সাপ্তাহিক কোয়ার্ক ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ৫৭)

সাতান্ন

ডঃ চোঙদারের ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে এসে লুলিয়ার ঘরে এসে বসেছি । লুলিয়া বুদ্ধিমতী ঠিকই কিন্তু আমার মনে ধন্দ লাগছে, ও কি এতো বুদ্ধিমতী যে মাত্র আধঘন্টার মধ্যে ঘরিমানে টাইমমেশিন এবং রামকৃষ্ণের হাতের আঙুলের সংখ্যা দেখে সমাধান করে ফেলবে? ধাঁধাঁটা আজি ওকে আমি বলেছি তারপর ঘর থেকে ও চলে গেছে । বড়জোর আধঘন্টা খানেক সময় পড়ে ফিরে এসেছে । যে ধাঁধা আমি এতক্ষনের চেষ্টায় সমস্ত ব্রেন তোলপাড় করিয়ে সবে সমাধান করেছি ও তা মাত্র আধঘন্টা খানেকের মধ্যে সমাধান করে ফেললো তা এক কোথায় অসম্ভব । এতো স্পেসিফিক বলা ওর পক্ষে সম্ভব নয় । আমি সিধান্ত করলাম ধাঁধাঁটা আর সমাধান লুলিয়া আগে থেকে জানত ।কিন্তু লুলিয়া জানলো কি করে? লুলিয়া কি তাহলে আমার শত্রুপক্ষের লোক? তাহলে ও কি আমার সঙ্গে অভিনয় করছে? এর আগেও ডঃ চোঙদারের স্ত্রী বলে একজনকে চালানোর চেষ্টা করা হয়েছে । লুলিয়াও কি সেইরকম শত্রুপক্ষের প্লান্ট করা লোক? ভাবতেই শিরদাঁড়াটার মধ্যে দিয়ে একটা শিরশিরে অনুভূতি চলে গেল । কিন্তু এই ভাবনাটার মধ্যেও একটা ধন্দ রয়ে গেল । স্বামী নিরুদ্দেশ, বোবা একটা ছেলে নিয়ে অসহায় একটা মহিলা কি এমন ষড়যন্ত্রের ভাগিদার হতে পারে? নাকি সবকিছুই মিথ্যে সাজানো হয়েছে । এবং সাজানো হয়েছে আমাকে ফাঁদে ফেলার জন্য । আবার এটাও হতে পারে ওরা লুলিয়ার স্বামী মিঃ বিজয়নকে আটকে রেখেছে । স্বামীকে বাঁচাতেই হয়তো লুলিয়া অপহরণকারীদের নির্দেশ অনুযায়ী আমার সঙ্গে অভিনয় করে যাচ্ছে । তবে আমার এখন একটা কথা মনে হচ্ছে যে লুলিয়া এবং অপহরণকারীরা চাইছে যে আমি ডায়েরিটা পাই । ঘটনার আকস্মিকতায় এখনও লুলিয়াকে বলা হয়নি যে ডায়েরিটা পেয়ে গেছি ।লুলিয়াকে যে কাজে লাগানো হচ্ছে এবং লুলিয়ার অভিনয় যে আমি ধরে ফেলেছি সেটা বুঝতে দিলে হবে না ।যদি আমার শত্রুপক্ষ লুলিয়াকে কাজে লাগিয়ে আমার গতিবিধি এবং ভাবনা চিন্তা ট্রাক করতে পারে, তাহলে সেই সুযোগ আমিও কাজে লাগিয়ে আমিও ওদের মিসগাইড করতে পারি । আবার সত্যি যদি ওর স্বামীকে আটকে রেখে ওকে কাজে লাগানো হয়ে থাকে তাহলেও ওদের বিপদ বাড়বে বই কমবে না ।কারণ আমার চলে যাওয়ার পরই লুলিয়া বা ওর পেছনের লোক গুলো চেক করবে যে ওই টাইলের নীচে রাখা ডায়েরিটা আছে কিনা নেই দেখলেই এবং পাওয়া সত্ত্বেও লুলিয়াকে না জানানোয় ওরা বুঝে ফেলবে যে আমি ওদের চক্রান্ত জেনে ফেলেছি খানিকটা ।এতে ওরা সাবধান হয়ে যাবে এবং আমার উপকারের বদলে অপকার হবে বেশি । খুব দ্রুত নতুন আইডিয়া একটা বের করলাম ।
ডঃ চোঙদারের ঘরে লুলিয়া কথা গুলো বলার পর আমি কথা ঘুরিয়ে বললাম “আমাকে একবার আর্জমার কাছে যেতে হবে । তবে তার আগে এক কাপ চা পেলে খুব ভালো হত । দরকার হলে আমি এসে সার্চ করব”। লুলিয়া অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমার সঙ্গে ওপরে উঠে এল। ও কিচেনে চা তৈরি করতে গেল । ওর ছেলেটা আমার কাছে বসে খেলছে ।প্লাস্টিকের, A, B, C, D ও 1,2,3 একটা সেট নিয়ে নারা চারা করছে ।আমি মাঝে মাঝে ওকে সঙ্গ দিচ্ছি । ওর দিকে তাকিয়ে ভাবছি ছেলেটা কি লুলিয়ার না এটাও সাজানো? এমন সময় লুলিয়া দু কাপ চা নিয়ে এসে ঘোরে ঢুকলো । বলল,”জ্বালাচ্ছে তোমায়?”বললাম “না না । তোমার ছেলে কিন্তু খুব বুদ্ধিমান । একটা লেটারকে ইশারায় চিনিয়ে দেওয়ার পর অন্য লেটারের সঙ্গে মিশিয়ে দিলে ও ঠিক চিনে বের করে দিচ্ছে “। লুলিয়া আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে কিন্তু চোখ দুটো অন্যমনস্ক । আমি সুযোগ বুঝে জিজ্ঞেস করলাম,”তোমার ছেলে সিজার বেবি নিশ্চই?”লুলিয়া মুখে কিছু না বলে ঘাড় নেড়ে শুধু হাসল। আমি বললাম,”ঠিকই ধরেছি । সিজারিয়ান বেবির ইমিউনিটি কম হলেও বুদ্ধি বেশি হয় “। লুলিয়া সে কথার কোনো উত্তর না দিয়ে হঠাৎ জিজ্ঞাসা করল,”তুমি আবার কবে আসছ?”। আমি বললাম,”লুলিয়া তুমি কিন্তু একটা দারুন আইডিয়া দিয়েছো । টাইম মেশিন মানে সত্যিই তো ঘড়ি হতে পারে । আমি বরং দেরি না করে এখনই আরেকবার ঘরটা ভালো করে দেখতে চাই । অবশ্য যদি তুমি পারমিশন দাও “। একথা বলে আমি আবদারের ভঙ্গিতে ওর হাতটা ধরলাম । ও খুব উৎসাহিত হয়ে বলল,”ও সিওর!আমিও তোমার সঙ্গে যাই? উইথ ইওর কাইন্ড পারমিশন “। বলেই আবদার করে আমার ধরা হাত দুটো নিজের বুকের কাছে টেনে নিল।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।