সাপ্তাহিক কোয়ার্ক ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ১০১)

একশাে এক

আমি বেরিয়ে এলাম বাৰ্গেনস্টাইনের সুইট থেকে। আসার আগে জেনে নিয়েছি যে বাল্মীকি আমার বাড়ির ভেতর যে লােকটাকে মেরেছিল সে ওদের শত্রুপক্ষের লােক অর্থাৎ শ্রেয়ানের দলের লােক। লােকটা বাল্মীকি মানে এজেন্ট সদানন্দকে খুন করতে এসেছিল। কিন্তু সদানন্দ নিজেও ট্রেইন্ড তাই আত্মরক্ষার স্বার্থেই লােকটাকে খুন করে এবং নিজের দলের লােকের সাহায্যে লাশ পাচার করে দেয়। জগা বা জগন্নাথ সাহুকে SOAM-ই অ্যাপয়েন্ট করে। জগাই আমাকে কিডন্যাপ করেছিল। রামদাও জগার দলেরই লােক। কিন্তু জগা ডবল ক্রশ করে SOAM-কে। পরে গিয়ে হাত মেলায় শ্রেয়ানদের দলের সঙ্গে। তাই বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি স্বরূপ SOAM-এর লােকেরা জগাকে মেরে ফেলে। পুরাে মারেনা, আধমরা করে রাস্তায় ফেলে রেখে যায় আমার সামনে। যাতে ওর মুখ থেকেই শ্রেয়ানের ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পারি আমি। কিন্তু শ্রেয়ান খুব চালাকির সঙ্গে জগাকে সরিয়ে দেয় ফলে আমার কিছু জানাও হয় না।
যাইহােক ডঃ বার্গেনস্টাইনকে নিছক ভূয়াে আশ্বাস দিয়ে ওনার সাপাের্ট পাওয়া এনসিওর করেছি। আমার নিশ্চিত ধারণা যে একেবারে শেষ অধ্যায়ে RAS কিংবা গােকুল কুণ্ডু অথবা শ্রেয়ান যেই আমার প্রতিপক্ষ হােক তাদের সঙ্গে সম্মুখ সমর হবে। তাই আমার জনবল এবং অস্ত্রবল দুটোই প্রয়ােজন হবে। পুলিশ তাে সাথে আছেই। কিন্তু এ ধরণের যুদ্ধে কাঁটা দিয়ে কাটা তুলতে হয়। মােক্তারকে ডেকে নিয়ে ট্যাক্সিতে উঠলাম। সকালে বার্গেনস্টাইনের জন্য বিয়ার খেয়ে মাথাটা ঝিমঝিম করছে। এখন বেলা সাড়ে এগারােটা বাজে। বিশেষ কারণে আমাকে কিছুটা সময় কাটাতে হবে। ট্যাক্সিকে ঘুরিয়ে আমার অফিসের দিকে নিতে বললাম। মােক্তারকে বললাম অফিসে আমার একটু কাজ আছে। অফিসে যেতেই সকলে ছেকে ধরল। যদিও আমি সবার সঙ্গে খুব ইন্টিমেসি করি না। কিন্তু যেহেতু আমি দীর্ঘদিন অফিসে অনুপস্থিত তাছাড়া আমার বিপদের কথাটা অনেকেই শুনেছে। তাই কেউ বা কৌতুহলে আবার কেউ বা সহানুভূতির সঙ্গে দেখা করতে এল। মােক্তারকে অফিস ক্যান্টিনে লাঞ্চের ব্যবস্থা করে নিজের কেবিনে ঢুকলাম। বেতালদাকে ডেকে দুপুরের লাঞ্চটা আমার কেবিনেই সারতে বললাম। বেতালদা নিজেই সব ব্যবস্থা করে আমার কেবিনে চলে এলেন।
| দুপুরের খাওয়া খেতে খেতে আমি বেতালদাকে বেশির ভাগ ঘটনা ও তার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করলাম। কিছু কথা বিশেষ করে Quarko-র কথা গােপন রাখতে হবে তবে ঘটনা কোন দিকে গড়াচ্ছে এবং একটা এসপার ওসপার হতে যাচ্ছে সেটা বিশেষ করে বুঝিয়ে দিলাম। সেটা যে আলাপ আলােচনার মাধ্যমে হবে না, খুনােখুনি পর্যন্ত হতে পারে সেটা জানিয়ে দিলাম। বেতালদা আমার সব কথা খুব মনােযােগ সহকারে শুনলেন তারপর জিজ্ঞাসা করলেন “এখন তােমার প্ল্যান কি?” আমি বললাম “বেতালদা, যদি পারেন হাফ ডে ছুটি নিয়ে নিন। সারা দিনটা আমার সঙ্গে থাকুন। আপনাকে আমার খুব দরকার হবে। কিছু বিশ্বস্ত লােক আমার সঙ্গে থাকা দরকার”। বেতালদা উৎসাহিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন “তাহলে কি আপনি রহস্যের কিনারা দেখতে পাচ্ছেন?” আমি বললাম “না, তেমন গ্যারান্টি দিতে পারছি না। তবে চান্স আছে”। বেতালদা তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে বললেন “ঠিক আছে, আমি রাজি। একটু অপেক্ষা করুন আমি ছুটির দরখাস্ত করে আসি”। বেতালদা চলে গেলেন। মােক্তার খেয়ে এসে কেবিনে ঢুকল। ওকে বসালাম। একটা ফোনের অপেক্ষায় আছি। ফোনটা এলে তারপর আমার সঙ্গে কথা বলতে হবে। ফোনটা এল। রিসিভার তুলে ফোনটা ধরলাম। যে খবরের অপেক্ষায় ছিলাম সেটা পেলাম। সঙ্গে সঙ্গে আমাকে ফোন করলাম। বললাম যে আমি সব ধাঁধার সমাধান করে ফেলেছি। আর Quarko এখন আমার হাতে। এখনই ওর সঙ্গে দেখা করে আলােচনা করতে চাই। আর্যমা আমাকে প্রিন্সেপ ঘাটে আসতে বলল। ঠিক আগের মতােই ও আয়ােজন করে রাখবে। আমি আরও দুটো ফোন করে বেতালদা ও মােক্তারকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।