হৈচৈ ছোটদের গল্পে সুদীপ্ত পারিয়াল

সুধীরবাবুর পান্ডুলিপি

রণদার ইদানিং একটা নতুন শখ হয়েছে। অবশ্যই নিছক ‘শখ’ বললে ভুল হবে। ওটা ওর বিচিত্র কর্মকাণ্ডেরই একটা। আমি যখন প্রথম বললাম, এই বিষয়টা নিয়ে আমি এবারের গল্প লিখব, ও খুব একটা খুশি হল না। আত্মপ্রচার বা ওকে নিয়ে বাড়াবাড়ি ও পছন্দ করে না। কিন্তু এবারের ঘটনাটা অত লুকিয়ে-চুরিয়ে, নাম বদল করে লেখা সম্ভব নয়। তা করলে তোমাদের সাথে অন্যায় করা হবে। সত্যি কথা বলতে কি, লেখাটা যখন শুরু করছি, তখন আমি নিজেও জানি না যে এর শেষ ঠিক কোথায়? অবশ্য গল্প লিখিয়েদের পক্ষে এটা ভালো। সেদিন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের একটা সাক্ষাৎকার শুনলাম। উনি বলছেন, গল্প লেখার আগেই তার শেষটা জেনে নিলে সে গল্পের মজা থাকে না। পাঠক যেমন গল্প পড়তে পড়তে উৎসাহ নিয়ে গল্পের ক্লাইম্যাক্স-এ যায়, লেখককেও তা করতে হবে। অবশ্য একটা অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রের গদ্য, গল্পকারের গদ্যের মতো হবে না। তার থেকেও বড় কথা আমি গল্প লিখি না, যা ঘটে যা দেখি তাই তোমাদের কাছে আমার মতন করে প্রকাশ করার চেষ্টা করি।
যাই হোক, মূল ঘটনায় ফিরি। রণদা পথনাটিকার একটা দল তৈরি করেছে। সেখানে ওর বন্ধুরা তো আছেই। পাশাপাশি আমিও মাঝেমধ্যে দুটো একটা পার্ট করি। নাটকগুলো মূলত সমাজ-সচেতনতা বিষয়ক। যেরকম সমাজে অত্যধিক পরিমাণে ইন্টারনেটের ব্যবহার, অতিরিক্ত মাদকাসক্তি ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়ে। কিন্তু সেই ঘটনার সূত্রেই যে এত বড় একটা ঘটনা আমাদের সাথে ঘটে যাবে, আমরা কল্পনাও করিনি।
আসলে নাটকের প্লট রণদা বেছে দিলেও, কাহিনী ও নাট্যরূপ প্রদান করেন আমাদের স্কুলের বাংলার শিক্ষক সুধীর দাস। এই কাহিনীতে ওনার যে বিস্তর ক্ষতি হয়েছে সেটা আগেই বলে রাখা ভালো। গত মাসে ‘জল বাঁচাও’ বিষয়ক একটা নাটকে আমাদের অনেকগুলো অভিনয় করতে হয়েছে। সুধীর স্যার আমাদের কলকাতা-হাওড়া-হুগলি ইত্যাদি জেলাতেও নিয়ে গিয়ে অভিনয় করিয়েছেন। সকালে আমরা ওনার বাড়িতে গিয়ে শুনি রিহার্সাল হবে না। স্যারের নাকি শরীর খারাপ। স্যারের বাড়িতে ওনার স্ত্রী, ওনার মেয়ে আর ওনার এক শ্যালিকার ছেলে থাকেন। ছেলেটি এক বছর আগে চাকরি পেয়েছেন। ওনার নাম সুমন সেন। তিনি আমাদের বললেন আজ রিহার্সাল করা সম্ভব না। স্যারের মেয়ে পারিজাৎ আমাদের ক্লাসেই পড়ে। সে এসে বলল, রণদা বাকিরা ফিরে যাক, তুমি থাকো, তোমার সাথে বাপি একটু কথা বলবে।
আমি ব্যস্ত হয়ে বললাম, আমিও থাকতে পারবো তো?
-তুইও থাকবি! তবে থাক।তোরা বস। বাপি একটু বাদে আসছে। চা খাবে তো রণদা?
-চিনি ছাড়া লিকার।
-তোমরা বসো।
সুমনবাবু কিন্তু এখনও দাঁড়িয়ে। আমাদের বাকি ছেলেগুলো চলে গেলেও, সুজনদাদা গেল না। নাটকে ও অভিনয় করতে চায় না। তবে অভিনয় ছাড়াও তো নাটকে অনেক কাজ থাকে। সেগুলো সুজনদাদা নিঃস্বার্থভাবে করে। রণদার থেকে দু বছরের বড় ও, পড়াশোনা সেই কোন কালে ছেড়ে দিয়েছে, তবুও রণদাকে সে ভালবাসে। আমাদের প্রায় সব অ্যাডভেঞ্চারে ওকে ছাড়া যেন আমাদেরও চলে না। সুজন মাঝি রইল আমাদের সাথে। একটু পরে জ্যাঠাইমা মানে স্যারের স্ত্রী, আমাদের জন্য চা (রণদার চিনি ছাড়া লিকার) ও রকমারি বিস্কুট ও চিপস নিয়ে এলেন।
ও তোমাদের তো বলাই হয়নি, রণদা এখন জিমে ভর্তি হয়েছে। মাত্র চার মাস জিম করেই ওর এমন সুঠাম চেহারা হয়েছে, যে অনেক বডি বিল্ডাররাও ইর্ষার চোখে ওকে দেখতে বাধ্য। তারপর কতগুলো বাঁশের টুকরো দিয়ে আমাদের মাঠেই ও একটা ওপেন জিম খুলেছে। গ্রামের ছেলেরা সেখানে গিয়ে জিম করে। রণদা বিশ্বাস করে শরীরচর্চা করলে খাওয়া-দাওয়ার ওপরেও বেশ সংযম রাখা আবশ্যক। তাই তৈলাক্ত খাবার বা ফাস্টফুড ও প্রায় ছেড়ে দিয়েছে বললেই চলে। তবে মাঝেমধ্যে মা ঘরে ওকে কম তেলে বিরিয়ানি করে দেয়। মাছ মাংস খুব একটা খায় না ও। সবজি ও ফল খায়। মাংস যদিও ট্রেনার রোজ খেতে বলেছে, কিন্তু ও খায় না।
আমরা তিনজনে নাটক নিয়েই কথাবার্তা বলছি। সুমনবাবু এর মধ্যেই কখন যেন ঘর থেকে চলে গেছেন। সুধীর স্যার ঘরে এলেন গায়ে একটা চাদর জড়িয়ে, ওনার বয়স খুব বেশি না। গুরুজির থেকে অনেক ছোট। দেখে যেন অনেক বৃদ্ধ মনে হচ্ছে আজ। দাড়ি কামাননি, চুল উসকো খুসকো। চোখ দেখে মনে হল, রাতে ঘুম হয়নি। স্যার বসলেন আমাদের সামনের চেয়ারে।
রণদা বলল, আপনার শরীর তো বেশ খারাপ মনে হচ্ছে!
-শরীরের আর দোষ কি বলো? যা সব ঝক্কি পোহাতে হচ্ছে।
-কেন স্যার, কি হল?
-নিত্যবাবু, মানে তোমার বাবা তোমায় কিছু বলেননি ?
-না তো।
-পরশু স্কুল ফান্ড থেকে প্রায় ৫০ হাজার টাকা চুরি হয়ে গেছে!
-সে কি! রণদা আঁতকে উঠল। গুরুজি আমাদের এসব কথা না বললেও আমার নিজের কেন জানি না দুদিন ধরে ওকে দেখে মনে হচ্ছিল, কিছু একটা বিষয় নিয়ে উনি খুব চিন্তিত।
স্যার বললেন, স্কুলে মাস্টার বলতে তো সব মিলিয়ে এখন ১২ জন। তার মধ্যে আবার তিনজন অশিক্ষক কর্মী। ক্যাশ সামলানোর দায় প্রবীরবাবুরই ছিল। গত মাসে উনি রিটায়ার করার পর আমি আর সুদর্শন দেখছি, যতদিন না সরকার থেকে লোক আসে, আর সরকারি কাজ বুঝতেই পারছ, আমরা কেউই জানি না কবে নতুন শিক্ষাকর্মী আসবেন। কোনও প্রয়োজনে যদি কেউ  টাকা তুলতে যায়, তাহলে উইথড্রল স্লিপে আমার অথবা সুদর্শনের সই লাগবে। কিন্তু আমরা কেউই সই করিনি। পুলিশও ব্যাপারটা নিয়ে বেশ ভাবছে, ওদিকে আরেক কান্ড, স্লিপে নাকি আমারই সই পাওয়া গেছে, কিন্তু বিশ্বাস করো রণবীর, আমি সই করিনি! আর নকল সই করে টাকা তুলবে এমন কাউকে তো সন্দেহ হয় না। নেহাৎ নিত্যবাবু আমায় বিশ্বাস করেন, তাই উনি তদন্ত করে বিষয়টা দেখতে পুলিশে খবর দেন। সেক্রেটারি বিনয়বাবুও আমার দীর্ঘদিনের পরিচিত। উনিও বিশ্বাস করেন আমাকে। নইলে এই কলঙ্ক সহ্য করা যায় না। আসলে রণবীর, আমি জানতাম, তোমার বাবা তোমায় সব জানিয়েছিলেন। তাই একটু তোমার সাথে কথা বলার ছিল।
-মূল সমস্যা কি এটাই?
রনদা এ কথাটা কেন বলল কে জানে!
-কেন বল তো?
-না মনে হচ্ছে আপনি কোন এক বিষয় নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই রাত যাচ্ছেন, পরশু অর্থাৎ চুরির দিন, আপনি ক্লাস করাতে করাতে রাজশেখর বসুর মহাভারত পড়ছিলেন, আর তখন আপনার চোখ লেগে আসছিল।
সুধীর স্যার হেসে বললেন, ওটা আমার আরেকটা ক্ষ্যাপামি বলতে পারো! … মুহূর্তের মধ্যে আবার ম্লান হয়ে গেল ওনার মুখ… কিন্তু সে ক্ষ্যাপামোটা ঠিকঠাক করার আগেই সব ভন্ডুল হয়ে গেল!
-সেই ব্যাপারটা নিয়েও কি আপনি কিছু আমায় বলতে চান?
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্যার বললেন, যা গেছে সে নিয়ে ভেবে কি হবে? তবু বলে যদি শান্তি পাই, তাই আর কি!
-বলুন না, শুনতেও আমাদের ভালো লাগবে।
-ভাবছিলাম, তোমাদের পরের নাটকটা মহাভারতের কোন একটা ছোট্ট অংশ বেছে নিয়ে যদি করা যেত! অবশ্য সেটা শুধু ভেবেছিলাম, কিন্তু দুঃখের বিষয়… উনি আবার আনমনা হয়ে আমাদের বললেন, উপেন্দ্রকিশোরের ‘ছেলেদের মহাভারলল’,‘ছেলেদের রামায়ণ’ তোমরা নিশ্চয়ই পড়েছ?
রণদা পড়ে থাকতে পারে। তবে আমি পড়তে শুরু করলেও খুব বেশি দূর এগোতে পারিনি। সত্যি বলতে কি আমার ধৈর্য একদম কম।
… আমি ভেবেছিলাম, ছোটদের জন্য আরও একটু সহজ করে যদি মহাভারতটা লেখা যায়, এমনিতেই তো পুরাণ চর্চা এখন সেভাবে কেউই করে না। পাণ্ডুলিপি শেষও করে ফেলেছি। শুধু একটু কারেকশন করছিলাম। কিন্তু গত পরশু আমার বাড়ি থেকে সেটাও চুরি হয়ে গেছে। দুঃখের বিষয় কি জানো, যদি প্রতিভা থাকে আমি আবার নতুন করে লিখতে পারব, কিন্তু যে দরদ দিয়ে লেখা শুরু করেছিলাম সেই উৎসাহ আর খুঁজে পাচ্ছি না। আধুনিক লেখকদের মতন মূল পাণ্ডুলিপিটার কোন প্রতিলিপিও আমি করে রাখিনি।
আমরা সত্যিই নিরাশ হলাম। একবার আমার সাথেও এমন একটা ঘটনা ঘটেছিল। প্রথমবার যখন কাপালিক কাণ্ডে রণদা আমায় বাঁচাল, ঘটনা খানিকটা গল্পের ধাঁচে লিখে আমাদের স্কুল ম্যাগাজিনের শ্রেষ্ঠ গল্পের পুরস্কার পেয়েছিলাম। কিন্তু সেই মূল লেখাটা, বা সৌজন্য সংখ্যাটা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। অনেকের কাছে খুঁজেও সেটা আর পাইনি। আর সব থেকে আশ্চর্যের বিষয়, স্কুলেও ওই ম্যাগাজিনের আর একটিও অবশিষ্ট নেই। এখন তোমরা কাপালিক কান্ডের যে গল্পটা পড়ো, ‘রণ কুনাল কথা’ শিরোনামে সেটা অনেক পরে আমি লিখেছি।
রণদা সুধীর স্যারকে বলল, স্যার আপনার কি কাউকে সন্দেহ হচ্ছে?
-সন্দেহ আর কাকে করব? সবাই তো আপন। এই ব্যাপারটা নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না বাবা! যদি পারো স্কুলের ওই চুরির ব্যাপারটা একটু দেখো! যদিও জানি না নিত্যবাবুর অমতে তোমায় কথাটা বলে আমি কোন অন্যায় করলাম কিনা! উনিও ব্যাপারটা নিয়ে খুব চিন্তায় আছেন! আর আমার এই কলঙ্ক, তার কথা নাই বা বললাম!
সুদর্শন দত্ত বনিককে তোমাদের মনে আছে কি! রণদার গোয়েন্দা জীবনের একদম শুরুর দিকে ওঁর বাড়িতে গিয়ে আমরা একটা অদ্ভূত রহস্যে জড়িয়ে পড়েছিলাম। সুধীর স্যারের বাড়ি থেকে বেরিয়েই আমরা সুদর্শন মাস্টারমশাইয়ের বাড়ি গেলাম। গত বছর মাস্টারমশাই বিয়ে করেছেন। ওনার স্ত্রী অন্তরাদিদি আমাদের খুব ভালোবাসেন। আমরা ওঁদের বিয়ের সময় আরও একবার আমতায় ওঁদের দেশের বাড়ি গিয়েছিলাম। ওনার ঠাকুরদা দেবকান্তবাবু আমাদের খুব আদর যত্ন করেছিলেন। অন্তরাদিদি গ্রামের বাড়িতেই থাকেন। তবে এখন দাদুভাইয়ের কাছে গেছেন। ওখানে কাছাকাছি দিদির বাপের বাড়ি।
মাস্টারমশাই বললেন, কি করে যে এসব হল কিছুই বুঝতে পারছি না রণবাবু!
-আপনার কাউকে সন্দেহ হয়?
-স্কুলের কেউ নয় এটুকু বলতে পারি, অবশ্য তাই বা জোর দিয়ে বলি কি করে। আজকের দিনে মানুষ চেনা বড়ই দায়। তবে একটা বিষয় নিয়ে কিন্তু আমার সন্দেহ আছে।
-কি?
-সুধীর বাবুর শ্যালিকার ছেলেটি গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রায়ই স্কুলে যাতায়াত করত, মাঝেমধ্যে প্রচুর ঝগড়া করত ওনার মেসোমশাইয়ের সঙ্গে।
-কি ব্যাপারে?
-তা বলতে পারব না। বোঝা যেত না। শুধু উত্তেজিতভাবে ওদের কথা বলতে শুনেছি।
-তবে তার তো কোনো প্রমাণ নেই।
-না তা নেই।
-ঠিক আছে আজ উঠি।
সারাটা দিন আমাদের বেশ উৎকণ্ঠার মধ্যে দিয়েই কাটল। খাওয়া দাওয়াও তেমন ভালো হলো না। এমনকি রাতে আমি বিছানায় শোয়ার পরেও দেখলাম, রণদা ওর খাতায় কি সব যেন লিখছে!
রহস্য এখানে দুটো, স্কুলের টাকা চুরি ও সুধীর স্যারের পান্ডুলিপি চুরি। বাড়িতে এসে গুরুজির সঙ্গেও রণদা এই বিষয় নিয়ে অনেকক্ষণ কথা বলেছে। গুরুজিও পরিষ্কার করে কিছুই বলতে পারছে না। শুধু বলল, তোমাদের এ সমস্ত ঝামেলার মধ্যে জড়াবার দরকার নেই বাবা! পুলিশ আছে তো।
গুরুজির কথা রণদা শুনবে কি! কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না। ঘুম ভাঙল রণদার  ঠেলায়।
-চটপট ওঠ কুনাল, সুধীর স্যার খুন হয়েছেন। এক্ষুনি যেতে হবে।
সুধীর স্যারের মৃত্যুটা আমাদের কাছে একদম অপ্রত্যাশিত। ভাবতেই কেমন যেন একটা লাগছে কাল যার সাথে অতগুলো কথা বলে গেলাম আজ সে আর নেই। তবে রণদা আমায় বলেছে এই ঘটনার কথা লেখার সময় আবেগ যেন না চলে আসে! কিন্তু তা বলে এটাও যে একদম মেনে নেওয়া যায় না! কিন্তু এই রহস্যের সাথে আমরা এমন ভাবে জড়িয়ে পড়েছিলাম, যে আবেগ চলে আসা বাধ্য।
আমরা গিয়ে দেখি সুজনদাদা, গোপালদাদারা সবাই কান্নাকাটি করছে। রণদা বলল, কান্নার সময় এখন নেই। তোমরা বাবাকে দেখেছ?
গুরুজি সকালবেলায় মৃত্যুসংবাদটা পেয়েই চলে এসেছিল। গুরুজি আমাদের বীরপুর থানার এস.আই সমর মন্ডলের সাথে কথা বলছে। আমাদের দেখে ব্যস্ত হয়ে বলল, রণ, বাপ আমার! তুই এতদিন যা যা কেস নিয়েছিস, আমরা তাতে কিছুই বলিনি। কিন্তু এটা খুব সিরিয়াস একটা কেস বাবা!
-তাতে কি? তুমি আমায় ভীতু ভাবো?
-না বাবা, তুই যে ভীতু নয়, সেটাই তো আমার সবচাইতে বড় দুশ্চিন্তা।
-চিন্তা করো না। আর ভয় পাবারও কোন কারণ নেই। যারা অন্যায় করে তারাই ভয় পায়।
গুরুজি বেশি কিছু আর বলতে পারল না। কারণ গুরুজি জানে, রণদা যখন ঠিক করেছে,  এই কেসে ও নাক গলাবেই।
আমাকে গুরুজি ভেতরে যেতে দিল না। রণদা সমরবাবুর সাথে গেল। পরে ওর মুখে যা শুনেছি তা থেকেই জেনেছি, স্যার অনেক রাত অবধি বসবার ঘরে বইপত্র নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। জ্যাঠাইমা আর পারিজাৎ ঘুমিয়ে পড়েছিল। সুমনবাবু নাকি বাড়ি ছিলেন না। এমনটা প্রায়ই হত, তিনি কলকাতায় নিজের বাড়ি যেতেন, পরদিন সকালের মধ্যেই ফিরে আসতেন। সকালে উনি ফিরতেই জ্যাঠাইমা ওনাকে বলেন, সবাইকে খবর দিতে। বসবার ঘরে চোখ উল্টে মাটিতে উপুর হয়ে পড়ে ছিলেন সুধীর স্যার। সম্ভবত গলায় ফাঁস দিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই কোন দড়ি বা কোন প্রমাণ আততায়ী রেখে যায়নি। রণদা খুব চিন্তা নিয়ে বলল, খুনি অত্যন্ত চালাকি করেছে রে! এবং একটা সুপরিকল্পনা অনেক আগে থেকেই করে রেখেছে।
সমরবাবু বললেন, তোমরা তোমাদের মতন তদন্ত চালাও। বডি আপাতত পোস্টমর্টেমে চলে যাচ্ছে। তারপর দেখো কি করা যায়!
-বইগুলোর এবং ঘরের প্রতিটা জিনিসের একটা ফরেনসিক টেস্ট হবে নিশ্চয়ই।
-তা তো হবেই। কোন মোটিভ নেই অথচ খুন! এ ব্যাপারটাই তো মাথায় ঢুকছে না। এখন তো মনে হচ্ছে স্কুলের টাকা চুরির ব্যাপারটাতেও ভদ্রলোক জড়িয়ে ছিলেন।
-সেটার তদন্ত তো আপনারা চালাচ্ছেন। তবে প্রমাণ ছাড়া কাউকে দোষ দেওয়াটা উচিৎ নয়। আর আপনি খুনের মোটিভের কথা বলছিলেন না, যদি মোটিভ একটা বহুমূল্য অপ্রকাশিত বইয়ের পান্ডুলিপি হয়!
-মানে?
রণদা সুধীর দাসের পান্ডুলিপি হারানো ব্যাপারটা ভদ্রলোককে বলল। তা শুনে ভদ্রলোক বললেন, কিন্তু সেটা তো অলরেডি চুরি হয়ে গেছে বলে বলছ? আর এই ব্যাপারটা তো কেউ জানেও না।
-এমনটাও তো হতে পারে। চোর সমেত ভদ্রলোক সেটা ফেরত পেয়েছিল। তারপরেই আততায়ী আর কোন উপায় না দেখে খুনটা করে।
-বেশ তো, তুমি দ্যাখো তাহলে এই দিকটা। ওদিকে ভদ্রলোক আর একটা কেসে জড়িয়ে ছিলেন শুনেছ নিশ্চয়ই।
-আবার কোন কেস?
-ভদ্রলোকদের আগে বেশ কয়েকটা ঐতিহাসিক তথ্যসমৃদ্ধ বই লিখেছিলেন, তবে দু’বছর আগে একটা পাঠ্যবই লিখে ভালই রয়্যালিটি পেতেন। সে টাকাটাও আটকে গেছে।
-কেন?
-কারণ আসল লেখক নাকি উনি নন, উনি তথ্য ও লেখা চুরি করেছিলেন হরিদেবপুরের রামলোচন মিত্র-এর কাজ থেকে।
-মানে কপিরাইট কেস বলছেন! কিন্তু রামলোচন মিত্র তো তার জীবিত নেই।
-তা নাই থাক। ওনার ছেলে তো রয়্যালিটি পাচ্ছে।তাই তো সুধীরবাবুর নামে দুটো জিডি করেছিল থানাতে। ওনার ছেলের নাম সুশান্ত মিত্র।
সত্যি কথা বলতে কেসটা এখন এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে। আমি নিজেও জানি না এর পরে রণদা ঠিক কি করবে?
সুদর্শন মাস্টারমশাইকে দেখতে পেয়ে ও ওনার কাছে গেল। স্বাভাবিকভাবেই মাস্টারমশাইও দারুণভাবে বিমর্ষ।
-মাস্টারমশাই আপনি জানতেন, ওনার রয়্যালিটি আটকে গেছিল?
-আমাদের দেশে ক’জন আর ঠিকঠাক রয়্যালিটি পায় বল? এখন তো সব সখের লেখক! কি পাগল লেখক! তবে এরই জন্য মৃত্যু হতে পারে সেটা যেন ঠিক বিশ্বাস হয় না। তুমি কি এখনই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করবে।
-আপনাকে দিয়েই শুরু করা যাক। বাড়ির লোকজনদের এখন যা অবস্থা, পুলিশের জেরায় ওরা এখন নাজেহাল! ওদের পরে করব।
-পুলিশের জেরা অবশ্য আমারও হয়েছে, এখনও বোধহয় আরও বাকি আছে। বেশ তুমি শুরু করো।
-আপনি কালই বলছিলেন, ওনার শ্যালিকার ছেলে সুমন প্রায় স্কুলে যেতেন। কিন্তু স্কুল টাইমে বাইরের লোক ঢুকতেন কি করে? আমি যতদূর জানি, আমাদের স্কুলে এমন কোনও নিয়ম নেই।
-তা নেই। তবে নিয়ম ভাঙতে কতক্ষণ?
-মানে নিয়ম ভাঙা প্রায়ই হত?
-সবার ক্ষেত্রে এমনটা হত না। তবে নিত্যবাবু যখন থাকতেন না, তখন প্রায়ই এটা হত।
-সুমনবাবু ছাড়া আর কে আসত?
-হরিবাবুর বাড়ি থেকে একজন প্রায়ই আসে। গতকালও এসেছিল।
হরিপদ দত্ত আমাদের অঙ্কের মাস্টারমশাই। রণদা যদিও এখন স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র। তবে মাস্টারমশাইদের সবাইকে ও চেনে। ওনারাও সবাই রণদাকে বেশ ভালোবাসে।
মাস্টারমশাই বললেন, যে ভদ্রলোক আসেন, তাকে দেখে হরিবাবুর বন্ধুস্থানীয় বলে তো মনে হয় না। তবে ওনার সঠিক পরিচয় আমিও ঠিক জানি না।
-ওনারাও কি ঝগড়া করতেন?
-না, ভদ্রলোকের গলার স্বরই আমি কোনদিন শুনিনি। কি সব যেন আস্তে আস্তে কথা বলতেন, তারপরেই চলে যেতেন।
-কি কথা হত শোনেননি নিশ্চয়ই।
-না। ওনার আসার কোন নির্দিষ্ট সময় ছিল না। দেখে মনে হতো উনি স্কুলেরই প্রাক্তন ছাত্র।
-উনিও কি বাবা না থাকাকালীনই আসতেন?
-হরিবাবু একেকদিন খুব তাড়াতাড়ি স্কুলে যেতেন।একেকদিন অনেক দেরি করে বেরোতেন, তখনই আমি বুঝতাম আজ ভদ্রলোক আসতে পারে। তবে নিত্যবাবু থাকাকালীন আসতেন কিনা ঠিক মনে পড়ছে না।
-আর কেউ?
-শুভ্রা দিদিমণির বাড়ি থেকে একটা ছেলে খাবার দিতে আসে, তবে সে গেট থেকেই ফিরে যায়।
-তার মানে আপনি বলতে চান সন্দেহভাজন বলতে শুধু সুমনবাবু?
-তা নিশ্চিত করে বলি কি করে বল? এমনও হতে পারে ছেলেটির কথা বলার ধরনটাই অমন।
এটা অবশ্য আমিও জানি। আমি নিজেও লক্ষ্য করেছি সুমনবাবু বয়সের তুলনায় একটু বেশিই বেরসিক। সব থেকে বড় কথা উনি ছোটদের সাথেও রূঢ় ভাবে কথা বলেন! ঠাম্মি বলে, কোন সুস্থ মানুষ ছোটদের সাথে ওভাবে কথা বলে না কখনও।
রণদা বলল, আপনি খুনের ব্যাপারে কাউকে সন্দেহ করেন?
-কি জানি ভাই? আমার তো কিছুই মাথায় ঢুকছে না। নিরীহ কাজপাগল লোকের কোন শত্রু থাকতে পারে বলে তো মনে হয় না।
আমরা ঠিক করলাম আজ বিকেলের দিকে নতুবা কাল সকালের দিকে আসবো সুধীর স্যারের বাড়ি। কারণ ওখানে এখনও প্রচুর লোকজনের ভিড়।
সুজনদাদা একটা অদ্ভুত প্রশ্ন করল রণদাকে, আর তাতে রণদা যা উত্তর দিল তা শুনে আমার মাথা ঘুরে গেল।
-রণভাই তুমি কি হেডমাস্টারবাবুকেও জেরা করবে?
-অবশ্যই, সুজনদাদা, একটা জিনিস লক্ষ্য করেছ কি! এই কেসের দুটো দিকেই কিন্তু বাবার দায় অনেকটা। প্রথমটা টাকা চুরি, এবং বাবার অনুপস্থিতিতে স্কুলে বহিরাগতদের আসা-যাওয়া।আর দ্বিতীয়টা খুন। বাবা কিন্তু খুনের ব্যাপারে সুযোগও ছিল। মোটিভও ছিল। পান্ডুলিপিটা বাবার কাছে থাকলেও কিছুই আশ্চর্য হব না। কারন এমন একটা তথ্যসমৃদ্ধ কিশোরদের উপযোগী রচনা এই যুগে সত্যিই বিরল।
গুরুজির মতন ভালো মানুষকেও রণদা সন্দেহ করছে। এটা ভালো লাগল না। আমি সেটা নরম করে ওকে বলতে ও বলল, শোন কুনাল, তোর যদি ইমোশন এত উঠলে ওঠে, তুই ঘরে গিয়ে রেস্ট নে। আমি একাই সামলে নেব।
-তা বলিনি। কিন্তু রয়্যালিটির ব্যাপারটায় গুরুজি কি করবেন? এটা তো বিশ্বাস করো, সেই লোভ ওনার থাকতে পারে না।
-তার জন্যই তো কথা বলতে হবে।
একবার ভেবেছিলাম গুরুজীর বয়ান নেওয়ার সময় আমি থাকব না। কারণ অমন নিপাট ভালো মানুষটার হেনস্থা আমি সহ্য করতে পারব না। কিন্তু পরে ভাবলাম হয়তো গুরুজির কোন কথার সূত্র ধরেই আমরা কেসটায় এগিয়ে যেতে পারব।
রণদা বলল, তোমার অনুপস্থিতিতে স্কুলে বাইরের লোক ঢুকছে তুমি সেটা বুঝতে পারোনি?
-বাইরের লোক বলতে সুমন আর শুভ্রা দিদিমণির বাড়ির চাকর।
-আর হরিবাবুর সাথে যে দেখা করতে আসত?
-সেটা তো আমি জানি না বাবা!
-তা বললে কি করে হবে?
-বাবা, স্কুলের যে টাকা গেছে সে নিজের পকেট থেকে আমি দিয়ে দেব। কিন্তু সুধীর স্যারের খুনি কে সেটা জানা খুব দরকার।
-বাবা, তুমি তোমার স্কুলকে ডোনেশন দিতেই পারো। কিন্তু তাহলে চোর ধরা পড়বে তো?
গুরুজি বলল, তাহলে কি করব বলো?
-তোমার কাউকে সন্দেহ হয় বাবা?
-এ গ্রামে এর আগে এমন কখনও ঘটেনি বাবা, কিন্তু একটা বিষয় কিন্তু আমি সুধীর স্যারের মৃত্যুর পর জানলাম। রয়্যালিটির ব্যাপারটা।
-সুধীর স্যার অন্য কারোর কপিরাইট চুরি করতে পারে এটা তুমি বিশ্বাস করো?
-না, সুধীরের মতন ছেলে এমন কাজ করতে পারে না। ওর খুনটা আমায় খুব দুর্বল করে দিয়েছে।
-এমন কোনো তথ্য আছে ওনার ব্যাপারে যা যতই সামান্য হোক যেটা তুমি আমাদের বলনি?
-সবই তো তোমরা জেনেছ। নতুন করে কি বা বলি! বৌমা, (স্যারের স্ত্রী) কিন্তু সুধীরের অমতে ওর বোনের ছেলেকে গ্রামে এনে রেখেছিল।
-সুমনবাবুর বাবা মা বা ওনার কোন ইতিহাস সম্পর্কে তুমি কিছু জানো?
-বাবা মা ভাই বোন সবাই আছে ওর। মস্ত বড় পরিবার। বনেদি পরিবার। কিন্তু বৌমার পুত্র সন্তানের শখ ছিল। ওদের পুত্র না থাকায়, নিজের বোনের ছেলেকে নিজের কাছে এনে রাখে। সুধীর এটাতে আপত্তি জানায় । কারণ ছেলেটি তখন বেশ বড় ছিল। স্বভাবতই তার মা-বাবাকে ছেড়ে দূরে থাকতে মন খারাপ করত।
-তার মানে সুমনবাবুকে জোর করে তার মাসি এখানে এনেছিলেন।
-হ্যাঁ, তাই সুমনকে আমার সন্দেহ হয় না। কারণ সুধীর ছেলেটিকে অত্যন্ত স্নেহ করত। এবং আমার বিশ্বাস, তাঁর সম্পত্তিরও বেশ কিছুটা সুমন পেত।
-বাবা, তুমি জানো সুমনবাবুর সাথে স্যারের প্রায় ঝগড়া হত?
-সে তো সব পরিবারেই হয় বাবা, তবে কারোর পার্সোনাল বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানো উচিৎ না।
-বাবা, সব প্রশ্নেরই ভাসা ভাসা উত্তর দিচ্ছ! নয় বলো জানো না। নয় পরিষ্কার করে বলো। তোমার সহকর্মী খুন হয়ে গেছে। এখন তুমি তোমার ভালো মানুষ সত্তাটাকে একটু সরিয়ে রেখে সত্যিটা বল।
রণদা কোনদিন গুরুজির সাথে এমন উঁচু গলায় কথা বলেনি। এই রণদা যেন গুরুজির ছেলে রণবীর গাঙ্গুলি না, এ রণদা গোয়েন্দা রণদা। গুরুজি কিন্তু একই রকম শান্ত আছেন। এমনকি ওর গোয়েন্দাগিরির বাড়াবাড়ির জন্য হেসেও ফেলল না।
-আমার না জানার মধ্যে তুমি কোনো উত্তর খুঁজে না পেলে আমার কিছু করার নেই।
কথাটা অত্যন্ত মৃদুভাবে বলা হলেও রণদা কেন যে এত মুষড়ে পড়ল বুঝলাম না। এ বিষয়ে আর কথা এগোল না। বিকেলের দিকে আমাকে রণদা বলল, কুনাল তুই এখন যাস না, কয়েকটা জায়গা আমায় যেতে হবে বুঝলি?
আমি আজ অবধি ওর কথার অবাধ্য হইনি। বুঝলাম খুব জরুরী কাজ না হলে এমনটা কখনও ও করত না। তবু আমার মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে দেখে ও বলল, তুই এক কাজ কর, সুজনদাদার সাথে হরিদেবপুরে একবার চলে যা। রামলোচন মিত্রের ব্যাপারে ডিটেলস সব নিয়ে আসবি। দেখি তুই কেমন অবজারভেশন শিখেছিস!
-কি জিজ্ঞেস করবো?
-বলবি ঘটনাটা, তারপর ওদের মতটা শুনে নিবি। আর কিছু না। আমি রামলোচনবাবুর ছেলেকে ফোন করেছি, উনি বললেন বিকেলে সময় দেবেন। কোন প্রবলেম হলে আমাকে জাস্ট একটা ফোন করিস।
সুজনদাদা আর আমি বিকেলবেলায় নিজেদের সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম হরিদেবপুরে রামলোচন মিত্রের বাড়ি।
এই রামলোচন মিত্র আমাদের মেদিনীপুর জেলার গর্ব। সাহিত্যিক হিসেবে তার খ্যাতি অনেক। আমাদের সঙ্গে ওনার দেখা এক-দুবার মাত্র হয়েছে। রণদার ছবি যখন কাগজে ছাপা হয় তখন উনি বেশ খুশি হয়ে আমাদের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন। এবং রণদাকে ভদ্রলোক সংবর্ধনা দেন। এই এক বছর হলো ভদ্রলোক মারা গেছেন। কিন্তু রয়্যালিটির ব্যাপারটা আমায় বড্ড ভাবাচ্ছে।
ভদ্রলোকের ছেলে সুশান্ত মিত্র আমাদের দেখে সাদরে আমন্ত্রণ জানালেন।
-রণবীর আমাকে ফোন করেছিল। তোমরা এসে খুব ভালো করেছ। নইলে আমাকেই যেতে হত।
-কেন?
-যে খুন হলেন ওই লোক তো চোর, আমার বাবার দেওয়া সব তথ্য থেকে লেখালেখি করত, অথচ কৃতজ্ঞতার ‘ক’ টুকুও স্বীকার করেননি। তারপর বাবা মারা যায়। বাবার বইয়ের রয়্যালিটি এখন আমি পাই। তাই ওর শেষ ভন্ডামিটা সহ্য হল না। বাবার লেখা একটা টেক্সট বই সম্পূর্ণ নিজের নামে চালাবে এটা কি করে মানা যায় বলো তো?
-না তা সত্যিই যায় না। অন্য কোন বিষয়ে ওনার সাথে শত্রুতা ছিল কি?
(প্রশ্ন করার সময় আমি এত গুছিয়ে করিনি, যেমন রণদা করে, সেটা আমি পারি না। লেখবার সময় গুছিয়ে লিখছি)
সুশান্তবাবু বললেন, যে এমন তঞ্চকতা করে তার শত্রুর সংখ্যা একটা কেন অসংখ্য হতে পারে।
এর বেশি আমাদের জানার কিছু ছিল না। শুধু রয়্যালিটি সম্পর্কিত কাগজপত্রের এক কপি জেরক্স ভদ্রলোক আমাদের দিলেন। রণদা ফোনে সেটা আমাদের মারফৎ পাঠিয়ে দেবার নির্দেশ দিয়েছে। আমরা তাই করলাম।
রণদা এর ফাঁকে সুধীর স্যারের বাড়ি থেকে ঘুরে এসেছে। বয়ানও নিয়ে এসেছে। কিন্তু একটা ঘটনা এমনভাবে ঘটে গেল যে ভাবলেও এখনও কেমন যেন মন খারাপ লাগছে, রাগ হচ্ছে, অভিমান বললে সেটাও হয়তো হচ্ছে। আমি আজ আমার বাবাকে দেখেছি। এখনও মনে হচ্ছে সেটা আমার চোখের ভুল। প্রায় পাঁচ বছর আগে যে হারিয়ে গেছিল, তার এভাবে হঠাৎ ফিরে আসা তোমরা কি চোখে দেখছ জানি না। কিন্তু সে যে আমার নিজের বাবা। আমার বাবার সাথে তোমাদের পরিচয় নেই। কারণ মাকে সাপে কাটার কয়েকদিন আগেই বাবা নিখোঁজ হয়ে যায়। তারপর আমার ভাই কুন্তল আর বোন কুন্দ বড়মাসি ও ছোটমাসির কাছে চলে গেছে। মাঝে মাঝে ওরা আসে, আমিও যাই। ফোনে কথা হয়। কিন্তু বাবা যে ফিরে আসবে কোনদিন এ যেন আমার বিশ্বাস হয় না। বাবার নাম সনাতন ঘোষ। এমনি খেতের মজুর হিসেবে কাজ করলেও মাঝেমধ্যে শহরে রাজমিস্ত্রির কাজে যেত। এমনকি আমি এটাও জানি না আমাদের বংশে আর কেউ জীবিত আছে কি না! বাবা আমার সামনে আসেনি। বটতলায় গুরুজির সাথে কথা বলছিল। কি কথা বলছিল আমি জানি না।
ঘরে ফিরে রণদাকে বলতে ও বলল, কেসটা যতটা জটিল ভেবেছিলাম তা নয়, তোর পাঠকদের জন্য এটা একটা সুখবর। সুজনদাদা আমায় বলল, যতই হোক, বাপ তো! তুমি যাও কুনালভাই।
রণদা বলল, সময় হলে বাপ ছেলের ঠিকই মিলন হবে দাদা। কাল বিকেলে সুধীর স্যারের ঘরে এই রহস্যের ক্লাইম্যাক্স।
আমার কেন জানি না মনে হল, এই চুরি, খুন, পান্ডুলিপি উধাও এমনকি রয়ালিটি বিভ্রাট এই সবকিছুর মধ্যেই বাবার একটা বড়সড়ো ভূমিকা আছে। কিন্তু কিভাবে! সেটা বোঝার মানসিক শক্তি নেই।
পরদিন বিকেল। আজ স্কুল ছুটি দেওয়া হয়েছিল আমাদের প্রিয় মাস্টারমশাই সুধীর দাসের মৃত্যুর কারণে। সুধীর স্যারের বাড়ির রিহার্সাল রুমে এখন সবাই আছে। সবাই বলতে সন্দেহভাজন প্রত্যেকে। এমনকি গতকাল বিকেলে যার বাড়িতে আমরা গেছিলাম সেই সুশান্তবাবুও। পুলিশ অফিসার সমরবাবু ও তার টিম নিয়ে প্রস্তুত। রণদার মুখ ভয়ানক গম্ভীর। ওর হাতে সমরবাবু একটা খাতা দিয়ে বললেন, এই সেই পান্ডুলিপি! যেটা চুরি হয়ে গিয়েছিল। এখানে সুধীর দাস লিখেছিলেন ছোটদের মহাভারত। আর তোমার সাহায্য ছাড়া চোরকে ধরা সম্ভব হত না।
আমি আর থাকতে না পেরে বললাম, চোর কি আমার বাবা?
রণদা বলল, ওঁকে চোর বলা ভুল। উনি চোরের দূত। আসল চোর এই ঘরেই আছেন।
-বাবা কোথায়?
-যথাসময়ে উনিও আসবেন। এই রহস্যটাতে তোর না থাকলেই ভালো হত রে কুনাল! কিন্তু তুই না থাকলে এত বছর বাদে সনাতনকাকুও হয়তো ফিরতেন না।
গুরুজি বলল, কিন্তু সনাতন তো নিজেই স্বীকার করল, ওই চুরি করেছে।
-বাবা তোমার বিশ্বাস হল এটা?
গুরুজি একটু দ্বিধা নিয়ে বলল, যে লোক নিজের ছেলে বউ মরল না বাঁচল সে খোঁজ করে না। সে চুরি করবে এতে অবাক হবার কি আছে?
-আর আমি যদি বলি সনাতনকাকু কোনদিন এ জেলা ছেড়েই যায়নি। তাকে এ গ্রামেরই এক সম্মানীয় মানুষ কিনে চাকর করে রেখে কিছু অসাধু কাজ করাত। আর কাকু যখন দেখল কাকি মারা যাওয়ার পরও তার সন্তানদের তোমার মতো মানুষ নিজের বুকে টেনে নিয়েছে তখন সে চুপ করেছিল।
-কিন্তু এ গ্রামে কে করতে পারে এসব?
-বাবা, কাল সকাল থেকে কুনাল আমার সাথে ছিল বলে তুমি বলতে পারোনি যে হরিবাবুর কাছে যে লোক আসত সে আসলে অন্য কেউ নয়, কুনালের বাবা সনাতন ঘোষ।
এবারে আমি বুঝলাম কেন সুশান্ত মিত্রের বাড়িতে আমায় রণদা পাঠিয়েছিল। তদন্ত তো ফোনেই হয়ে গিয়েছিল। আর রয়্যালিটি ডিটেলস ফোনেও নিয়ে নেওয়া যেত।
রণদা বলল, হরি স্যার আপনি আমায় যা যা বলেছেন সকলকে একটু বলবেন?
আমাদের স্কুলের প্রবীণ মাস্টারমশাই হরিপদ দত্ত বললেন, ব্যাপার আর কিছুই না। সনাতন আমাদের স্কুলেরই ছাত্র ছিল। পড়াশোনাতেও নেহাৎ মন্দ ছিল না। বছর পাঁচেক আগে ও আমায় বলে কাজ দিতে। তখন আমি আমার জরুরী চিঠিপত্র, কাগজপত্র, বইখাতা কলকাতায় পাঠানোর ও আনার জন্য ওকে কাজে রাখি। কলকাতায় গিয়ে বেশ কটা দিন ও সত্যিই নিখোঁজ হয়ে যায়। পরে আমি লোক পাঠিয়ে জানতে পারি ওকে পুলিশে ধরেছে।
-পুলিশ? প্রশ্ন করল রণদা।
-চুরি করেছিল কি যেন।
-আমায় ক্ষমা করবেন স্যার। ছোটবেলা থেকে আপনাদের থেকেই শিখেছি মিথ্যা না বলার জন্য। এবার অন্তত আপনি মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকুন। সত্যি না বললে চাকরি জীবনের শেষটা কলঙ্ক লাগলে আপনি সামলাতে পারবেন না।
-মিথ্যা বলে আমার কি লাভ?
-আপনি একটা সত্য অলরেডি আমাদের গোপন করে গেছেন স্যার, যে কুনালের বাবার খোঁজ আপনি জানতেন।
-ওকে আমি বহুবার বলেছিলাম, তোর বউ মারা গেছে! তুই যা একবার, তোর ছেলেপুলেগুলোকে কে দেখবে? ও বলল, হেডমাস্টার নিত্যবাবু যখন দায়িত্ব নিয়েছেন, আর কোন ভয় নেই ওদের নিয়ে।
-তবু আপনার কি উচিৎ ছিল না বাবাকে অন্তত একবার খবরটা জানানো?
ভদ্রলোক এবার যেন একটু রেগে গেলেন। গুরুজিকে বললেন, নিত্যবাবু, আমায় এমন অপমান করা হবে শুনলে আমি তো আসতাম না!
-হরিবাবু আপনিও তো সত্য গোপন করেছিলেন। এটা তো আপনাকে মানতেই হবে। আর সনাতনের স্কুলে আসা যাওয়ার ক্তহাও আমি ওরই মুখ থেকে গতকাল সকালে শুনেছি। কুনাল সাথে ছিল বলে ও রণবীরের কাছে আসার সাহস পাচ্ছিল না।
হরিবাবু আরও রেগে বেরিয়ে যেতে যাচ্ছিলেন। সমরবাবু রিভলবার তাক করে বললেন, আর এক পা এগোলে কিন্তু আমি ভুলে যাব আপনি রণবাবুর মাস্টারমশাই।
রণদা বলল, ঠিক আছে। স্যার আপনি বসুন। জল খান। আমি বলছি, ভুল বললে আপনি শুধরে দেবেন।
… সুধীর স্যার যে বই লিখে রয়্যালিটি পেতেন সেটা আমি জানতাম না। জেনে সবার প্রথম যে কাজটা আমি যেটা করি সেটা হল ওনার বইগুলো যারা ছাপায় সেই প্রকাশকদের সাথে যোগাযোগ। তারা জানায়, ওনার লেখা পান্ডুলিপিগুলো এক বছর চল্লিশের ভদ্রলোক দিয়ে যায় নিয়ে আসে। তখন আমি তার ছবি চাওয়ায়, ওদের অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে সনাতনকাকুর ছবিটা পাই। তখন আমার হরি স্যারের সাথে দেখা করতে আসা অচেনা লোকের কথা মনে পড়ে। সুদর্শন মাস্টারমশাই গ্রামে আসার অনেক আগেই কুনালের বাবা গা ঢাকা দিয়েছিল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যদি সৎ পথে থাকা তবে কেন গা ঢাকা দিয়ে কাজ করা? এর উত্তর হরি স্যারই দেন। তবে তা অনেকটা মিথ্যে মেশানো। হরি স্যারের সাথে রামলোচনবাবুর প্রায় পঞ্চাশ বছরে বন্ধুত্ব, এ তথ্য সুশান্তবাবুই দেন। যাচাই করে দেখি সত্যিই সুধীর দাস অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। প্রচারের আলো তিনি কোনদিন চাননি। তাই তাঁর পান্ডুলিপি প্রকাশের ব্যাপারে  মাথাব্যথা ছিল না। প্রথম দিকে নিজে গেলেও পরের সুমনবাবুই কাজটা করতেন। স্নেহের চোখে দেখলেও শ্যালিকার ছেলেটিকে তিনি খুব একটা সুনজরে দেখতেন না। এর প্রমাণ পাওয়া যায়, অনেকবারই সুমনবাবুর জি-পে একাউন্টে সুধীর স্যারের টাকা দেওয়া থেকে। আর এ কথা তিনি খোলা মনে তাঁর অগ্রজ সহকর্মী হরিপদ দত্তকে জানান। হরি স্যার তাঁর জরুরী কাগজপত্রের নামে তখন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু রামলোচন মিত্রের বহু মূল্যবান পান্ডুলিপি কলকাতায় পাঠাতেন।
-হ্যাঁ সেটাতে অন্যায় কোথায়? হরিবাবু গর্জে উঠলেন।
-উত্তেজিত হবেন না স্যার। উত্তেজনার আরও অনেক বাকি। পান্ডুলিপি পাঠানোতে সাহায্য করাটা কোনো অপরাধ নয়। কিন্তু প্রকাশ করার সময় সেই পান্ডুলিপির লেখকের নাম যদি বদলে দেওয়া হয় তাহলে সেটা তো ভয়ানক অপরাধ। আপনি নিজের নামে সেই বইগুলো ছাপাতেন। দুটো একটা বই ছাপার পরে, লোভ ক্রমশ বাড়তে থাকে।
রামলোচনবাবু এসব কথা যখন জানতে পেরে যান, তখন সমস্ত দোষটাই আপনি চাপিয়ে দেন আপনার অনুজ সহকর্মীর ঘাড়ে। এটা কি খুব ভালো কাজ স্যার?
সুশান্তবাবু বললেন, কিন্তু পাঠ্য বই?
রণদা বলল, পাঠ্য বইয়ের ব্যাপারটা এখন বড় গোলমেলে সুশান্তবাবু! মূল বইটা সুধীর স্যারেরই লেখা। কারণ আপনি আপনার বাবার যে হস্তাক্ষর পাঠিয়েছেন, তার সঙ্গে সিআইডির কাছে জমা পড়ে থাকা মূল পান্ডুলিপির কোন মিল নেই। বরং তা হুবহু মিলে যায় সুধীর স্যারের হস্তাক্ষরের সাথে। তবে কেসটা যখন সিআইডি অবধি গড়িয়েছে সঠিক সুরাহা আপনার মৃত্যুর পর হলেও হবে। তবে আজকের দিন ও তারিখ দিয়ে লিখে রাখতে পারেন ওই বই আপনার বাবার লেখা নয়। আপনার বাবা মারা যান ২০২৩-এর জুলাইয়ে। সরকারের নির্দেশিকা আছে ওই বছরেরই জুনে। আপনার পাঠানো ওনার শেষ লেখার পান্ডুলিপি কিন্তু বলছে, ওইটা একটা ছোটদের উপন্যাস। উনি সেটা অর্ধেকও শেষ করতে পারেননি।
যাই হোক, গোলমালটা ঘটিয়েছেন আমাদের অংকের মাস্টারমশাই হরি স্যার । হরি স্যার আর কোনো কথা বললেন না। রণদা এবার সুমনবাবুকে বলল, আপনি আমায় বললেন, জি-পে অ্যাকাউন্টে আপনার বাবার পাঠানোর টাকাই আপনার মেসোমশাই আপনাকে দিতেন। উনি যখন দিতে চাইতেন না তখন আপনি ঝগড়া করতেন।
-হ্যাঁ তাই নিয়ে ঝগড়া হত।
রনদা বলল, খুব ভালো, জ্যাঠাইমা গতকাল দুপুরে আমি যখন আপনাদের বাড়িতে এসেছিলাম, তখন আপনার একটা কুরিয়্যার এসেছিল। কিছু মনে করবেন না লুকিয়ে আপনার সই করার একটা ভিডিও আমি তুলে নিয়েছি। আপনার নাম তো মনোরমা। ‘সুধীর দাস’ লিখলেন কেন?
জ্যাঠাইমা বললেন, আসলে কুরিয়্যার আসলে ওনার নামই সই করতাম, কাল তাড়াহুড়োতে ভুলেই গিয়েছিলাম বাবা… উনি আর নেই। উনি ফুপিয়ে কাঁদছেন।
-কিন্তু আপনার এই অন্ধ স্নেহের জন্য যে গ্রামের স্কুলের বাচ্চাদের ক্ষতি হতে পারে এটা ভাবেননি কখনও?
-মানে?
-বাচ্চারাও তো বুঝে গেছে। কুনাল তুই বুঝিসনি?
আমি বলার আগেই পারিজাৎ বলল, মা বাবার সই নকল করে দাদাভাইকে টাকা দিত। এই নিয়ে প্রায়ই বাবা রাগারাগি করত। মা শুনত না।
জ্যাঠাইমা একটা চড় মারতে গেল পারিজাৎকে। গুরুজি ভীষণ হুংকার দিয়ে উঠল, বৌমা!
গুরুজীকে এত গম্ভীর সরে কথা বলতে আমি কোনদিন শুনিনি।
রণদা বলল, মানুষটাকে আপনিও বোঝেননি। যাক শেষ অপরাধ এবং সবচেয়ে মারাত্মক!  সেটা হল স্যারের এমন মর্মান্তিক হত্যা!
রণদা কথা শেষও করেনি সুশান্তবাবু দৌড়ে ঘর থেকে পালাতে গেলেন। সঙ্গে সঙ্গে একটা বিকট শব্দে আমাদের কান প্রায় বন্ধ হয়ে গেল। শব্দটা কোনো গুলির শব্দ নয়, কোনো বাজনার শব্দও নয়, শব্দটা আমার বাবার গলার শব্দ। এক সময় পেটের দায়ে চৌকিদারের কাজ করত বাবা। তখন আমিও জন্মাইনি। মা বলত বাবার জীবনের প্রথম জীবিকা। অদ্ভুত একটা সুর। মন্দিরের মন্ত্র, গির্জার ঘন্টা, মসজিদের আজান মিলে এক অদ্ভুতুড়ে শব্দকোলাজ।
বাবা ঘরে ঢুকে অপলক আমার দিকে চেয়ে রইল। আমার ওর জন্য কোন করুণা নেই। শুধু এটা জেনে ভালো লাগল ও ওর লুপ্ত প্রতিভার প্রকাশ সঠিক সময় করেছে।
রণদা বলল, থ্যাংক ইউ সো মাচ কাকু! তোমার উপর অনেক অন্যায় হয়েছে, সমাজের সভ্য মানুষরা তোমাকে ব্যবহার করেছে।
সুশান্তবাবু ভয়েই মূর্ছা গেছেন বোধহয়। ওকে মুখে-চোখে জল ছিটিয়ে ধাতস্থ করতে সময় লাগবে।
বাবা বলল, সেদিন রাতে হরিবাবু বইললো, তুকে আর কাজে লাগবে নি! তুই পালা! পালিয়ে কোথায় যাই বাবু! আমার আর কে আছে? নিত্যবাবুর কাছে যাওয়ার সাহস ছিল নি! ভাবলুম সুধীর ম্যাসটরের কাছে যাই, ওর বই ছাপা হবার কথা চলতিছে। পেত্থমে কপি হরিবাবুর কাছে চুরি করে এনে দিছি। বৈকালে উনি বললেন, আমায় আর লাগবে নি! দিনের বেলা তো ঘর থেকে বেরোতে পারি নে! রাতের বেলা গিয়ে দেখি, ওই নোক সুধীর ম্যাস্টরের গলায় রুমাল পেঁচিয়ে ধরেছে! উনি বোধহয় বুঝতেও পারেনি গো! হর্রবাবুর কাছে নোকটা প্রায়ই আসতো, এর বেশি কিছু জানি নি।
রনদা বলল, বাকিটা আমি বলে দিচ্ছি। পাণ্ডুলিপির ব্যাপার স্যার জেনে গিয়েছিলেন। সেদিন রাতেই কুনাল ঘুমিয়ে পড়ার পর স্যার একটা এসএমএস করেন আমায়। পান্ডুলিপি চোর হরিবাবু। কাল এসো সবিস্তারে জানাব। একথা উনি নিশ্চয়ই, সুশান্তবাবুর থেকেই জেনেছিলেন। একটা ছোট্ট নাটক আমাদের সাজাতে হয়েছিল। এবং আমার আরও  একটা বিশ্বাস আছে। সেদিন আমাদের যাওয়া এবং স্যারের সাথে কথাবার্তার সমস্ত বিবরণ, এই বাড়ির কেউ হরিবাবু তথা সুশান্তবাবুকে জানিয়ে দেন। খুব ভুল না করলে কাজটা সুমনবাবুর। আজ উনি যে পারফিউমটা মেখে আছেন, সেদিনও পর্দার আড়াল থেকে সেই পারফিউমের গন্ধটা আমি পেয়েছিলাম। প্রতারণায় আপনারা তিনজনই সমানে সমানে। তবে অপরাধের কোনো ক্ষমা নেই। সে শিক্ষকই হন, বা পিতা।
বাবা এবার আমায় বলল, আমায় ক্ষমা কর বাপ! একবার শুধু বাবা বলে ডাক! ডাকবি বাপ! কতকাল শুনিনি তোর ‘বাপ’ ডাক!

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *