সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব – ৬৮)

রেকারিং ডেসিমাল

দ্বিতীয় নম্বর সাধ ভক্ষণ দু বছর পরেই। আর সে বারে আর দুই বাড়িতে দৌড়াদৌড়ির উপায় নেই।
ডাক্তার বলেই দিয়েছেন এত কাছাকাছি দুই ছানা, তার মধ্যে আগেরটি পেট কেটে যুদ্ধ করে এমারজেন্সি সিজার, সুতরাং এবারে সাবধানে প্ল্যানড সিজার।
মা নতুন চেম্বারে প্র‍্যাকটিস শুরু করা আর দুরন্ত ডাকাত এক বছরের মেয়েকে সামলাতে সামলাতে আর পেটের মধ্যে যে রয়েছে তার কথা ভেবে উঠতে পারেনি।
তার মধ্যে নতুন ফ্ল্যাট কেনা হয়েছে।
পঁচিশে ডিসেম্বর তার গৃহ প্রবেশ সেরে, তিন দিন থাকা ইত্যাদি গুছিয়ে, তবে মেয়ের জিনিসপত্র এবং কাজের মেয়েকে সাথে নিয়ে মা এসে গেছে টালিগঞ্জ।
তুলসীদিদির ঘাড়ে উঠে ঘুরে বেড়ায় হবু দিদি। মায়ের কোলে বেশি উঠতে পারে না বলে ঘ্যানঘ্যান করে।
তার দু বছরের জন্মদিনেই এবারের সিজারিয়ান সেকশন করার জন্য স্যারকে বলবে বলে ভাবছিল মা।
মায়ের বাপের বাড়ি “সীমা স্বর্গে ” ততদিনে টেলিফোন এসে গেছে।
সকালে মাকে ফোন করে প্ল্যানটা বলতেই জ্যোতিষ শাস্ত্র চর্চা করা মা নতুন মাকে বললেন, এমন অংক কষে হয় না মা গো। জন্ম মৃত্যু বিয়ে, অন্যরকম হিসেবে আসে। খোদার ওপর খোদকারী কোরো না।
চুপ করে থাকে নতুন মা।
তারপর বলে, সে যাই হোক, তবে পনেরোই জানুয়ারি  মেয়ের দু বছরের জন্মদিন সেরেই না হয় নার্সিং হোমে যাব।
ডেট ত স্যার চার ফেব্রুয়ারিতে দিয়ে রেখেছেন।
কাল সাধের জন্য তাড়াতাড়ি এসে যেও।

ঠাণ্ডা লেগেছে মায়ের আর তার ছোট্ট মেয়ের ও। বাঙুর হাসপাতালের দিক থেকে খোলা বারান্দায় হাওয়া বয়। কাশি আর গা গরম নিয়ে মেয়ে ছাড়তে চায় না মাকে রাতে।
পেটের মধ্যে ছোট জন ছটফট করে। দিদিকে কোলে নেয়া যায়না। মায়ের বুকের ওপর শুয়ে থাকল সে। মা দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে রাতে ঝিমোয়।

সকাল হতেই বাড়ি ভর্তি লোক।
সাধ খেতে খেতেই পেটের পাশ দিয়ে চিনচিনে ব্যথা।
তবু আশ্চর্য হয়ে নতুন মা দেখে কি কান্ড সব পদ খাওয়া হয়ে গেছে প্রায়!
অথচ মেয়ের বারে ত কিছুই খেতে পারেনি।

দিদা মুচকি হাসেন।
এই বারে সাধ পূর্ণ হইব লাগে।

বিকেলে হবু গাইনির খচখচ করে মনটা।
সমবয়সী ননদিনীকে বগলদাবা করে বলে, চল না, একবার নার্সিং হোম ঘুরে আসি। কেমন যেন লাগছে।

কাছেই নার্সিং হোম।
বাড়িতে সবাই বিকেলের জল খাবার খাচ্ছে।

দুই বীরাঙ্গনা ট্রামে করে ডাক্তার দেখাতে চলল শ্বাশুড়ি মাকে বলে।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।