গদ্যানুশীলনে সুদীপ ঘোষাল (গল্প সিরিজ)

গ্লুমি সানডে

একজন সংগীতশিল্পী গান শুনিয়ে এপাড়া ওপাড়া ঘুরে জীবিকানির্বাহ করেন। তার নিজের বলতে কেউ নেই ।হঠাৎ প্রচার হয়ে গেলো তার গান শুনে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পরছে । বাতাসে ভাসতে ভাসতে এই বার্তা প্রচার হয়ে গেলো গ্রাম থেকে গ্রামে । সুমনদা বসে আছেন সকাল বেলা । হঠাৎ দাদার বন্ধুর ফোন এলো । প্রায় দশ মিনিট ফোনে কথা বলার পরে দাদা পায়চারী শুরু করলেন ।সহকারি তোতন বললেন , কি হলো কি । অত চিন্তা কিসের দাদা?

সুমনদা বললেন , এ যে, গ্লুমি সানডে’র মত ঘটনা । একজনের গান শুনে অনেকে আত্মহত্যা করেছেন অতীতে।

তোতন বলল,, তার সঙ্গে এক সম্পর্ক কি ।

দাদা গম্ভীর হয়ে বললেন, পুরোপুরি না হলেও কিছুটা আছে । এই গান শুনেও অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে ।এক নতুন ধরণের অভিযানের প্রত্যক্ষ প্রমাণ হিসাবে এই গানওয়ালাকে দেখতেই হবে । সুমনদা তোতনকে দায়ীত্ব দিলেন এই অভিযানের। পাঁচ ঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে গেলেন তোতন, সেই গ্রামে ।পরের দিন সকালবেলা অসুস্থ লোকেদের কাছে জানতে চাইলেন তাদের শরীর ও মনের অবস্থা ।সবার কথা শুনে তোতন বললেন উপস্থিত মানুষের সামনে, এটা সম্পূর্ণ দুর্বল মানসিকতার ঘটনা। অনেক মানুষ গান শুনে আবেগে কাঁদেন,কেউ হাসেন।তাহলে অজ্ঞান হওয়াটা কিছু আশ্চর্যের ঘটনা নয়।

তোতন আরও বললেন, যারা মানসিক ভাবে দুর্বল প্রকৃতির একমাত্র তাদেরই অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ।এবার গান ওয়ালার সঙ্গে দেখা করার পালা । তোতন তার বাড়িতে গিয়ে দেখলেন, একজন সহজ সরল লোক , যিনি এই গান শুনিয়েই খুশি হন ।

মানসিক দিক থেকে তোতন খুবই শক্তি শালী । তাকে গান শুনিয়ে,সম্মোহন করে, কাবু করা যাবে না ।গানওয়ালা গান শুরু করলেন । সেই গানের সঙ্গে সচরাচর চলতি গানের কোনো তুলনা হয় না ।গানওয়ালা বললেন , কাউকে অসুস্থ করার জন্য আমি গান করি না । আমি গাই নিজের জন্য। একমাত্র. শিল্পী লোকেরাই এই কথা বুঝতে পারে ।এখন গ্রামের সবাই আমাকে একঘরে করেছে । কেউ আমার খবর নেয় না ।আমি ঠিক মতো খেতে পাই না । গানওয়ালা র কথা শুনে তোতন খুব দুঃখ পেলেন ।

তার পর গ্রামে র সবাই কে ডেকে গানওয়ালা র কাছে নিয়ে এলেন তাদের, তোতন।,তিনি বললেন, মানুষের মনোজগৎ স্তরে স্তরে সাজানো । মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা আমাদের বোধের বাইরে । কোনো ছেলে বাবার বকুনি খেয়ে কেঁদে ফেলে । আবার কেউ কেউ পাত্তা না দিয়ে চুপ করে বসে থাকে ।পরীক্ষায় ফেল করে অনেক ছেলে বাড়ি ঢুকতে লজ্জা পায় । আবার এমন অনেক ছাত্র বা ছাত্রী আছে যারা সেই দিন বেশি করে খায় । এই সবই নির্ভর করে তার পরিবেশ এবং মানসিক গঠনের উপর ।অতএব এতে গানওয়ালার কোনো দোষ নেই । এই সবই মনো বিজ্ঞানের ব্যাপার ।

তোতন বললেন , গান উনি ঘরের ভিতরে করবেন নিম্ন স্বরে । আপনাদের শোনার প্রয়োজন নেই । গান গাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার ।আমাদের জানাশোনা সংস্থা আছে । সেখান থেকে গানওয়ালা কে কিছু টাকা পাঠানো হবে । সেই টাকা থেকে ওনার খাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে যাবে ।

আপনারা গানওয়ালা র সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবেন এবং কথা বলবেন ।আর যারা অসুস্থ হয়ে গেলেন তাদেরকে আমাদের ডাক্তারবাবু সুস্থ করে তুলবেন ।সবাই খুশি হয়ে শিল্পীর কাছে গেলেন ক্ষমা চাওয়ার অভিপ্রায়ে।তখন সংগীতশিল্পী আপন মগ্নতায় মগ্ন।

মন্দ ব্যাবহার শিল্পীদের মনে দাগ কাটতে পারে নি কোনদিন ।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।