সাপ্তাহিক কোয়ার্কো ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ৫০)

পঞ্চাশ

এইরকম অপ্রত্যাশিত এবং অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়িয়ে যাওয়ায় দুজনের মন এমন মুষড়ে পড়েছে যে ট্যাক্সিতে উঠে দুজনের মুখ থেকে কথা হারিয়ে গেছে। আমার কানটা এখনও গরম হয়ে আছে। মাথাটা ঝা ঝা করছে। অনিচ্ছাসত্ত্বেও কর্তব্যের খাতিরে লুলিয়াকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য জোর করলাম। যাই হোক না কেন, মেয়েটা আমাকে একা ফেলে পালায়নি। আমার বিপদে ও আমার জন্য অপেক্ষা করেছে। ঢাকুরিয়া পার হয়ে যখন ট্যাক্সিটা সেলিমপুর পার হল তখন হঠাৎ লুলিয়া যেন একেবারে পাল্টে গেল। ও বলে উঠল, ‘অর্ক, লেটস সেলিব্রেট আওয়ার ইনসাল্ট টু ডে’। আমি ওর উচ্ছাস দেখে অবাক হয়ে বললাম, ‘মানে’? ও বলল, ‘আজ যা হল তারপর একটা জব্বর চেঞ্জ দরকার। ‘ও কি বলতে চাইছে আমার কাছে এখনও তা পরিষ্কার হল না। লুলিয়া আমার মুখ দেখে সেটা বুঝে বলল, ‘আরে হাদারাম চল আজ আমার বাড়িতে পার্টি করি। তারপর তুমি গুড বয়ের মতো বাড়ি ফিরে যেও’। হঠাৎ লুলিয়ার কথাগুলো মনের গ্লানি আর অপমানে কিছুটা প্রলেপ দিয়ে দিল। খুব ভালো একটা আইডিয়া ভেবেছে, লুলিয়া। সত্যি একটু ডোপিং দরকার। অপমানের স্মৃতি বাড়িতে বয়ে নিয়ে গেলে সারা রাত ঘুমোতে পারতাম না। শ্রেয়ানও নেই যে শ্রেয়ানের এটিএম খোলাপাবো। শ্রেয়ান থাকলে এটিএম অর্থাৎ ‘অল টাইম মাল ‘সর্বদা রেডি। যাইহোক লুলিয়াকে বললাম, তোমার আইডিয়া খুব ভালো কিন্তু তোমার ছেলে? লুলিয়া বললো, ‘গ্যারেজ। মানে কাকার বাড়িতে। ‘ আমি খুশি হলাম। ট্যাক্সি দাঁড় করিয়ে একটা স্কচের এক লিটারের বোতল নিয়ে নিলাম। সবশেষে সব প্রস্তুতি নিয়ে, লুলিয়ার সঙ্গে লুলিয়াকে বাড়িতে ঢুকলাম। ঘড়িতে বাজে পৌনে নোটা। লুলিয়াকে যতই দেখছি ততই অবাক হচ্ছি। মেয়েটা যেন তরল পদার্থ যেমন যে পাত্রে থাকে তার আকার ধারণ করে। লুলিয়া তেমনি যখন তখন মুড পাল্টে ফেলতে পারে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে সব আয়োজন করে নিজের ডাইনিং রুমটাকে একটা পারফেক্ট ‘ওয়াইন এন্ড ডাইন ‘ পরিবেশ বানিয়ে দিল। বড়লাইট অফ করে কম পাওয়ারের বালব জ্বালিয়ে দিলো। হালকা করে মিউসিক চালিয়ে দিলো। স্টার্টারের কাবাব আর কাজু বাড়ির ডিজাইনার প্লেটে সাজিয়ে আনলো। তার সঙ্গে নিয়ে এল টাটকা কাটা স্যালাড। সদা বরফ আমার হাতের কাছে দিয়ে বলল, ‘মেহেফিল তৈয়ার হুজুর। আপ জাম বানাইয়ে। আমি ছোট করে একটু ফ্রেশ হয়ে আসি। ‘আমি সম্মতি জানাতেই লুলিয়া বেডরুম এ ঢুকে গেল।
আজ সন্ধ্যার ভোগান্তির জন্য লুলিয়া কি নিজেকে দায়ী করছে? তাই হয়তো আমার মুডটা ঠিক করার জন্য এতটা মেলে ধরেছে নিজেকে আমার কাছে। বসে আছি বেশ কিছুক্ষন ধরে যত তৎপরতার সঙ্গে বাড়িতে এসেই ওর ‘মেহেফিল’ সাজিয়ে নিয়েছিল এখন ততটাই দেরি করছে ফ্রেশ হয়ে আসতে। ধীরে ধীরে দুপেগ বানিয়ে ফেললাম। লুলিয়ার বাড়ি, লুলিয়ার তৈরি পরিবেশে বসে আছি তাই স্বাভাবিক ভাবে লুলিয়ার কথাই মাথায় ঘুরছে। লেকের পাশে লুলিয়ার সঙ্গে সেই অন্তরঙ্গ মুহূর্ত গুলোর কথা মনে পড়ছে। তারই রেশ ধরে এখনকার এই পরিবেশে পরিস্থিতি কোনদিকে মোড় নিতে পারে ভেবেই শিরদাঁড়ার নিচটা শিরশির করে উঠল। হঠাৎ বেডরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে এলো লুলিয়া। মিষ্টি কোলনের গন্ধে প্রাণ জুড়িয়ে গেল। লুলিয়ার দিকে তাকিয়ে আমি সন্মোহিত হয়ে গেলাম। অপূর্ব এক সাদা নাইটি গাউন পরে বেরিয়ে এসেছে লুলিয়া। শরীরের সব খাঁজ গুলো স্পষ্ট হয়ে ফুটে আছে। বুকের সুডৌল সুধার পাত্র দুটি সিল্কের গিফ্টপ্যাক ঠেলে যেন বেরিয়ে আসতে চাইছে। আমি অবাধ্য চোখ আর মনকে বস রাখার চেষ্টা করে চলেছি। আমার যেন কেবলি মনে হচ্ছে লুলিয়ার এই সাজ, আমার চোখে নিজেকে সুন্দর করে মেলে ধরার জন্য। লুলিয়া আমার পাশে এসে বসে বলল, সরি অর্ক, একটু দেরি হয়ে গেল।’ নাও এবার শুরু করো। ‘বলে ও আমার তৈরি করে রাখা দুটো পেগের একটা আমার হাতে তুলে দিল, অন্যটা ও হাতে নিল. এরপর আরও কয়েকটা পেগ চলার পর নেশা বেশ জমে উঠল। এদিকে রাতো বেড়ে চললো। মাঝে মাঝে কথা বার্তাও চলতে লাগলো আমি মুগ্ধ হয়ে মাঝে মাঝে ওর দিকে তাকিয়ে থাকছিলাম। লুলিয়া বলল, “কি দেখছো অর্ক? “। আমি বললাম, “ইউ আর লুকিং সো এট্রাক্টিভ। মনে হচ্ছে ইউ হ্যাভ জাস্ট কাম ফ্রম হেভেন। “। লুলিয়া এবারে এক কান্ড করলো আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “রিঅ্যালি সো? “। আমার সংযমের বন্ধ ভেঙে গেল। আমিও ওকে জড়িয়ে ধরে ওর ঠোঁটে আমার ঠোঁট চেপে ধরলাম। কিছুক্ষন পর লুলিয়া বলল, “বেডরুমে চলো”। তারপর দুটো শরীরে মিলেমিশে একাকার হয়ে সুখের সাগরে ভেসে চললাম।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।