কনকনে শীতের ভোরে জানালায় একটা ঠকঠক শব্দ শুনে মরিস ঘুম ভেঙ্গে বিছানায় উঠে বসল। চাঁদটা আজ চকচক করলেও তুষারবাবু চারপাশে সাদা রঙয়ের তুলি বুলিয়ে দেওয়ায় বাইরে কিছুই দেখা যায় না। বিছানা থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে মরিস ফিসফিস করে বলল, ‘ওখানে কে? ‘
একটা কন্ঠস্বর টুংটাং শব্দ করে বলে উঠল, ‘আমি। আমি লিটল নিউ ইয়ার। সবার জন্য আমি উপহার আনব শপথ করেছি। কিন্তু আমি এত ছোট যে সাহায্য করার জন্য কাউকে আমার প্রয়োজন। তুমি কি দয়া করে বাইরে আসতে পারবে? ‘
মরিস ভাবল, উফ্, যা ঠান্ডা। আমি বরং গরম বিছানাতেই ফিরে যাই ।ঠিক তক্ষুণি কাঁপতে থাকা মরিসের চিবুকটা তুষারবাবু তার বরফঠান্ডা তুলি দিয়ে ছুঁয়ে দিল। ‘ঠান্ডার কথা না ভেবে দয়া করে আমাকে সাহায্য করো ‘ ,কাকুতি করে বলে উঠল নিউ ইয়ার। মরিস আর কি করে,তাড়াতাড়ি জামাকাপড় পরে বাইরে এল। দেখে কি, ফুলো ফুলো লালচে গালের একটা ছোট ছেলে জিনিসে ঠাসা একটা ঠেলাগাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে। গাড়িটার একদিকে লেখা ‘ভালোবাসা ‘, অন্যদিকে ‘দয়া’।
দুজনে রাস্তা, পাহাড়ি পথ পার হয়ে একটা কুঁড়েঘরের সামনে পৌঁছল। মরিস বলল, ‘এ কি? এটা তো আমাদের বাড়ির কাজের লোক বুড়ো জো-র বাড়ি। ও তো একাই থাকে, ছেলেমেয়ে কেউ নেই। ‘
‘ওর সাহায্য দরকার। বড়দের জন্যও ছোটদের মতো করে ভাবার দরকার। তুমি বরফ সরিয়ে রাস্তা তৈরি করো। ‘
ছোট্ট দুটো হাত ব্যস্ত হয়ে পরল, সাজাতে থাকল গরম জামা, কাঠ আর সুস্বাদু খাবার।
হো হো, আমি হলাম নতুন বছর /নেচে নেচে আসি বরফের ওপর /টুংটাং বাজাই হাতে ধরা ঘন্টা /দরজা খোলো ,খুশি হবে মনটা।
বুড়ো জো বাইরে আওয়াজ শুনে দরজা খুলে দেখে কত্ত উপহার। তার গাল বেয়ে চোখের জল গড়িয়ে পরল। বিড়বিড় করে সে বলতে লাগল -‘ প্রিয় ভগবান আমার দরজায় এসেছিলেন আজ রাতে ।’
পাহাড় থেকে নামতে নামতে মরিস জানতে চাইল, ‘এখন কোথায় যাচ্ছি? ‘ উত্তর এল, ‘একটি গরীব অসুস্থ মেয়েকে ফুল দিতে। ‘ঠিক তখনই তারা একটা ছোট সাদা বাড়ির সামনে এসে পৌঁছল। মরিস চেঁচিয়ে ওঠে, ‘এটাতে তো দরজি বেসি থাকে। আমি তো জানতাম না যে ওর শরীর খারাপ। ‘ নিউ ইয়ার অল্প খোলা জানালার ফাঁক দিয়ে গোলাপী ফুলের তোড়া ছুঁড়ে দিল। তারা ভাবল, ঘুম ভেঙ্গে ফুল পেয়ে অনেক অনেকদিন খুশি থাকবে বেসি ।
তারপর তারা নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে সবাইকে উপহার দিল। মরিস একবার বলল -‘কি সুন্দর তোমার গাড়ি। যতই নাও, ফুরোয় না।’
‘ঠিক বলেছ। ভালোবাসা আর দয়ার কোনো শেষ নেই। যতক্ষণ না সাহায্য করার মতো মানুষদের অভাব হবে ততদিন এগুলোও অন্তহীন। রোজ যদি এভাবে সবার পাশে থাকতে পারো, সারাবছর খুশি থাকবে। ‘
‘হ্যাপি নিউ ইয়ার, মরিস সোনা ‘- কারো গলা শুনে চমকে বিছানায় উঠে বসল মরিস। দেখল তার দিদি দরজায় দাঁড়িয়ে হাসিমুখে, ‘সুন্দর স্বপ্ন দেখছিলে মরিস? ‘
‘লিটল নিউ ইয়ার কোথায় গেল? এক্ষুনি তো আমার সঙ্গে ছিল এখানে। ‘
‘ তুমি মার ঘরে এসো। দেখো মা কি এনেছে তোমার জন্য। ‘
ছুট্টে গিয়ে মরিস দেখল ধবধবে সাদা দোলনায় পুতুলের মতো একটা ছোট ভাই। খুশিতে মন ভরে গেল মরিসের।
মরিস কিন্ত স্বপ্নটাকে ভোলেনি। বুড়ো জো আর বেসি তাদের উপহার পেল আর সবাইকে সাধ্যমতো সাহায্য করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করল মরিস, ওর বন্ধুরাও খুব খুশি হলো।
হ্যাপি নিউ ইয়ার এলো যে।।