সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে শ্রীরাজ মিত্র (পর্ব – ১২)

ছায়াপথ, গুঁড়ো ছাই


ভাদ্র মাস আসতে না আসতেই, আমাদের এপাশে কাশবনগুলো নজর কাড়ল এবারেও। আর কাশফুল মানেই যেন এক অলিখিত দুর্গাপুজোর নান্দিপাঠ।ঝাড়গ্রামের সাবিত্রী মন্দির ঘিরে ছড়িয়ে আছে নানা লোককথা। তা সে আজ থেকে চারশো বছর আগের কথা। ঘন জঙ্গলে ঢাকা এই সব এলাকা। সাবিত্রী মন্দিরের দুর্গাপুজোও প্রায় এই ৪০০ বছরের প্রাচীন।

কথিত আছে, রাজস্থান থেকে শিকারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে ঘুরতে ঘুরতে রাজা মান সিংহ এই অঞ্চলে এসে পড়েন এবং নিরালা ঘন জঙ্গলে হঠাৎই অপূর্ব সুন্দরী এক রমণীকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাঁর রূপে মুগ্ধ রাজা সাতপাঁচ না ভেবেই তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। রাজার কথা শুনে ওই রমণী শর্ত দেন, রাজা সামনে পথ দেখিয়ে তাঁকে নিয়ে যাবেন, আর পিছনে-পিছনে তিনি যাবেন, কোনও অবস্থাতেই রাজা যেন পিছনে ঘুরে না তাকান! তা হলেই বিপদ ঘটবে। শর্ত মেনেই রাজা ওই রমণীকে পিছনে নিয়ে তাঁর রাজ্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। বেশ কিছু পথ চলার পরে রাজার মনে হল – ওই রমণী তাঁকে ছলনা করছেন না তো ? পিছনে তো কোনো আওয়াজ নেই! ভাবতে ভাবতে হঠাৎই পিছন ফিরে তাকিয়ে ফেলেন রাজা। সঙ্গে সঙ্গেই ঘটে এক অদ্ভুত ঘটনা। তিনি দেখেন, ওই রমণী ধীরে ধীরে প্রবেশ করছেন মাটির নীচে! দেখে রাজা ছুটে আসেন এবং রমণীর মাথার চুল ধরে তাঁকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হন। তবে তাঁর হাতের মুঠোয় রয়ে যায় রমণীর একগোছা চুল। রাজা বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে যান এবং এও বোঝেন ইনি কোনো সামান্যা নারী নন, নিশ্চয়ই কোনও দৈবী বিষয় এর মধ্যে আছে। সেই রাতেই রাজা স্বপ্নাদেশ পান– মা সাবিত্রী ওই স্থানেই মন্দির গড়ে তাঁর পুজোর নির্দেশ দেন। রাজা মানসিংহের তত্ত্বাবধানে মন্দির গড়ে পুজো শুরু হয়। আর প্রথম থেকেই মা সাবিত্রীর চুল পুজো হয়ে আসছে এখানে। মায়ের শুধু মুখের অংশটুকুই দেখা যায় এখানে।

ঝাড়গ্রামের সাবিত্রী মন্দিরে সাবিত্রী দেবীর নিত্যপুজো হয়। প্রতিদিন বহু মানুষ ওই মন্দিরে পুজো দিতে আসেন এবং ভক্তিভরে মায়ের কাছে প্রার্থনা করেন। এখানকার পুজোয় বলি দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে।

দুর্গাপুজোর সন্ধিপূজাতে বলি দেওয়া হয়। দশমীর দিন পাটাবিধা হয়। একটা কলাগাছকে রেখে তার মধ্যে তির ছুঁড়ে মেরে অর্থাৎ, অশুভ শক্তি বিনাশ করে পুজোর সমাপ্তি ঘটে। মা সাবিত্রীরই আরেক রূপ যেহেতু দেবী দুর্গা তাই দুর্গাপুজোর দিনগুলি এখানে ধুমধাম করে পুজো হয়। তবে এখানে দুর্গামূর্তি পুজোর প্রচলন নেই। পটেই পুজো হয় বলে অনেকেই এই পুজোকে পটেশ্বরীর পুজো বলে থাকেন। পরিমল সাবিত্রী মন্দির থেকে ফিরেছে আজই।

¤

রেঙ্গুনে থাকাকালীন ১৯১২’র অক্টোবর মাসে শরৎচন্দ্র একবার অফিসে এক মাসের ছুটি নিয়ে দেশে আসেন। এই সময় তাঁর মামা উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের মারফত যমুনা পত্রিকার সম্পাদক ফণীন্দ্রনাথ পালের সঙ্গে একদিন তাঁর পরিচয় হয়। পরিচয় হলে ফণীবাবু তাঁর কাগজে লিখবার জন্য শরৎচন্দ্রকে বিশেষভাবে অনুরোধ করেন। শরৎচন্দ্র রেঙ্গুনে গিয়ে লেখা পাঠিয়ে দেবেন বলে কথা দেন। ঐ কথা অনুযায়ী শরৎচন্দ্র রেঙ্গুনে গিয়ে তাঁর ‘রামের সুমতি’ গল্পটি পাঠিয়ে দেন। ফণীবাবু এই গল্প তাঁর কাগজে ১৩১৯ সালের ফাল্গুন ও চৈত্র সংখ্যায় প্রকাশ করেন। রামের সুমতি যমুনায় প্রকাশিত হলে শরৎচন্দ্র এক গল্প লিখেই একজন শক্তিশালী লেখক হিসাবে সাহিত্যিক ও পাঠক মহলে বহুল পরিচিতি লাভ করেছিলেন। এই বলে মাস্টার থামলেন। সত্যিই অমর কথাশিল্পী! এক স্বতন্ত্র সর্বজনমান্য প্রতিষ্ঠান।

শরৎচন্দ্র রেঙ্গুন যাওয়ার দু-একদিন আগে কলকাতার বৌবাজারে সুরেন মামা ও গিরীন মামার সঙ্গে দেখা করতে গেলে (এঁরা দুজনেই কলকাতায় কলেজে পড়তেন) গিরীন মামার অনুরোধে বসে সঙ্গে সঙ্গেই একটা গল্প লিখে কুন্তলীন প্রতিযোগিতায় পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু গল্পটিতে নিজের নাম না দিয়ে সুরেনবাবুর নাম দিয়েছিলেন। গল্পটির নাম ‘মন্দির’। দেড়শ গল্পের মধ্যে ‘মন্দির’ সর্বশ্রেষ্ঠ বিবেচিত হয়।

ইতিপূর্বে ভারতী পত্রিকায় শরৎচন্দ্রের ‘বড়দিদি’ প্রকাশিত হয়েছিল। তখন অনেকের মত রবীন্দ্রনাথও এই লেখা পড়ে শরৎচন্দ্রকে প্রতিভাবান লেখক হিসেবে মান্যতা দেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায় ভাগলপুরে শরৎচন্দ্রের লেখার খাতা থেকে ‘বড়দিদি’ নকল করে এনেছিলেন এবং পরে শরৎচন্দ্রকে না জানিয়েই এটি ভারতীতে প্রকাশ করেন।

‘রামের সুমতি’ প্রকাশিত হলে তখন নবপ্রকাশিত ভারতবর্ষ এবং সাহিত্য প্রভৃতি পত্রিকার কর্তৃপক্ষও তাঁদের কাগজের জন্য শরৎচন্দ্রের কাছে লেখা চাইতে থাকেন। শরৎচন্দ্র যমুনার সঙ্গে সঙ্গে ভারতবর্ষ এও লিখতে আরম্ভ করেন। শেষে যমুনা ছেড়ে কেবল ভারতবর্ষেই লিখতে থাকেন। ভারতবর্ষ পত্রিকার মালিক গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এন্ড সন্স একে একে তাঁর বইও প্রকাশ করতে শুরু করেন।

যমুনা পত্রিকার সম্পাদক ফণী পালই অবশ্য প্রথম তাঁর ‘বড়দিদি’ উপন্যাসটি প্রকাশ করেছিলেন। ঐ সময় ফণীবাবুর বন্ধু সুধীর চন্দ্র সরকারও তাঁদের দোকান এম.সি. সরকার এন্ড সন্স থেকে শরৎচন্দ্রের “পরিণীতা”, “পণ্ডিতমশাই” প্রভৃতি কয়েকটি বই প্রকাশ করেন।

১৯১৬ খ্রীস্টাব্দের গোড়ার দিকে শরৎচন্দ্র হঠাৎ দুরারোগ্য পা-ফোলা রোগে আক্রান্ত হন। তখন তিনি স্থির করেন অফিসে এক বছরের ছুটি নিয়ে কলকাতায় এসে কবিরাজী চিকিৎসা করাবেন। অফিসে শেষ দিনে ছুটি চাইতে যাওয়ায় উপরওয়ালা সাহেবের সঙ্গে ঝগড়া হয়। ফলে শরৎচন্দ্র চাকরিতে ইস্তফা দিয়েই বরাবরের জন্য রেঙ্গুনে ছেড়ে দেশে চলে আসেন।

শরৎচন্দ্র রেঙ্গুন থেকে সস্ত্রীক এসে প্রথমে হাওড়া শহরে ওঠেন। পরে তিনি তাঁর দিদিদের গ্রাম হাওড়া জেলার বাগনান থানার গোবিন্দপুরের পাশেই সামতাবেড়েয় জায়গা কিনে একটা সুন্দর মাটির বাড়ি তৈরি করান। বাড়িটি ছিল একেবারে রূপনারায়ণের গায়েই। শরৎচন্দ্র ১৯২৬ খ্রীস্টব্দের ফেব্রুয়ারী মাসে হাওড়া শহর ছেড়ে তাঁর সামতাবেড়ের বাড়িতে চলে যান।

হাওড়ায় বাজে শিবপুরে থাকার সময়েই শরৎচন্দ্র তাঁর বহু গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তাই ঐ সময়টাকেই তাঁর সাহিত্যিক জীবনের স্বর্ণযুগ বলা যায়।

১৯২১ খ্রীস্টাব্দে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে তিনি দেশবন্ধুর আহ্বানে কংগ্রেসে যোগ দেন এবং তিনি হাওড়ায় থাকতেন বলে দেশবন্ধু তাঁকে হাওড়া জেলা কংগ্রেসের সভাপতি মনোনীত করেন । ১৯২১ থেকে ১৯৩৬- একটানা দীর্ঘ ১৬ বছর তিনি হাওড়া জেলা কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। মাঝে ১৯২২ খ্রীস্টাব্দে তিনি একবার হাওড়া কংগ্রেসের সভাপতির পদ ত্যাগ করতে চাইলে দেশবন্ধু তা করতে দেননি।

শরৎচন্দ্র অহিংস কংগ্রসের একজন ছোটখাট নেতা হলেও বরাবরই কিন্তু ভারতের মুক্তি আন্দোলনের সশস্ত্র সংগ্রামী বা সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবীদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতেন। বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স বা সংক্ষেপে বি ভি দলের সর্বাধিনায়ক প্রখ্যাত বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষ, কাকোরী ষড়যন্ত্র মামলার আসামী বিপ্লবী শচীন সান্যাল প্রমুখ ছাড়াও বারীন ঘোষ, উপেন বন্দোপাধ্যায়, চারু রায়, অমরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিপিন গাঙ্গুলী প্রমুখ খ্যাতনামা বিপ্লবীদের সঙ্গেও তাঁর যথেষ্ট হৃদ্যতা ছিল। বিপিনবাবু সম্পর্কে শরৎচন্দ্রের মামা হতেন। শরৎচন্দ্র বহু বিপ্লবীকে নিজের রিভলবার, বন্দুকের গুলি এবং অর্থ দিয়েও সাহায্য করতেন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের নায়ক মহাবিপ্লবী সূর্য সেনকেও তিনি তাঁর বৈপ্লবিক কাজের জন্য অর্থ সাহায্য করেছিলেন।

শরৎচন্দ্র হাওড়ার বাজে শিবপুরে থাকার সময়েই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ পরিচয় হয়। পরিচয় হয়েছিল জোড়াসাঁকোয় রবীন্দ্রনাথের বাড়িতে বিচিত্রার আসরে। শরৎচন্দ্রের বাল্যবন্ধু ঔপন্যাসিক চারু বন্দ্যোপাধ্যায় শরৎচন্দ্রকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে পরিচয় করিয়ে দেন কবির সাথে। রবীন্দ্রনাথের অনুরোধে শরৎচন্দ্র বিচিত্রার আসরে ১৩২৪ বঙ্গাব্দের ১৪ চৈত্র তাঁর বিলাসী গল্পটি পাঠ করেন।

পরে নানা সূত্রে তাঁদের উভয়ের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। শরৎচন্দ্র নানা প্রয়োজনে একাধিকবার শান্তিনিকেতনে ও জোড়াসাঁকোয় কবির কাছে গিয়েছেন। শরৎচন্দ্র শেষ বয়সে কলকাতায় বাড়ি করলে সেখানে অনুষ্ঠিত এক সভায় রবীন্দ্রনাথ একবার শরৎচন্দ্রের নতুন বাড়িতেও গিয়েছিলেন।

কবির সত্তর বছর বয়সের সময় দেশবাসী যখন কলকাতার টাউন হলে তাঁকে অভিনন্দন জানায় সেই অভিনন্দন সভার বিখ্যাত মানপত্রটি রচনা করেছিলেন শরৎচন্দ্র। কবিও নিজে একবার শরৎচন্দ্রকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।

শরৎচন্দ্র সামতাবেড়েতে যখন থেকে বাস করতে থাকেন, তখন থেকে ঐ অঞ্চলের দরিদ্র লোকদের অসুখে চিকিৎসা করা তাঁর একটা কাজই হয়ে দাঁড়িয়েছিল। রোগী দেখে তিনি শুধু ওষুধই দাতব্য করতেন না, অনেকের পথ্যও কিনে দিতেন। হাওড়া শহরে থাকার সময় সেখানেও তিনি এইরকম করতেন। শরৎচন্দ্র সামতাবেড়ে অঞ্চলের বহু দুঃস্থ পরিবারকে বিশেষ করে অনাথ বিধবাদের মাসিক অর্থ সাহায্য করতেন।

শরৎচন্দ্র সামতাবেড়েতে থাকার সময় অল্প তিন-চারটি মাত্র গ্রন্থ রচনা করতে পেরেছিলেন। শরৎচন্দ্র সামতাবেড়েতে থাকার সময় শেষ দিকে কলকাতার বালীগঞ্জে একটা বাড়ি তৈরি করিয়েছিলেন। এটি তৈরি হয়েছিল ১৯৩৪ খ্রীস্টাব্দে। বাড়িটি দোতালা এবং দেখতে সুন্দর। এই বাড়ির ঠিকানা – ২৪, অশ্বিনী দত্ত রোড!

কলকাতায় বাড়ি হলে তিনি কখনও কলকাতায়, আবার কখনও সামতাবেড়ে – এইভাবে কাটাতেন। কলকাতায় থাকাকালে কলকাতার তখনকার সাহিত্যিক ও শিল্পীদের দুটি নাম-করা প্রতিষ্ঠান রবিবাসর ও রসচক্রের সদস্যরা তাঁকে আমন্ত্রণ করে তাঁদের অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতেন। এঁরা কখনও কখনও শরৎচন্দ্রকে সম্বর্ধনা জানিয়েছেন। রসচক্রের সদস্যরা শরৎচন্দ্রকে তাঁদের প্রতিষ্ঠানের সভাপতি করেছিলেন।

১৯৩৬ খ্রীস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শরৎচন্দ্রকে ডি.লিট. উপাধি দিয়ে সম্মানিত করেন। এর আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে জগত্তারিণী পদক উপহার দিয়েছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে একবার বি.এ. পরীক্ষায় বাংলার পেপারসেটার বা প্রশ্নকর্তাও নিযুক্ত করেছিলেন। এসব ছাড়া, দেশবাসীও তাঁকে তখন ‘অপরাজেয় কথাশিল্পী,’ ‘সাহিত্য সম্রাট’ এই আখ্যায় বিভূষিত করেছিলেন। বৈদ্যবাটী যুব সংঘ, শিবপুর সাহিত্য সংসদ, যশোহর সাহিত্য সংঘ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের ও সাধারণভাবে দেশবাসীর পক্ষ থেকে একাধিকবার তাঁকে সম্বর্ধনা জানানো হয়।

শরৎচন্দ্র কেবল গায়ক, বাদক, অভিনেতা ও চিকিৎসকই ছিলেন না, মনেপ্রাণে তিনি ছিলেন একজন দরদী মানুষ। মানুষের, এমন কি জীবজন্তুর দুঃখ-দুর্দশা দেখলে বা তাদের দুঃখের কাহিনী শুনলে, তিনি অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়তেন। অনেক সময় এজন্য তাঁর চোখ দিয়ে জলও গড়িয়ে পড়ত।

পুরুষ-শাসিত সমাজে পুরুষ অপেক্ষা নারীর প্রতিই তাঁর দরদ ছিল বেশী। আবার সমাজের নিষ্ঠুর অত্যাচারে সমাজপরিত্যক্তা, লাঞ্ছিতা ও পতিতা নারীদের প্রতি তাঁর করুণা ছিল আরও বেশি। পতিতা নারীদের ভুল পথে যাওয়ার জন্য তিনি হৃদয়ে একটা বেদনাও অনুভব করতেন।

জীবজন্তুর প্রতি স্নেহবশতঃ শরৎচন্দ্র বহু বছর সি.এস.পি.সি.এ. অর্থাৎ কলকাতা পশুক্লেশ নিবারণী সমিতির হাওড়া শাখার চেয়ারম্যান ছিলেন।

তিনি ছিলেন অসাধারণ অতিথিপরায়ণ, বন্ধুবৎসল পত্নীপ্রেমিক। বিলাসী না হলেও কিছুটা সৌখিন ছিলেন- বিশেষ করে বেশভূষায় ও লেখার ব্যাপারে। তিনি ঘরোয়া বৈঠকে খুব গল্প করতে পারতেন। বন্ধুদের সঙ্গে বেশ পরিহাস-রসিকতা করতেন। আত্ম-প্রচারে সর্বদাই বিমুখ ছিলেন এবং নিজের স্বার্থের জন্য কাউকে কিছু বলা কখনও পছন্দ করতেন না।

হুগলী জেলায় দেবানন্দপুর একটি ছোট্ট গ্রাম। গ্রামটি ইষ্টার্ন রেলওয়ের ব্যান্ডেল রেল স্টেশন থেকে মাইল-দুই উত্তর–পশ্চিমে অবস্থিত। এই গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে ১৮৭৬ খ্রীষ্টাব্দের ১৫ সেপ্টেম্বর তারিখে(বাংলা ১২৮৩ সালের ৩১শে ভাদ্র) শরৎচন্দ্রের জন্ম হয়। তাঁর পিতার নাম মতিলাল চট্টোপাধ্যায় এবং মা ভুবনমোহিনী দেবী। প্রভাসচন্দ্র ও প্রকাশচন্দ্র নামে শরৎচন্দ্রের আরও দুই ছোটভাই এবং অনিলা দেবী ও সুশীলা দেবী নামে দুই বোনও ছিলেন। অনিলা দেবী ছিলেন ভাই-বোনদের মধ্যে সবার বড় আর সুশীলা দেবী ছিলেন সবার ছোট।

শরৎচন্দ্রের পিতা মতিলাল এন্ট্রান্স পাস করে কিছুদিন এফ.এ. পড়েছিলেন। তিনি অস্থিরচিত্ত, ভবঘুরে প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। তাই অল্প কিছুদিন চাকরি করা ছাড়া আর কখনও কিছুই করেন নি। গল্প-উপন্যাস লিখতেন; কিন্তু ঐ অস্থিরচিত্ততার জন্যই কোন লেখা সম্পূর্ণ করতেন না। অভাব অনটনের জন্য তিনি বেশীর ভাগ সময় স্ত্রী ও পুত্র কন্যাদের নিয়ে ভাগলপুরে শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন। তাই শরৎচন্দ্রের ছেলেবেলার অনেক গুলো বছর কেটেছিল ভাগলপুরে মামার বাড়িতে।

শরৎচন্দ্রের মাতামহ কেদারনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়ি ছিল ২৪-পরগনা জেলার হালিশহরে। কেদার বাবু ভাগলপুরে কালেকটারি অফিসের কেরানি ছিলেন। তিনি ভাগলপুরেই সপরিবারে বাস করতেন। কেদারবাবুর ছোট চার ভাই পরিবারসহ তাঁর কাছেই থাকতেন।

শরৎচন্দ্রের বয়স যখন পাঁচ বছর সেই সময় তাঁর পিতা তাঁকে গ্রামের (দেবানন্দপুরের) প্যারী পন্ডিতের (বন্দ্যোপাধ্যায়ের) পাঠশালায় ভর্তি করে দেন।শরৎচন্দ্র এখানে দু-তিন বছর পড়েন। পাঠশালার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তিনি যেমন ছিলেন মেধাবী, তেমনি ছিলেন দুরন্ত।

শরৎচন্দ্র যখন প্যারী পন্ডিতের পাঠশালায় পড়ছিলেন, সেই সময় স্থানীয় সিদ্ধেশ্বর ভট্টাচার্য দেবানন্দপুরে একটি বাংলা স্কুল স্থাপন করেন। এই স্কুল স্থাপিত হলে শরৎচন্দ্রের পিতা শরৎচন্দ্রকে প্যারী পন্ডিতের পাঠশালা থেকে এনে সিদ্ধেশ্বর মাস্টারের স্কুলে ভর্তি করে দেন। এই স্কুলেও শরৎচন্দ্র বছর তিনেক পড়েন।

এই সময় শরৎচন্দ্রের পিতা বিহারের ডিহিরিতে একটা চাকরি পান। চাকরি পেয়ে তিনি ডিহিরিতে চলে যান। যাবার সময় তিনি স্ত্রী ও পুত্রকন্যাদের ভাগলপুরে শ্বশুরবাড়িতে রেখে যান। পরে তিনি পরিবার ডিহিরিতে নিয়ে গেলেও শরৎচন্দ্র কিন্তু পড়বার জন্য ভাগলপুরেই থেকে গেলেন। তবে ছুটিতে অবশ্য তিনি মাঝে মাঝে ডিহিরিতে বাবা মার কাছে যেতেন।
শরৎচন্দ্র দেবানন্দপুর থেকে ভাগলপুরে এলে তাঁর মাতামহ তাঁকে ভাগলপুরের দুর্গাচরণ বালক বিদ্যালয়ে ছাত্রবৃত্তি ক্লাসে ভর্তি করে দেন।ঐ ক্লাসে শরৎচন্দ্রের মাতামহের কনিষ্ঠ ভ্রাতা অঘোরনাথের জ্যেষ্ঠপুত্র মণীন্দ্রনাথও পড়তেন। সে বছরে ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষা দিয়ে শরৎচন্দ্র এবং মণীন্দ্রনাথ উভয়েই পাস করেছিলেন।ছাত্রবৃত্তি পাস করে শরৎচন্দ্র ১৮৮৭ খ্রীষ্টাব্দে ভাগলপুরের জেলা স্কুলে সেকালের সেভেন্থ ক্লাসে অর্থাৎ বর্তমানের ক্লাস ফোর বা চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন।

ছাত্রবৃত্তিতে তখন ইংরাজী পড়ানো হত না। তবে বাংলা, অঙ্ক, ইতিহাস, ভূগোল প্রভৃতি বিষয় একটু বেশি করেই পড়ানো হত। শরৎচন্দ্র ছাত্রবৃত্তি পাস করার ফলে জেলা স্কুলের সেভেন্থ ক্লাসের বাংলা অঙ্ক ইত্যাদি তাঁর কাছে অতি তুচ্ছ বলে মনে হয়েছিল। তাঁকে কেবল ইংরাজিই যা পড়তে হত। ফলে সে বছরের শেষে পরীক্ষায় ইংরাজি এবং অন্যান্য বিষয়েও শরৎচন্দ্র এত বেশি নম্বর পেয়েছিলেন যে, শিক্ষকমশায়রা তাঁকে ডবল প্রমোশন দিয়েছিলেন। অর্থাৎ শরৎচন্দ্র ১৮৮৮ খ্রীষ্টাব্দে সেকালের সেভেন্থ ক্লাস থেকে সিক্সথ্ ক্লাস টপকে একেবারে ফিপ্থ্ ক্লাসে উঠেছিলেন। তখনকার দিনে স্কুলের নিচের দিক থেকে এইভাবে ক্লাস গণনা হত-নাইন্থ্ ক্লাস, এইট্থ্ ক্লাস, সেভেন্থ্ ক্লাস, সিকস্থ্ ক্লাস, ফিফ্থ্ ক্লাস, ফোরথ্ ক্লাস, থার্ড ক্লাস, সেকেন্ড ক্লাস ও ফার্স্ট ক্লাস। ফার্স্ট ক্লাস হল বর্তমানের ক্লাস টেন বা দশম শ্রেণি!

১৮৮৯ খ্রীষ্টাব্দে শরৎচন্দ্র জেলা স্কুলের ফোরথ্ ক্লাসে উঠলেন, সেই সময় তাঁর পিতার ডিহিরির চাকরিটিও চলে যায়। শরৎচন্দ্রের পিতা তখন পরিবারবর্গকে নিয়ে আবার দেবানন্দপুরে ফিরে আসেন। শরৎচন্দ্র বাবা-মা’র সঙ্গে দেবানন্দপুরে এসে ঐ বছরই অর্থাৎ ১৮৮৯ খ্রীষ্টাব্দেই জুলাই মাসে হুগলী ব্রাঞ্চ স্কুলের ফোরথ্ ক্লাসে ভর্তি হলেন। ১৮৯২ খ্রীষ্টাব্দে শরৎচন্দ্র ফার্স্ট ক্লাসে পড়ার সময় তাঁর পিতা অভাবের জন্য আর স্কুলের মাহিনা দিতে পারলেন না, ফলে শরৎচন্দ্র পড়া ছেড়ে দিয়ে ঘরে বসে রইলেন।

শরৎচন্দ্র এই সময় সতের বছর বয়সে সর্বপ্রথম পাঠশালার সহপাঠী কাশীনাথের নাম নিয়ে ‘কাশীনাথ’ নামে একটি গল্প লেখেন। এছাড়া ‘ব্রহ্মদৈত্য’ নামে আরও একটি গল্প লিখেছিলেন। যদিও ব্রহ্মদৈত্য গল্পটি পাওয়া যায় না।

দেবানন্দপুরে মতিলালের অভাব ক্রমশ তীব্র হয়ে ওঠায় তিনি তখন বাধ্য হয়ে আবার সপরিবারে ভাগলপুরে শ্বশুরবাড়িতে গেলেন। সেটা তখন ১৮৯৩ খ্রীষ্টাব্দের প্রথম দিক। শরৎচন্দ্র ভাগলপুরে গিয়েই আবার স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রবল আগ্রহান্বিত হলেন। কিন্তু শরৎচন্দ্রের আগ্রহ হলে কি হবে! হুগলী ব্রাঞ্চ স্কুলের বকেয়া মাহিনা মিটিয়ে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট আনার টাকা কোথায়? ১৮৯২ খ্রীষ্টাব্দের জানুয়ারী মাসে তাঁর মাতামহের মৃত্যু হওয়ায় মামার বাড়ির একান্নবর্তী সংসার ভেঙ্গে যায়। শরৎচন্দ্রের নিজের দুই মামার মধ্যে বড়মামা ঠাকুর দাসের তখন চাকরি ছিল না। ছোটমামা বিপ্রদাস সামান্য বেতনে সেই সবে একটা চাকরিতে ঢুকেছেন। তাঁকে একাই তাঁর নিজের, তাঁর দাদা ঠাকুরদাসের এবং ভগ্নীপতি মতিলালের সংসার চালাতে হয়।

সাহিত্যিক ও সাংবাদিক পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় ঐ সময় ভাগলপুরের তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষকতা করতেন এবং ভাগলপুরে শরৎচন্দ্রের মামাদের প্রতিবেশী ছিলেন। পাঁচকড়িবাবুর পিতা বেণীমাধব বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন শরৎচন্দ্রের মাতামহের বন্ধু। তাই শরৎচন্দ্র পাঁচকড়িবাবুকে মামা বলতেন। শরৎচন্দ্রের পড়ার আগ্রহ দেখে পাঁচকড়িবাবুই অবশেষে শরৎচন্দ্রকে তাঁদের স্কুলে ভর্তি করে নিয়েছিলেন।

শরৎচন্দ্র এই তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজিয়েট স্কুল থেকেই পর বৎসর অর্থাৎ ১৮৯৪ খ্রীষ্টাব্দে ফেব্রুয়ারী মাসে এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। পরীক্ষার আগে স্কুলে পরীক্ষার ফি এবং ঐ সঙ্গে দেয় ক’ মাসের মাহিনার টাকা জমা দেবার সময়ও শরৎচন্দ্রের ছোটমামা বিপ্রদাসকে স্থানীয় মহাজন গুলজারীলালের কাছে হ্যান্ডনোট লিখে টাকা ধার করতে হয়েছিল।

শরৎচন্দ্রের মাতামহের ছোট ভাই অঘোরনাথের জ্যেষ্ঠপুত্র মনীন্দ্রনাথও ঐ বছর এন্ট্রান্স পাস করেন। এন্ট্রান্স পাস করে মণীন্দ্রনাথ তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজে ভর্তি হলেন। কিন্তু টাকার অভাবে শরৎচন্দ্রের আর ভর্তি হওয়া হল না। অভাবের জন্যই বিপ্রদাস শরৎচন্দ্রকে কলেজে ভর্তি করাতে পারলেন না।

শরৎচন্দ্রের পড়া হবে না দেখে মণীন্দ্রনাথের মা কুসুমকামিনী দেবীর বড় মায়া হল। তিনি তাঁর স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করে, তাঁদের দুই ছোট ছেলেকে পড়াবার বিনিময়ে শরৎচন্দ্রের কলেজে ভর্তি হওয়ার এবং কলেজে প্রতি মাসে মাহিনা দেওয়ার ব্যাবস্থা করে দিলেন। এর ফলে শরৎচন্দ্র কলেজে ভর্তি হতে সক্ষম হলেন। শরৎচন্দ্র রাত্রে মণীন্দ্রনাথের ছোট দু ভাই সুরেন্দ্রনাথ ও গিরীন্দ্রনাথকে পড়াতেন। এঁরা তখন স্কুলের নিচের ক্লাসের ছাত্র। এছাড়া বাড়ির অন্য ছোট ছেলেরাও তাঁর কাছে আসত এমনি পড়তে।

কলেজে পড়ার সময় শরৎচন্দ্র টাকার অভাবে কলেজের পাঠ্য বইও কিনতে পারেননি। তিনি মণীন্দ্রনাথের এবং সহপাঠী অন্যান্য বন্ধুদের কাছ থেকে বই চেয়ে এনে রাত জেগে পড়তেন এবং সকালেই বই ফেরৎ দিয়ে আসতেন। কলেজে এইভাবে দু বছর পড়েও টেস্ট পরীক্ষার শেষে এফ.এ.পরীক্ষার ফি কুড়ি টাকা জোগাড় করতে না পারায়, শরৎচন্দ্র আর এফ.এ. পরীক্ষাই দিতে পারলেন না। ঠিক এই সময়টায় শরৎচন্দ্র অবশ্য মামার বাড়িতে ছিলেন না। কারণ ১৮৯৫ খ্রীস্টাব্দের নভেম্বর মাসে শরৎচন্দ্রের মাতার মৃত্যু হওয়ায় তার কিছুদিন পরেই শরৎচন্দ্রের পিতা মতিলাল শ্বশুরালয় ছেড়ে পুত্রকন্যাদের নিয়ে মাইল খানেক দূরে ভাগলপুরের খঞ্জরপুর পল্লীতে এসেছিলেন। এখানে মতিলাল খোলার ছাওয়া একটা মাটির ঘরে পুত্রকন্যাদের নিয়ে থাকতেন।জ্যেষ্ঠা কন্যা অনিলা দেবীর ইতিপূর্বে হাওড়া জেলায় বাগনান থানার গোবিন্দপুর গ্রামে বিয়ে হয়েছিল।অনিলা দেবী তাঁর শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন।

শরৎচন্দ্র কলেজের পড়া ছেড়ে ভাগলপুরের আদমপুর ক্লাবে মিশে অভিনয় ও খেলাধূলা করে কাটাতে লাগলেন। এবং ভাগলপুরের নির্ভীক, পরোপকারী, মহাপ্রান এক আদর্শ যুবক রাজেন মজুমদারের সঙ্গে মিশে তাঁর পরোপকারমূলক কাজের সঙ্গী হলেন। (শরৎচন্দ্র পরে তাঁর ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাসে এঁকেই ইন্দ্রনাথরূপে চিত্রিত করে গেছেন) শরৎচন্দ্র এই সময় প্রতিবেশী বিভূতিভূষণ ভট্টদের বাড়িতে মিশে সেখানে নিজের একটা আস্তানা করেছিলেন এবং সেই আস্তানায় বসে দিন-রাত অজস্র গল্প-উপন্যাস লিখতেন এবং পড়তেন। শরৎচন্দ্র এই সময় মাতুল সুরেন্দ্রনাথ, গিরীন্দ্রনাথ ও উপেন্দ্রনাথ (মাতামহের তৃতীয় ভাইয়ের পুত্র), এঁদের বন্ধু যোগেশচন্দ্র মজুমদার এবং প্রতিবেশী বিভূতিভূষণ ভট্ট ও তাঁর ছোট বোন নিরুপমা দেবী প্রভৃতিকে নিয়ে একটা সাহিত্য সভাও গঠন করেছিলেন। সপ্তাহে একদিন করে সাহিত্য সভার অধিবেশন হত।সেদিন সভায় সভ্যরা যে যাঁর লেখা পড়তেন। নিরুপমা দেবী সভায় যেতেন না। তিনি তাঁর দাদা বিভূতিবাবুর হাত দিয়ে লেখা পাঠিয়ে দিতেন। সাহিত্য সভার ‘ছায়া’ নামে হাতে-লেখা একটা মুখপত্রও ছিল। শরৎচন্দ্র এই সময়েই তাঁর বড়দিদি, দেবদাস, চন্দ্রনাথ, শুভদা প্রভৃতি উপন্যাস এবং অনুপমার প্রেম, আলো ও ছায়া, বোঝা, হরিচরণ প্রভৃতি গল্পগুলি রচনা করেছিলেন।

শরৎচন্দ্রের পিতা দেবানন্দপুরের ঘরবাড়ি সমস্ত বিক্রি করে এর-ওর কাছে চেয়ে চিন্তে কোন রকমে সংসার চালাতেন । শরৎচন্দ্র এই সময় বনেলী রাজ এস্টেটে অল্প কিছু-দিনের জন্য একটা চাকরি করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ একদিন পিতার উপর অভিমান করে সব ছেড়ে নিরুদ্দেশ হন এবং সন্ন্যাসী সেজে দেশে দেশে ঘুরে বেড়াতে থাকেন। এই ঘুরে বেড়াবার সময় যখন তিনি মজঃফরপুরে আসেন, তখন একদিন তাঁর পিতার মৃত্যু সংবাদ জানতে পারেন। এই জেনেই তিনি ভাগলপুরে এলেন। এসে কোন রকমে পিতার শ্রাদ্ধ সম্পন্ন করে ছোটভাই-দুটিকে আত্মীয়দের কাছে এবং ছোট বোনটিকে বাড়ির মালিক মহিলাটির কাছে রেখে (শরৎচন্দ্রের ছোটমামা পরে এঁকে নিজের কাছে নিয়ে এসেছিলেন এবং তিনিই এঁর বিয়েও দিয়েছিলেন) ভাগ্য অন্বেষণে কলকাতায় এলেন।

কলকাতায় এসে তিনি উপেন মামার দাদা কলকাতা হাইকোর্টের উকিল লালমোহন গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে ওঠেন এবং তাঁর কাছেই ৩০ টাকা মাহিনায় হিন্দি পেপার বুকের ইংরাজি তর্জমা করার একটা চাকরি পান। শরৎচন্দ্র লালমোহনবাবুর বাড়িতে মাস-ছয়েক ছিলেন। এর পর (জানুয়ারী ১৯০৩) এখান থেকে বর্মায় চলে যান। বর্মায় গিয়ে লালমোহনবাবুর ভগ্নীপতি রেঙ্গুনের অ্যাডভোকেট অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে ওঠেন।

শরৎচন্দ্র রেঙ্গুন যাওয়ার দু-একদিন আগে কলকাতার বৌবাজারে সুরেন মামা ও গিরীন মামার সঙ্গে দেখা করতে গেলে (এঁরা দুজনেই কলকাতায় কলেজে পড়তেন) গিরীন মামার অনুরোধে বসে সঙ্গে সঙ্গেই একটা গল্প লিখে কুন্তলীন প্রতিযোগিতায় পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু গল্পটিতে নিজের নাম না দিয়ে সুরেনবাবুর নাম দিয়েছিলেন। গল্পটির নাম ‘মন্দির’। দেড়শ গল্পের মধ্যে ‘মন্দির’ সর্বশ্রেষ্ঠ বিবেচিত হয়েছিল।

শরৎচন্দ্র রেঙ্গুনে গেলে কিছুদিন পরে মেসোমশায় অঘোরবাবু বর্মা রেলওয়ের অডিট অফিসে তাঁর একটা অস্থায়ী চাকরি করে দেন। বছর দুই পরে হঠাৎ অঘোরবাবুর মৃত্যু হয়। তখন তাঁর পরিবারবর্গ রেঙ্গুন ছেড়ে দেশে চলে আসেন। এই সময় শরৎচন্দ্রের রেলের অডিট অফিসের চাকরিটিও চলে যায়। শরৎচন্দ্র তখন তাঁর রেঙ্গুনের এক বন্ধু গিরীন্দ্রনাথ সরকারের সঙ্গে পেগুতে যান। পেগু রেঙ্গুন থেকে ৪৫ মাইল উত্তরে। পেগুতে গিয়ে তিনি গিরীনবাবুর বন্ধু অবিনাশ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে অনেক দিন ছিলেন। অবিনাশবাবুর বাড়ি ছিল শরৎচন্দ্রের জন্মস্থান দেবানন্দপুরের অদূরে বৈদ্যবাটীতে। তাই অবিনাশবাবু সেই বিদেশে শরৎচন্দ্রকে নিজের দেশের লোক হিসাবে খুবই আদর-যত্নে রেখেছিলেন।

অবিনাশবাবুর বাড়িতে থাকাকালে বর্মার পাবলিক ওয়ার্কস একাউন্টস অফিসের ডেপুটি একজামিনার মণীন্দ্রকুমার মিত্রের সঙ্গে শরৎচন্দ্রের একদিন পরিচয় হয়। মণিবাবু শরৎচন্দ্রকে বেকার জেনে পরে ১৯০৬ খ্রীষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে নিজের অফিসে তাঁর একটা চাকরি করে দেন।শরৎচন্দ্র এই চাকরি পেয়েই পেগু থেকে রেঙ্গুনে চলে আসেন। এই চাকরি পাওয়ার আগে শরৎচন্দ্র মাঝে নাঙ্গলবিনে কিছুদিন এক ধানের ব্যবসায়ীর সঙ্গে কাজ করেছিলেন। শরৎচন্দ্র মণিবাবুর দেওয়া এই চাকরিই ১৯১৬ খ্রীষ্টাব্দের এপ্রিল পর্যন্ত করেছিলেন।১৯১২-তে শরৎচন্দ্রের অফিস বর্মার একাউন্টেন্ট জেনারেল অফিসের সঙ্গে মিলিত হয়েছিল।

শরৎচন্দ্র রেঙ্গুনে থাকার সময় বেশির ভাগ সময়টাই থেকেছেন শহরের উপকণ্ঠে বোটাটং-পোজনডং অঞ্চলে। এখানে শহরের কলকারখানার মিস্ত্রীরাই প্রধানত থাকত। শরৎচন্দ্র মিস্ত্রীদের সঙ্গে অবাধে মেলামেশা করতেন। তিনি তাদের চাকরির দরখাস্ত লিখে দিতেন, বিবাদ-বিসংবাদ মিটিয়ে দিতেন, অসুখে বিনামূল্যে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করতেন, বিপদে সাহায্যও করতেন। মিস্ত্রীরা শরৎচন্দ্রকে অত্যন্ত শ্রদ্ধাভক্তি করত এবং দাদাঠাকুর বলে ডাকত। শরৎচন্দ্র এদের নিয়ে একটা সঙ্কীর্তনের দলও করেছিলেন।

শরৎচন্দ্র মিস্ত্রীপল্লীতে থাকার সময় তাঁর বাসার নীচেই চক্রবর্তী উপাধিধারী এক মিস্ত্রী থাকত। ঐ মিস্ত্রীর শান্তি নামে একটি কন্যা ছিল। চক্রবর্তী এক প্রৌঢ় ও মাতাল মিস্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কন্যার বিয়ের ব্যবস্থা করে। চক্রবর্তীর কন্যার কিন্তু এই বিবাহে ঘোর আপত্তি থাকে, তাই চক্রবর্তীর কন্যা একদিন তাকে ঐ বিপদে রক্ষা করবার জন্য শরৎচন্দ্রের পায়ে পড়ে তাঁকে অনুরোধ করে। তখন শরৎচন্দ্র বাধ্য হয়ে নিজেই তাকে বিয়ে করেছিলেন।

শরৎচন্দ্র স্ত্রী শান্তি দেবীকে নিয়ে বেশ সুখেই ছিলেন। তাঁদের একটি পুত্রও হয়। পুত্রের বয়স যখন এক বৎসর, সেই সময় রেঙ্গুনেই প্লেগে আক্রান্ত হয়ে শান্তি দেবী এবং শিশুপুত্র উভয়েরই মৃত্যু হয়। স্ত্রী ও পুত্রকে হারিয়ে শরৎচন্দ্র তখন গভীর শোকাহত হয়েছিলেন।

শান্তি দেবীর মৃত্যুর অনেকদিন পরে শরৎচন্দ্র ঐ রেঙ্গুনেই দ্বিতীয়বার বিবাহ করেন। বিবাহের সময় পর্যন্ত শরৎচন্দ্রের এই দ্বিতীয়া স্ত্রীর নাম ছিল মোক্ষদা। বিবাহের পর শরৎচন্দ্র তাঁর মোক্ষদা নাম বদলে হিরণ্ময়ী নাম দিয়েছিলেন এবং তখন থেকে তাঁর এই নামই প্রচলিত হয়। বিয়ের সময় হিরণ্ময়ী দেবীর বয়স ছিল ১৪।

হিরণ্ময়ী দেবীর বাবার নাম কৃষ্ণদাস অধিকারী। তাঁর মূল বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় শালবনীর নিকটে শ্যামচাঁদপুর গ্রামে। কৃষ্ণবাবু তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুর পর আট বছরের কনিষ্ঠা কন্যা মোক্ষদাকে সঙ্গে নিয়ে ভাগ্যান্বেষণে এক মিস্ত্রী বন্ধুর কাছে রেঙ্গুনে এসেছিলেন। তাঁর পুত্র ছিল না। ক্ষীরোদা, সুখদা ও অপর একটি কন্যার আগেই বিয়ে দিয়েছিলেন।

হিরণ্ময়ী দেবী যখন রেঙ্গুনের মিস্ত্রীপল্লীতে তাঁর বাবার কাছে থাকতেন, সেই সময় শরৎচন্দ্রের সঙ্গে তাঁর বাবার বিশেষ পরিচয় হয়। এই বিশেষ পরিচয়ের জোরেই হিরণ্ময়ী দেবীর বাবা একদিন সকালে কন্যাকে সঙ্গে নিয়ে শরৎচন্দ্রকে অনুরোধ করে করে বলেন-আমার মেয়েটির এখন বিয়ের বয়স হয়েছে। একে সঙ্গে নিয়ে একা বিদেশ বিভুঁইয়ে কোথায় থাকি! আপনি যদি অনুগ্রহপূর্বক আমার এই কন্যাটিকে গ্রহন করে আমায় দায়মুক্ত করেন তো বড় উপকার হয়। আর একান্তই যদি না নিতে চান তো, আমায় কিছু টাকা দিন। আমি মেয়েকে নিয়ে দেশে ফিরে যাই। দেশে গিয়ে মেয়ের বিয়ে দিই!

কৃষ্ণবাবু শেষে শরৎচন্দ্রের কাছে টাকার কথা বললেও, তিনি বিশেষ করে শরৎচন্দ্রকে অনুরোধ করেন, যেন তিনিই তাঁর কন্যাটিকে গ্রহণ করেন।

শরৎচন্দ্র প্রথমে অরাজী হলেও কৃষ্ণবাবুর অনুরোধে শেষ পর্যন্ত তাঁর কন্যাকে বিয়ে করেন।
হিরণ্ময়ী দেবী নিঃসন্তান ছিলেন। বিয়ের সময় পর্যন্ত হিরণ্ময়ী দেবী লেখাপড়া জানতেন না। পরে শরৎচন্দ্র তাঁকে লিখতে ও পড়তে শিখিয়েছিলেন। হিরণ্ময়ী দেবী ছেলেবেলা থেকেই শান্তস্বভাবা, সেবাপরায়ন ও ধর্মশীলা ছিলেন। শরৎচন্দ্র তাঁকে নিয়ে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সুখে শান্তিতেই কাটিয়ে গেছেন।

শরৎচন্দ্র রেঙ্গুনে চাকরি করার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে প্রচুর পড়াশুনা, গান-বাজনা এবং সাহিত্য-চর্চাও করতেন। প্রথম দিকে অনেক দিন ছবিও এঁকেছেন। মিস্ত্রী-পল্লীতে বোটাটং-এর ল্যান্সডাউন স্ট্রীটে যখন তিনি একটা কাঠের বাড়ির দুতলায় থাকতেন, সেই সময় ১৯১২ খ্রীষ্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারী তারিখে তাঁর বাসার নিচের তলায় আগুন লাগে। সেই আগুনে তাঁর কয়েটি বইয়ের পান্ডুলিপি, কিছু অয়েল পেন্টিং এবং এক সাহেবের কাছ থেকে কেনা একটি লাইব্রেরী-সমেত তাঁর বাসাটিও পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

শরৎচন্দ্রের জীবনের শেষ ক’বছর শরীর আদৌ ভাল যাচ্ছিল না। একটা-না-একটা রোগে ভুগছিলেনই। ১৯৩৭ খ্রীস্টাব্দের গোড়ার দিকে তিনি কিছুদিন জ্বরে ভোগেন। জ্বর ছাড়লে ডাক্তারের উপদেশে দেওঘর বেড়াতে যান। সেখানে তিন-চার মাস থাকেন।

দেওঘর থেকে এসে কিছুদিন সুস্থ থাকার পর শরৎচন্দ্র সেপ্টেম্বর মাসে আবার অসুখে পড়লেন। এবার তাঁর পাকাশয়ের পীড়া দেখা দেয় এবং দেখতে দেখতে এই রোগ ক্রমেই বেড়ে যেতে লাগল। যা খান আদৌ হজম হয় না। তার উপর পেটেও যন্ত্রণা দেখা দেয়।

শরৎচন্দ্র এই সময় সামতাবেড়ে গ্রামের বাড়িতে থাকতেন।চিকিৎসা করাবার জন্য কলকাতার বাড়িতে এলেন। কলকাতায় ডাক্তাররা এক্স-রে করে দেখলেন, শরৎচন্দ্রের যকৃতে ক্যানসার তো হয়েছেই, অধিকন্তু এই ব্যাধি তাঁর পাকস্থলীও আক্রমণ করেছে।

এই সময় শরৎচন্দ্র একটি উইল করেন। উইলে তিনি তাঁর যাবতীয় স্থাবর ও অস্থাবর সম্পতি স্ত্রী হিরণ্ময়ী দেবীকে জীবনস্তত্বে দান করেন। হিরণ্ময়ী দেবীর মৃত্যুর পর কনিষ্ঠ ভ্রাতা প্রকাশচন্দ্রের পুত্র বা পুত্ররা সমস্ত সম্পতির অধিকারী হবেন, উইলে এ কথাও লেখা হয়।(হিরণ্ময়ী দেবী তাঁর স্বামীর মৃত্যর পর প্রায় ২৩ বছর বেঁচে ছিলেন। তাঁর মৃত্যু হয় ১৫ ভাদ্র, ১৩৬৭।)

কলকাতার তৎকালীন শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়, ডাঃ কুমুদশঙ্কর রায় প্রভৃতি শরৎচন্দ্রকে দেখে স্থির করলেন যে, শরৎচন্দ্রের পেটে অস্ত্রোপচার ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

ডাঃ ম্যাকে সাহেবের সুপারিশে শরৎচন্দ্রের চিকিৎসার জন্য তাঁকে বাড়ি থেকে দক্ষিণ কলকাতার ৫নং সুবার্বন হসপিটাল রোডে একটি ইউরোপীয় নার্সিং হোমে নিয়ে যাওয়া হল। কিন্তু এখানে শরৎচন্দ্রকে তাঁর নেশার জিনিস সিগারেট খেতে না দেওয়ায়, তিনি কষ্ট বোধ করতে লাগলেন।

এই নার্সিং হোমে সকালে ও বিকালে দেখা করবার নির্দিষ্ট সময় ছাড়া অন্য সময় কাকেও শরৎচন্দ্রের সঙ্গে দেখা করতে দিত না। তাছাড়া ইউরোপীয় নার্সরা এদেশীয় লোক বলে শরৎচন্দ্রের সঙ্গে নাকি ভাল ব্যাবহার করতেন না। এই সব কারনে শরৎচন্দ্র দুদিন পরে সেখান থেকে চলে এসে তাঁর দূর সম্পর্কীয় আত্মীয় ডাঃ সুশীল চ্যাটার্জীর ৪ নং ভিক্টোরিয়া টেরাসে অবস্থিত ‘পার্ক নার্সিং হোমে’ ভর্তি হলেন।

শরৎচন্দ্রের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংবাদ শুনে রবীন্দ্রনাথ তখন এক পত্রে লিখেছিলেন-
কল্যাণীয়েষু, শরৎ, রুগ্ন, দেহ নিয়ে তোমাকে হাসপাতালে আশ্রয় নিতে হয়েছে শুনে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হলুম। তোমার আরোগ্য লাভের প্রত্যাশায় বাংলা দেশ উৎকণ্ঠিত হয়ে থাকবে। ইতি ৩১।১২।৩৭

সেই সময়কার বিখ্যাত সার্জন ললিতমোহন বন্দোপাধ্যায় শরৎচন্দ্রের পেটে অপারেশন করেছিলেন।
অপারেশন করেও শরৎচন্দ্রকে বাঁচানো সম্ভব হল না।
অপারেশন হয়েছিল ১২।১।৩৮ তারিখে। এর পর শরৎচন্দ্র মাত্র আর চারদিন বেঁচে ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর দিনটা ছিল রবিবার, ১৯৩৮ খ্রীষ্টাব্দের ১৬ জানুয়ারী(বাংলা ১৩৪৪ সালের ২রা মাঘ)। এই দিনই বেলা দশটা দশ মিনিটের সময় শরৎচন্দ্র সকলের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৬১ বৎসর ৪ মাস।

রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে শরৎচন্দ্রের মৃত্যুসংবাদ শুনে ইউনাইটেড প্রেসের প্রতিনিধিকে বলেন-
‘ যিনি বাঙালীর জীবনের আনন্দ ও বেদনাকে একান্ত সহানুভূতির দ্বারা চিত্রিত করেছেন, আধুনিক কালের সেই প্রিয়তম লেখকের মহাপ্রয়াণে দেশবাসীর সঙ্গে আমিও গভীর মর্মবেদনা অনুভব করছি’।

এর কয়েকদিন পরে ১২ মাঘ কবি আবার শরৎচন্দ্রের মৃত্যু সম্পর্কে এই লিখেছিলেন-

যাহার অমর স্থান প্রেমের আসনে।
ক্ষতি তার ক্ষতি নয় মৃত্যুর শাসনে।
দেশের মাটির থেকে নিল যারে হরি
দেশের হৃদয় তারে রাখিয়াছে বরি।

সত্যিই তাই!যেন এক অনন্ত জীবনের জীবনী…

ক্রমশ

(কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সম্প্রদায়ের জাত্যাভিমানে আঘাত বা আরোপ- এ লেখনীর বিন্দুমাত্র উদ্দেশ্য নয়। যে কোনো প্রকার সাযুজ্য আকস্মিক কিংবা দৃশ্যপট নির্মাণে সংবন্ধিত।)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।