সাপ্তাহিক কোয়ার্ক ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ৭৯)

ঊনআশি

রহস্য কোন দিকে মোর নেবে কে জানে? অনেক কিছুর আশঙ্কা হচ্ছে আমার মনে । তাহলে শ্রেয়ানও কি লুলিয়ার মতো শত্রুপক্ষের লোক? লুলিয়া, বাল্মীকি, শ্রেয়ান সকলেই – নাঃ আর ভাবতে পারছিনা । শেষকালে পাগল না হয়ে যাই । আমার অবাক হওয়ার পালার কি শেষ নেই? মিনিট খানেক চুপ করে বসে থেকে প্রাথমিক শকটা কাটিয়ে উঠলাম । নিজেকে বোঝালাম যাই হোকনা কেন মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে । আবার ভাবতে লাগলাম শ্রেয়ান কি কোনো ভাবে হামবার্গ ইউনিভার্সিটির সাথে যুক্ত? ফোটো ফ্রেমের তাকটা ভালো করে নাড়াচাড়া করে দেখ্লাম । আর তেমন কিছু পেলাম না । আর একটা খটকা লাগলো দেখে যেটা খটকা লাগলো সেটা হল ‘G’ লেখা লকেট । শ্রেয়ান রায়ের কাছে কেন ‘G’লেখা লকেট? তাহলে কি শ্রেয়ান ডঃ চোঙদারকে চিঠি লেখা গোগোল? যদি তাই হয় তাহলে শ্রেয়ান তার আঙ্কল কান এর সঙ্গে ওর সম্পর্কটাকে কেন লুকিয়ে রাখলো? নীচের তাক থেকে সব কাগজপত্র, বই আর ফাইল গুলো টেনে বেরকরলাম । বইগুলো প্রথমে তুলে তুলে দেখলাম ।পাঁচ ছটা অতি সাধরন বেস্ট সেলার ইংরেজি বই । কাগজ পত্র সবই নেড়ে চেরে দেখলাম । একটা ফাইলে ওর সব দরকারি কাগজ পত্র।, বই আর ফাইল গুলো টেনে বের করলাম। বইগুলো প্রথমে তুলে তুলে দেখলাম ।পাঁচ ছটা বেস্ট সেলার ইংরেজি বই ।কাগজ পত্র ফাইল সব নেড়ে ছেড়ে দেখলাম ।একটা ফাইলে ওর সব দরকারি কাগোজপত্র যেমন মার্কশিট, ভোটারকার্ড, রেশন কার্ড ইত্যাদি ফটো কপি । আরিজিনাল কিছু নেই । কাগজ পত্র দেখে বুঝলাম শ্রেয়ান ওর আসল বাড়ির ঠিকানা, স্কুল, বয়েস আর অন্যান্য যেসব তথ্য বলেছে কিছু মিথ্যে বলেনি । আবার সব সত্যিও বলেনি । ডঃ চোঙদারের সাথে ওর পরিচয় আছে কোনোদিন বলেনি । একটা তথ্য আমি আবিষ্কার করলাম শ্রেয়ানের মায়ের নাম শ্রেয়সী রায় । নামটা পরেই আমার মনের অন্ধকার দূর হয়ে গেল । অর্ক বিক্রম চৌধুরী এতো বোকাও নয় যে দুয়ে দুয়ে চার করতে পারবে না । একটু আগের ফটো ফ্রেমে শ্রেয়ানের মায়ের মুখটা চেনা চেনা লাগার কারণ এবার বুঝতে পারলাম । ওনার মুখ আমি আগেও দেখেছি ডঃ চোঙদারের বাড়িতে ।ওনার ছোট বয়েসের ফ্যামিলি ফটো । ওই বারো তেরো বছরের মেয়েটি হল শ্রেয়ানের মা । দুটো ফটোর বয়েসের ফারাকটা অনেক বেশি থাকায় আমার মাথায় আসছিলো না । তার মানে শ্রেয়ানের মা বিয়ের আগে ডঃ চোঙদার ছিলেন । এই শ্রেয়সীর নাম ডঃ চোঙদারের ডায়েরিতে উল্লেখ আছে ।
কি আশ্চর্য ডঃ চোঙদার হলেন শ্রেয়ানের মামা । লোকতের ‘G’ হল গোগোল । আর গোগোলের “আঙ্কেল কান “হল ডঃ চোঙদার । মামা ও ভাগ্নের মধ্যে ভালোই যোগা যোগ ছিল । নিয়মিত টাকা পাঠাতেন মামা নিজের ভাগ্নেকে । নিজের পাওয়া ঘড়িও উপহার দিয়েছে ভাগ্নে গোগোলকে । তাহলে শ্রেয়ান পুরো ব্যাপারটা লুকোলো কেন আমার কাছ থেকে?তাহলে কি শ্রেয়ান পুরোদস্তুর উদ্দেশ্য নিয়েই
আমার সাথে আলাপ করে ক্রমশ আমার কাছের মানুষ হয়ে ওঠে । কিন্তু ওর উদ্দেশ্য কি ছিল?ওকি তাহলে Quarko হাসিল করতেই এইসব করছিলো? সত্যি আমার ভাবতে কষ্ট হচ্ছে । মাথাটা দপ দপ করছে। কষ্ট রাগ আর ঘৃনায় শরীরটা ঘামছে । কিন্তু এর চেয়েও বড় চমকটা আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো । ফিলগুলোর মধ্যে একটা খুলে আমার চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেল । আমার ফাইল ওটা । মানে আমায় নিয়ে দীর্য রিসার্চ করা একটি ফাইল । আমার লাইফহিস্ট্রি তুলে ধরা হয়েছে । যেন আমায় নিয়ে কেউ প্রজেক্ট রিপোর্ট জমা করেছে । সেখানে আমার ছেলেবেলার কিছু ফটো জার্মানির স্কুল এর ফাইল থেকে নেওয়া, আমার এডমিশন ফর্মের ফটোকপি, ভারতের স্কুল এবং কলেজ রেকর্ড, আমার অফিসের পার্সোনাল রেকর্ডার নথি, আমার আগের বাড়ি যেখানে ভাড়া থাকতাম তার তোলা ছবি এবং পেছনে লেখা সেই বাড়ির ঠিকানা । ওই ফাইলটা যেকোনো লোককে দিয়ে দিলে সে আমার ঠিকুজি কুষ্টি সব জেনে যাবে । এইভাবে কারুর বেপারে তথ্য জোগাড় করা সম্ভব? কি অধ্যাবসায় আর নেটওয়ার্ক থাকলে এরমটা করা সম্ভব ওই ফাইলেই আরেকটা জিনিস পেলাম । ডঃ চোঙদারের লেখা ডাইরির একটা ছেঁড়া পাতা । যার মধ্যে লেখা একটা নাম ও মোবাইল নম্বর । গোকুল কুন্ডু আর সম্ভবত তাড়ি নাম্বার । আমার চোখে যেন অন্ধকার নেমে আসছে । নিজেকে খুব বোকা আর অসহায় লাগছে । কিন্তু নাম্বারটা ফোনে করে পাওয়া গেল না। বলছে এই নাম্বার উপলব্ধ না ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।