোখে বলেছিলাম,” তোমায় আমি বুড়ো হতে দেব ই না।”
তুমি কি সত্যিই খুব বুড়ো হয়ে গেছ?
আজও আমি তোমার ই অপেক্ষায় রাধাদিদি।