সাপ্তাহিক কোয়ার্ক ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ৮৪)

চূড়াশি

আলমারির ভেতরের চোরা কুঠুরি খুলে গেল । বোঝাই যাচ্ছে এই ঘরের পরে আর একটা ঘর আছে যার ঢোকার রাস্তা এই আলমারির ভেতর দিয়ে । টর্চ জ্বালিয়ে পুনিত ভেতরের ঢুকে গেল । ভেতরের ঘরটা ঘুট ঘুটে অন্ধকার বাইরে থেকেই তা বোঝা যাচ্ছে। ঘরটা কত বড়, কি আছে, তাই এখনও বোঝা যাচ্ছে না । এটা একটা ছোট কয়েদ খানা বা বড় সিন্দুক হতে পারে । ভেতর থেকে পুনিতের গলা পেলাম, “দাদা চলে আসুন ভেতরে।” আমি আলমারির মধ্যেদিয়ে চোর কুটুরিতে ঢুকলাম । অন্ধকারে ঠাহর করে পা রাখলাম । পুনিতের টর্চের আলো ঘরের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে লাগলো । ওই আলোয় আন্দাজ করলাম ঘরটা বেশ বড় । চোখে পড়ল ঘরের এক কোনায় একটা শতরঞ্জি, জলের কুঁজো আর একটা মগ । পুনিত সব দেয়ালে আলো ফেলে বলল, “দেখুন এই ঘরে আলোর কোনো ব্যবস্থা নেই “। সিলিং এর দিকে আলো ফেলে দেখল পুনিত।আমি বললাম,” খুব সম্ভবত এটা রামদার প্রাইভেট জেল হেফাজত বা টর্চার রুম “। প্রবেশ দ্বার ছাড়া ঘরটা নিশ্ছিদ্র । কোনো জালনা নেই বা দরজা নেই । একটা ভেন্টিলেটর আছে তাও আবার কিছু দিয়ে ঢাকা । পুনিত বলল,”হ্যাঁ এটা হতেই পারে। মালটার তো মেইন ব্যবসা ছিল কিডন্যাপিং । কাবারির ব্যবসা ছিল ওয়াস করার জন্য “।টর্চের আলোর ছটায় আমার চোখে একটা চকচকে জিনিস পড়লো । আমি পুনিতের কাছ থেকে টর্চটা নিয়ে ওই জিনিসটার ওপর আলো ফেললাম । কাছে গিয়ে চিনতে পারলাম ওটা আমারই কার্ড হোল্ডার সিলভার কালারের কার্ড হোল্ডারটা আমি দিল্লি থেকে কিনেছিলাম । পুনিতকে বললাম,”বুঝলে ভাই আমাকে কিডন্যাপ করে এই খানেই রেখেছিলো । এই দেখো আমার কার্ড হোল্ডার “। পুনিত সেটা হাতে নিয়েবললো,”তালে রাম খুন হওয়ার কারণ হল আপনি “। হঠাৎ এক মড় মড় শব্দে আমরা চমকে উঠলাম । বিদ্যুৎ বেগে পুনিত ছুটে গেল আলমারির প্রবেশ দ্বারের দিকে । আমি টর্চ নিয়ে ওকে ফলো করলাম । একি আলমারির দরজাটা ব্ন্ধ হয়ে যাচ্ছে । শব্দটা তারই । পুনিত তাড়াতাড়ি হাফ ব্ন্ধ হয়ে যাওয়া চোর কুটুরির দরজাটাকে চেপে ধরলো । দরজাটা তাও ধীরে ধীরে ব্ন্ধ হতে লাগলো । পুনিত আরও বলপ্রয়োগ করলো। নিজের শরীরের ওজন গেট ব্ন্ধ হওয়ার বিপরীত কাজে লাগাল ।পুনিতের গায়ে জোর আছে । দরজাটা আবার খুলতে লাগলো । হঠাৎ একটা লাঠির বাড়ি পুনিতের মাথায় পড়লো । সঙ্গে সঙ্গে ও মাথা চেপে আর্তনাদ করে বসে পড়লো । দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল ।
আমরা এখন বন্দি । কেউ বাইরে থেকে লিভার ঘুরিয়ে দরজা ব্ন্ধ করে দিয়েছে । আমি পুনিতকে গিয়ে ধরে ফেললাম। বললাম,”পুনিত ভাই কি হল ঠিক আছো?” ও বললো, ” না মাথাটা মনে হয়ে ফেটেছে “। আমি বললাম,”মুখ দেখতে পেয়েছ? পুনিত বলল,”না এই নিন এই বোতামটা বার করে টিপুন “। আমি বললাম,”কি এটা?”। পুনিত অধর্য্য হয়ে বলল,”টিপুন কুইক “। আমি টিপতে থাকলাম। আমি পুনিতের দিকে টর্চ মেরে দেখলাম ও মাথায় হাত দিয়ে চেপে ধরে বসে আছে । মাথা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে । আমি বোতামটা অনুভব করে টিপতে লাগলাম । হঠাৎ মনে হল যেন দম ব্ন্ধ হয়ে আসছে ।টর্চের আলোয় দেখলাম ঘরটা ধোঁয়ায় ভরে যাচ্ছে । উপরের ভেন্টিলেটার থেকে গল গল করে ধোঁয়া ছাড়া হচ্ছে । তার মানে এটা একটা গ্যাস চেম্বার । পুনিত ধীরে ধীরে মাটিতে এলিয়ে পড়লো । আমারো দম ব্ন্ধ হয়ে আসছে । আসতে আসতে আমিও জ্ঞান হারাচ্ছি ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।