।। ত্রিতাপহারিণী ২০২০।। T3 শারদ সংখ্যায় সৌমি জানা

পুজোর ভোগ

পাড়ায় খুব নামডাক পাকড়াশী পরিবারের। সরকারের দাপুটে অফিসার ছিলেন সুবিমল পাকড়াশী। তাছাড়া পাড়ার ক্লাবে হাতখুলে চাঁদা দেন । সেই জন্যেই দূর্গা পুজোর আগে পূজো কমিটির প্রেসিডেন্ট কালু বাবু নিজে এসে অষ্টমীর ভোগ খাওয়ার আমন্ত্রণ করে যান তাদের প্রতিবছর।
কর্পোরেশনের মাঠে হয় পুজো । মণ্ডপের সামনে তাঁবু খাটিয়ে ভোগ খাওয়ার আয়োজন। মহাষ্টমীর দুপুরে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে এসেছেন পাকড়াশী দম্পতি। এ খাবার মুখে রোচে না ওদের , পুজোর কদিন শহরের নামীদামী রেস্তোরাঁয় আগে থেকে বুক করে রাখেন । তবু নামমাত্র মুখে তুলতে হবে এখানে , তা না হলে পাড়ার লোক বলবে তাদের নাক উঁচু। তাছাড়া ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্কটাও ভালো রাখতে হবে, কখন কাকে দরকার হয় কে বলতে পারে !
খেতে বসেছেন । খিচুড়ি , লাবড়া , বেগুনির পর এলো এবছরের স্পেশাল আইটেম ধোঁকার ডালনা। ধোঁকাগুলো এত কালচে কেন , পুড়িয়ে ফেলেছে না কি ? নাক সিঁটকোলেন পাকড়াশী গিন্নী।
কিছু বলার আগেই খানচারেক ধোঁকা পাতে ঢেলে দিলেন কালু বাবু ,” বৌদি খেয়ে দেখুন, একেবারে স্পেশাল অর্ডার দিয়ে বানিয়েছি। ”
উফ্ফ , কি জ্বালাতন ! এখন এই আধপোড়া কালো ধোঁকা গিলতে হবে। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন পাকড়াশীরা।
খাবারগুলো নিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করলেন। তারপর সুযোগ খুঁজে কেউ দেখছেনা বুঝে যখন খাবার ভর্তি শালপাতাগুলো ফেলতে যাবেন , শুনলেন পিছন থেকে চেঁচামেচি।
“এইতো খেয়ে গেলে তোমরা , আবার এসেছ ?” কালু বাবুর হেঁড়ে গলা।
” কই না তো , আমরা তো এই এলাম ” জবাব এলো মৃদু স্বরে।
এইবার বেশ কড়া সুরে বললেন কালু বাবু , ” বিনা পয়সায় খাবে বলে বস্তিশুদ্ধ সবাই চলে এসেছো দেখছি। এক হাতার বেশি খিচুড়ি পাবেনা কিন্তু এই বলে দিলাম। আর ধোঁকার ডালনা শুধু যারা চাঁদা দিয়েছে তাদের জন্যে। ”
” কিন্তু ঠাকুরের ভোগ তো সবার ” বললো কেউ একজন।
” যা পাচ্ছ তাই খাও , না হলে চলে যাও ” ,আবার কালু বাবুর হুঙ্কার।
এসব শুনে পাকড়াশী গিন্নী বললেন কর্তাকে ,” ইস , একটা কৌটো আনলে খাবারগুলো না ফেলে মনার মায়ের জন্য নিয়ে যেতাম। ওরাও তো ওই বস্তিতেই থাকে ।”
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।