• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক কোয়ার্ক ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ৭৪)

চুয়াত্তর

সিঁড়ি দিয়ে যখন উঠছি দুজন লোকের গলার আওয়াজ পেলাম । বেশ নীচে থেকেই শোনা যাচ্ছে । একজন বাল্মীকি অপর্জন অপরিচিত । গলা শুনে বোঝাই যাচ্ছে খুব হাসি ঠাট্টা চলছে । একবার ভাবলাম বাল্মীকির সাগরেদ নাতো? খোলা দরজা দিয়ে ঢুকে দেখি সোফায় একটা লোক বসে আছে । বাল্মীকি দাঁড়িয়ে তার সাথে খোশ গল্প করছে । আমি ঘোরে ঢুকতেই লোকটি উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে অভিবাদন জানালো, “এসো এসো অর্ক বাবু । কতদিন পড়ে দেখা । প্রায় বছর পাঁচেক তো হবেই “। আমি একটু অবাক হয়েই ভদ্র লোককে আরেকটু দেখলাম ।প্রায় আমারি বয়েসি সুঠাম এবং সুন্দর । লম্বায় প্রায় ছয় ফুট হবে । টিকালো নাক আর চওড়া থুথনি । এরকম সুপুরুষ ব্যক্তিকে আগে কোথাও দেখে থাকলে তো ভোলার কথা না। কিন্তু হাসিটা খুব চেনা চেনা লাগছে । হঠাৎ মনে পড়লো এই হাসি আমি কোথায় যেন দেখেছি । প্রিন্সেপ ঘাটের নৌকোয় । এই সেই মাঝির ছদ্দবেশে পুনিত । আর্জমার মাফিক পুনিত হবে আমার পূর্ব পরিচিত । এই পরিচিতি নিয়ে ও আমার বাড়ি এসে উঠবে ।আমার প্রটেকশন এর জন্য আর্জমা নাকি ওর বেস্ট অফিসার কে নিযুক্ত করেছে । এইসব কথা নৌকাতেই হয়ে গেছে । কিন্তু কথা তো ছিল কাল বিকেলে আসবে পুনিত । হয়তো আমারই বোঝার ভুল হয়েছিল । আমাকেও এখন অভিনয় চালিয়ে যেতে হবে ঘোর শত্রু বিভীষণ রুপী বাল্মীকির জন্য । আমি হঠাৎ লাফিয়ে উঠলাম,”আরে পুনিত? হোয়াট এ এলিগ্যান্ট সারপ্রাইস! তুমি হঠাৎ এখানে মানে কলকাতায়? কবে এলে?”পুনিত আবার বসে পড়ে সোফায় বলতে শুরু করলো,”আরে বস আর বলো কেন । আমার একটা শুটিং হওয়ার কথা ছিল কলকাতায় । গত শনিবার এখানে আসি । হঠাৎ ডাইরেক্টর এর মা মারা যান গতকাল । কয়েকদিনের জন্য শুটিং ব্ন্ধ হয়ে গেল । আবার এদিকে পনেরো জনের সিডিউল ছিল কলকাতায় শুটিং এর । তাই এখন আমি ঝাড়া হাতপা। কোনো কাজ নেই ।তাই ভাবলাম কলেজ লাইফ এর বেস্ট ফ্রেন্ড অর্ক বাবুর সাথে কটা লাইফ কাটিয়ে আসি “। আমি বললাম,”বেশ করেছিস । আমার কাছেই কদিন থাক । সেই কলেজ এর পর তো আর দেখায় হয়নি । কি সুন্দর লাইফ ছিল বল?।
একটা কৃত্তিম দীর্ঘ্যশ্বাস ছাড়লাম আর আড়চোখে একটু দেখে নিলাম বাল্মীকি কে ।বুঝলাম পুনিত এসে ওর নকল পরিচয় অলরেডি বাল্মীকি কে দিয়ে রেখেছে । এতক্ষন আমার রিঅ্যাকশন দেখে বাল্মীকি আশা করি কনভিন্সড হয়েছে । তবে খুশি হয়নি । আমি একা থাকলে যে আড়াল পেতো। দুজন থাকলে তার ব্যাঘাত হবেই । বাল্মীকি কিচেন এ গেল। আমি আর পুনিত গল্প চালিয়ে যেতে লাগলাম। কিছুক্ষন পর বাল্মীকি চা নিয়ে এলো । পুনিত বেশ নির্লজ্জের মতো বলল, “মিকী সাহেব চায়ের সাথে একটু টা হোল ভালো হত না? এই ধরো পকোড়া বা এরম জাতীয় কিছু?”। পুনীতের মুখে মিকি নাম টা শুনে অবাক হয়ে আমি আর বাল্মীকে মুখ চাওয়া চাওই করলাম । আমাদের রিঅ্যাকশন দেখে পুনিত বলল,”কী কিছু ভুল বললাম? অন্যায় আবদার করে ফেললাম তাই না?”। আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম,”নানা । আসলে আমাদের সাথে একটা ছেলে থাকে সেও ওই নামে বাল্মীকিকে ডাকে “। পুনিত হেসে বলল,” ও তাই নাকী? ফাইন! মিকী বাবু পকোড়া হোক তালে? “বাল্মীকি ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানিয়ে কিচেনে চলে গেল । শ্রেয়ানের কথা মনে পড়তেই আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল । কী জানি কেমন আছে ছেলেটা । ধাঁধার সমাধান করে শ্রেয়ান আর Quarko যদি দুটোই পাওয়া যায়, তাহলে শ্রেয়ানকে পেয়ে বেশি খুশি হবো ।পুনিত বলল,”তা তোমার শ্রেয়ান কোথায়?দেখছিনাতো?”। আমি গোড়া থেকে সব খুলে পুনিত কে বললাম শ্রেয়ানের চরিত্র বজায় রেখেই । মানে ঠিক যেন আমার পুরোনো বন্ধুকে বর্তমান ঘটনাবলী সম্মন্ধে অবহিত করছি । ও খুব মন দিয়ে সব শুনলো । আর্জমার ইন্সট্রাকশন অনিযায়ী আমরা কেউ কারুর ক্যারেক্টর থেকে বেরোবো না। মানে পুনি যেকদিন থাকবে আমরা ঘোরে একা থাকলেও অভিনয় চালিয়ে যাব । কারণ আমার এবং আর্জমার সন্দেহ যে আমার বাড়ির মধ্যে গোপন ক্যামেরা বা মাইক্রোফোন আছে । বাল্মীকী গরম গরম পকোড়া ভেজে দিয়ে গেল । পুনিত আমি খেতে খেতে আলোচনা চালিয়ে গেলাম ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।