হৈচৈ ছোটদের গল্পে সৌরভ ঘোষ

বীর প্রতাপ সিং
খাঁদা দাদুর এই গল্পটা মনে হয় আমাদের সকলেরই চির স্মরনীয় হয়ে থাকবে। অন্যরা মনে রাখবে কি না সেটা অত জোর দিয়ে বলতে না পারলেও আমার অন্তত চিরকাল মনে থাকবে এটুকু গ্যারান্টি। দাদু আমাদের অনেক গল্প বলেছে। টানা দু- বছর প্রায় প্রতিদিন আমরা দাদুর কাছে নিয়মিত গল্প শুনেছি। এত গল্প সব মিথ্যা হতে পারে না। আমি বড় হয়ে অনেক ভেবেছি অনেক চেষ্টা করেছি ভূত দেখার, রাতের এমন কোনও সময় নেই আমি বাড়ি ফিরিনি। এমন কোনও প্রচলিত জায়গা নেই যেখানে ভূতের দর্শন পাব বলে যাইনি। শ্মশান, কবরস্থান, পীরের স্থান, ফাঁকা মাঠ, ভাঙা বাড়ি কিন্তু কখনও কিছুই চোখে পড়েনি কোনোদিনের জন্য। তাদের দেখা না পেলেও মনের মধ্যে আলাদা একটা অনুভূতি হত আর সে অনুভূতির উষ্ণতা কাউকে বলে বোঝানো যাবে না। পরে মনে হয়েছে বিংশ শতকে পরিবেশের যে রূপ ছিল সেই প্রেক্ষিতে দাদুর ঘটনাগুলো সত্যিই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এখন একবিংশ শতকে হয়ত সেগুলো অপ্রাসঙ্গিক তবু ভূত বলে নিশ্চই কিছু আছে না হলে তাদের কথা আমরা এত বলি কেন। এমন অনেকেই আছে যারা মহাভারতের যুদ্ধকে অবধি অস্বীকার করে। হয়ত এমন এক শতক আসবে যখন এই একবিংশ শতকের ঘটনাও কেউ বিশ্বাস করবে না, যেগুলো অদূর ভবিষ্যতে হয়ত হাস্যকর হয়ে যাবে।
খাঁদা দাদু একবার যুদ্ধে গিয়েছিল। স্বাধীনতার পরেই ভারতের উত্তর সীমান্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল যদিও সে উত্তাপ আজও অব্যাহত। সেই সময় বাধ্যতামূলক না হলেও এমারজেন্সিতে যারা যুদ্ধে যেতে চাইত তাদের চুক্তি ভিত্তিক নেওয়া হত সেনাদলে। দাদুকে সেদিন জোর করলাম যুদ্ধে গিয়ে কী ঘটেছিল বলো, শুনব। দাদু প্রথমে রাজি হয়নি। তবে সকলে মিলে জোর করায় শেষ পর্যন্ত নিজের না এর কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছিল দাদু। দাদুর নস্যি নেওয়া মানে আমরাও বুঝতাম দাদু এবার কিছু বলবে।
ডান হাতের দু আঙুলে নস্যি নিয়ে দুটো নাকে দুবার করে ঠুসে দিয়ে খনা গলায় দাদু বলতে শুরু করল, আঁমি গিঁয়েছিলাম একেবারে উত্তরে লাদাখের কোনও একটা এলাকায়। খুব ঠাণ্ডা তখন। প্রথমে ট্রেনে করে শ্রীনগর সেখান থেকে সেনাদের ট্রাকে করে লাদাখ সেনা ছাউনি। শ দেড়েক সেনা সেখানে। কেউ বিহার, কেউ আসাম, কেউ কেরালা, কেউ রাজস্থান, কেউ পাঞ্জাব, কেউ গোর্খা, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে জওয়ানরা এসেছে। আমার কাজ অবশ্য যুদ্ধ করা নয়। আমার কাজ ছিল সেনাদের জন্যে রান্না করা। আমি আর একজন উড়িয়া রাঁধুনি ছিলাম। তবে আমার খুব ইচ্ছে ছিল সু্যোগ পেলে আমিও যুদ্ধ করব। কখনও সময় পেলে ওদের বন্দুক চালানো দেখতাম। ওরা অনেক কসরত করত। খুব ইচ্ছে হত আমিও কাঁধে বন্দুক রেখে গুলি চালাই। আমার মনোবাসনা বুঝতে পেরে এক গোর্খা যুবক একদিন আমায় ডাকল। আমার হাতে একটা বন্দুক দিয়ে দেখাল, কোনটা ট্রিগার, কীভাবে সেটা টেনে গুলি ছুঁড়তে হয়, গুলি কীভাবে লোড হয়, কীভাবে কাঁধে বন্ধুক রাখতে হয়। আবার ঠিক করে বন্ধুক না ধরতে পারলে কাঁধ ফেটে যেতে পারে।
আমি বললাম, আমি পড়েছি নিউটনের তৃতীয় সূত্র। পড়েছি প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত মুখী প্রতিক্রিয়া আছে। তাই বন্দুক থেক গুলি বের হবার সময় গুলিও বন্দুকের ওপর বিপরীত মুখী বল প্রয়োগ করে আর তার জন্যে বন্দুক পিছিয়ে আসে।
দাদু বলল, হ্যাঁ ঠিকই বলেছিস আর তাই গুলি ছোঁড়ার সাথে সাথে কাঁধটা একটু পেছনে সরিয়ে টেনে নিতে হয়।
হারা জিজ্ঞেস করল, তুমি যুদ্ধ দেখেছ দাদু?
দাদু হেসে বলল, দেখেছি কী রে ছোঁড়া! রীতিমত যুদ্ধ করেছি। দাদু বলতে থাকল, ওখানে যাওয়া থেকে প্রতিদিনই রাতে দিনে গুলি গোলার শব্দে বুকের ধুকপুক বেড়ে যেত। আমাদের তাঁবুর আশে পাশে যখন তখন গোলা এসে পড়ত। কখনও কখনও তো তাঁবুর ভেতরেও। প্রাণ হাতে নিয়ে থাকতাম যে কোনোও সময় ছিটকে একটা এসে লাগলেই ব্যাস। প্রতিদিনই কেউ না কেউ জখম হত বা মারা যেত। সেনার সংখ্যা কমলে আবার কিছু সেনা এসেও যেত। প্রায় একমাস এসব দেখে দেখে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলাম। আহতদের সেবা শুশ্রূষাও করতাম। ও কাজ দেশের কাজ তাই সে কাজে আমার ক্লান্তি ছিল না। কত রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি তার ইয়াত্তা নেই। শত্রু দল সামনেই একটা পাহাড়ে ঘাঁটি গড়েছিল। যেহেতু আমরা ওদের তুলনায় নিচুতে ছিলাম তাই আমাদের থেকে ওদের সুবিধাই বেশি হচ্ছিল। ওরা আমাদের চালচলন ভালো ভাবে লক্ষ্য রাখতে পারছিল। রাতে তাঁবুর সব আলো নিভিয়ে রাখা হত। তাঁবুর বাইরে পালা করে সেনারা পাহাড়া দিত। মাসখানেক এভাবে কাটল। ওখানে গিয়ে প্রথমে যাদের সাথে আলাপ হয়েছিল অনেকেই তখন আর নেই। কারণ তো বললাম হয় তারা নিহত বা আহত।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে আসল যুদ্ধ কবে শুরু হল?
দাদু বলল, সে কথাতেই আসছি। প্রায় মাসখানেক ওরা আমাদের সমস্ত গতিবিধি লক্ষ্য রাখার পর একদিন রাতে শুরু করল তুমুল বোমা বৃষ্টি। গুলি চলল দু- দিক থেকেই। কেউ কাউকে তৃণাগ্র জমি ছাড়তেও নারাজ। আমি দেখলাম, আমাদের সৈন্যরা একের পর এক ওদের গুলিতে আহত হতে লাগল। কারও হাতে, কারও পায়ে, কারও বুকে, কারও পেটে, কারও মাথায় গুলি এসে লাগছিল। সাধ্যমত তাদের টেনে বা চাগিয়ে তাঁবুতে নিয়ে এলাম। কেউ কেউ গুলি লাগার সাথে সাথেই মারা গেছে, কেউ কেউ প্রচণ্ড যন্ত্রনায় চিৎকার করছে। সামান্য ওষুধ দিয়ে যতটুকু পারা যায় তাদের সেবা করলাম। চোখের সামনেই অনেকে প্রাণ হারাল।
দাদুর কথাগুলো শুনতে শুনতে আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল। চিকু জিজ্ঞেস করল, সবাই কি মারা গেল দাদু?
দাদু চিকুর কথার কোনও উত্তর না দিয়ে বলে চলল, মাঝরাত হতে না হতে দেখলাম আমাদের বাঙ্কারগুলো প্রায় শব্দ শূন্য। গোলা গুলির আওয়াজ এদিকে একপ্রকার পাতলা হয়ে এসেছে, এক মিনিট, দু মিনিট ছাড়া ছাড়া কোনও আহত সৈনিক হয়ত ওদের দিকে গুলি ছুঁড়ছে। ওদিক থেকে কয়েকটা গ্রেনেড উড়ে এসে আমাদের আরও কয়েকটা বাঙ্কার একেবারে তছনছ করে দিল। দেখলাম আমাদের সেনাদের মধ্যে আর একজনও লড়াই করার অবস্থায় নেই। আমি আর আমার উড়ে সাথি একটা মাটির সুড়ঙ্গের মধ্যে ঢুকে পড়লাম। সুড়ঙ্গের জানলা থেকে উঁকি দিয়ে দেখলাম সাদা বরফের পাহাড় বেয়ে ছায়ার মত কী যেন নেমে আসছে। বুঝতে পারলাম, শত্রুরাই নেমে আসছে। লক্ষ্য করলাম, পাশেই একটা বন্ধুক পড়ে আছে আর তার পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত ঐ বন্দুকের প্রাক্তন ধারণকারী। বন্দুকটা আমি কাঁধে তুলে নিলাম। সুড়ঙ্গের ওপর মাটিতে বন্দুকের নল রেখে একটা শত্রুর দিকে তাক করলাম। দড়াম, বলে দাদু এমন চিৎকার করল আমরা সকলে ভয়ে চমকে উঠলাম।
দাদু বলে চলল, গুলি ছুটল বন্দুকের নল থেকে, আগুনের হলকা ছিটকে পড়ল সুড়ঙ্গের মুখে। মনে হল গুলিটা কাউকে লাগেনি। ওদিক থেকে বৃষ্টির মত গুলি ছুটে আসতে লাগল, আমার আশেপাশে সেগুলো আছড়ে পড়ল। আমি তখন মাথা নামিয়ে নিয়েছি সুড়ঙ্গের মধ্যে। সুড়ঙ্গের ভেতর এদিক ওদিক ভালো করে চেয়ে দেখলাম কারও কোনও সাড়াশব্দ নেই। ওদিকে আততায়ী শত্রুরা নীরবে নেমে আসছে আমাদের দিকে। ওদিক থেকে আবার গুলি চলল মানে ওরা পরীক্ষা করে দেখছে এর প্রত্যুত্তর আসে কি? আমি বুঝলাম এক জায়গা থেকে বন্দুক চালালে হবে না আমাকে জায়গা পরিবর্তন করতে হবে যাতে ওরা ভাবে আমি একা নেই অনেক জন আছে। সেই মতো মাটিতে বুক ঘষে ঘষে একটার পর একটা বাঙ্কারে গিয়ে গিয়ে সেখানে পড়ে থাকা বন্দুক দিয়ে তাদের তাক করতে লাগলাম। তারাও এগিয়ে আসতে আসতে গুলি আর বোমা ছুঁড়তে লাগল। মনের মধ্যে তখন আর ভয় নেই। মরলে মরব তবু বীরের মত মরব। অদ্ভুত জোর তখন মনে। বাঙ্কার থেকে বাঙ্কারে ঘুরছি একজন সৈনিকও দেখলাম না সুস্থ আছে। কেউ কেউ গোঙাচ্ছে, কেউ তাবিচ বা মায়ের দেওয়া লকেট মুঠোয় নিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে প্রার্থনা করছে। ক্রমশ গুলি শেষ হয়ে আসতে লাগল। দেখতে দেখতে তারা আরও কাছে চলে এল। তাদের সাথে আমার দূরত্ব তখন পঞ্চাশ মিটার হবে।
নিতাই জিজ্ঞেস করল, দাদু ওরা কি তোমায় মেরে ফেলল?
দাদু নিতাইয়ের কথার কোনও উত্তর দিল না। আসলে ও কথার কোনও উত্তর হয় না। দাদু বলতে থাকল, এবার আমার মনে হল মৃত্যু খুব কাছে এসে গেছে। হয় ওরা সকলে একসাথে বন্দুকের গুলিতে আমায় বিদ্ধ করবে নয়ত একটা বোমা ফেলে আমার দেহ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেবে। আমি প্রাণপণে প্রার্থণা করতে লাগলাম। হাতের কাছে একটা বন্দুক ছিল বটে কিন্তু সেটা খালি অন্তত একটা গুলিও যদি থাকত তাহলে সেটা দিয়ে নিজেকে মেরে ফেলতাম তবু ওদের সামনে মাথা নত করতাম না। দেখলাম ওরা আর মাত্র হাত দশেক দূরে, এরপর আমার সব শেষ। হঠাৎ পেছন থেকে একটা জোরালো আলো গিয়ে পড়ল নিশাচর শত্রুদের চোখে। দেখলাম তাদের চোখগুলো হিংসার আগুনে দাউদাউ করে জ্বলছে। তবে তারাও এরকম ঘটনা আশা করেনি। তারা স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আলোর দিক থেকে একটা গ্রেনেড উড়ে গিয়ে পড়ল তাদের মাঝে। দল ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেল। ওদিক থেকে আবার উল্কার মত গুলি ছুটে আসতে লাগল। আমি পেছন ফিরে দেখলাম একজন বিশাল দেহী পাঞ্জাবী সৈনিক ঈশ্বরের দূত হয়ে ছুটে আসছে। তার মাথায় পাগড়ি, দু কাঁধে দুটো বন্দুক, পিঠে বড় ব্যাগ তাতে মনে হল গেনেড ভরা। আমি যে বাঙ্কারে ছিলাম সেটা সে এক লাফে আমার মাথার ওপর দিয়ে ডিঙিয়ে ছুটে চলল। তার দুই হাতের দুটো বন্দুক সমান ভাবে গর্জাচ্ছে আর ওদিক থেকে ভেসে আসছে আর্তনাদ। গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে সে এগিয়ে চলল। শত্রুদের কোনও গুলিই যেন তার গায়ে লাগছে না। বন্দুকে গুলি ভরছে আর মেরে চলেছে। মারতে মারতে সে আরও এগিয়ে গেল। অনেকটা এগিয়ে গেল একেবারে পাহাড়ের ওপরে। অনেক গুলি চলল অনেক আলো, গেনেড বোমার আওয়াজে চারদিক গর্জে উঠতে লাগল। যেন আকাশ বাতাস ওরাও অনেক সাহসী হয়ে উঠেছে ওরাও তাকে সবদিক থেকে সাহায্য করতে চাইছে। কিছুক্ষণ, বলা যায় মিনিট ত্রিশ তারপর সব স্তব্ধ। হঠাৎ মনে হল বাঙ্কারের ওপর থেকে কে যেন গুরু গম্ভীর কন্ঠে হিন্দিতে বলছে নিকাল আইয়ে, আব ডরনেকা জরুরত নাহে। আমি ধীরে ধীরে বেরিয়ে এলাম। তাকে বললাম, আপনাকে প্রণাম আপনাকে যে মা জন্ম দিয়েছে তাকে প্রণাম। আপনি কে? হঠাৎ করে দেবদূত হয়ে প্রকট হলেন? সে বলল, বড়ি ভুখ লাগি হ্যে খানা বানা কুছ হ্যে? আমি বললাম, খানা আছে তো। আমার ভাগ্য কত ভালো যে অমন একটা বীর পুরুষ কে খাওয়াতে পেরছিলাম! মনে মনে বললাম, ভগবান আমাকে এমন আশির্বাদ দিন যাতে এই বীর সৈনিকটিকে রোজ রোজ রান্না করে খাওয়ানোর সৌভাগ্য হয়। সে আমাদের রান্না খেয়ে খুব প্রশংসা করল। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম আপ কওন হো? সে গোঁফে তা দিয়ে ঠোঁটের কোণে এক টুকরো হাসির রেশ রেখে বলল, ম্যে ব্রিগেডিয়ার বীর প্রতাপ সিং। আমি তার বিশ্রামের জায়গা করে তাঁবুর বাইরে এসে দেখলাম ভোরের আলো ফুটব ফুটব হচ্ছে। দেখলাম, একটা একটা করে প্রায় দশটা ট্রাক আমাদের ক্যাম্পের মাঠে এসে দাঁড়াল। সেই ট্রাক থেকে দলে দলে সেনা নেমে এল। নতুন কর্নেল আমার অবস্থা দেখে, চারদিক দেখে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আপ…! ইয়ে সব ক্যায়সে? আমি ওনাকে গত রাতের সব ঘটনা খুলে বললাম। এসব শুনে তিনি ছুটে তাঁবুতে ঢুকলেন পেছনে আমিও। দেখলাম, মানুষটা সেখানে নেই! ওনারাও মানুষটাকে আশেপাশে অনেক খুঁজল। এর মাঝেই অন্য একজন কমাণ্ডার এসে ঘোষণা করলেন, শত্রুদের আর কেউ বেঁচে নেই। আমার কাছে এসে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, গত রাতে কে এসেছিলে বললে? আমি বুক উঁচিয়ে বললাম ব্রিগেডিয়ার বীর প্রতাপ সিং, বাঘের মত তার ক্ষিপ্রতা আর দানবের মত শক্তি, সে একাই ওদের সবাইকে শেষ করে দিয়েছে। কমাণ্ডার সহ বাকি সকলেই কয়েক মুহূর্ত চুপ করে রইল। এরপর সকলে নিজের নিজের মাথা থেকে টুপিটা খুলে হাতে ধরে মাথা নিচু করে রইল। কর্নেল অবাক হয়ে বললেন, এটা কী করে সম্ভব! কারণ ব্রিগেডিয়ার বীর প্রতাপ সিং এক সপ্তাহ আগে পাঞ্জাব সীমান্তে শহিদ হয়েছেন।
হারা বলল, তু…তুমি এ…একজনকেও মারতে পেরেছিলে দা… দাদু?
দাদু বিরক্ত হয়ে বলল, গুণে দেখার সুযোগ পাইনি।
চিকু বলল, তোমার গুলি লেগেছিল?
দাদু ধুতিটা হাঁটুর সামান্য ওপর তুলে একটা পুরনো কাটা দাগ দেখিয়ে বলল, এই দেখ এখানে, ছুঁয়ে বেরিয়ে গেছিল। তাছাড়া আমার টুপিটা এখনও আমার মিউওজিয়ামে রাখা আছে, বলাই দেখেছে।
বলাই আমতা আমতা করে বলল, ঠাকুমা বলেছিল ওটা চণ্ডী দাদুর টুপি, স্কুলে যখন এন. সি. সি. করত সেই সময়ের।
দাদু বলল, আমার টুপিটাই ওকে দিয়েছিলাম।