।। ত্রিতাপহারিণী ২০২০।। T3 শারদ সংখ্যায় সুনন্দা দিকপতি যশ

ছুটি ছুটি

সামনেই হাফ ইয়ারলিপরীক্ষা খেয়ালী খুব মন দিয়ে পড়ছে।মা মাঝে মাঝেই সাড়া দিয়ে কাজ সারছে আর নিশ্চিন্ত হচ্ছে যাক মেয়েটার তাহলে মতি গতি হয়েছে।পড়ি মড়ি করে পড়ছে বটে।এরপর মা এক ঘন্টা পর খেয়ালীর সামনে এল।মাকে দেখে খেয়া যেন ভূত দেখলো।মা তো দেখে হতবাক।পড়ার বইয়ের মাঝে আছে ফেলুদা,তোপসে, জটায়ুর বাদশাহী আংটি।আর কোথায় যায়!বেধড়ক পেটানী খেল খেয়া।মা বললো,’তোর কবে বোধ বুদ্ধি হবে?কাল পরীক্ষা আজ ও তুই গল্পের বই নিয়ে বসে পড়েছিস!এত নেশা তোর গল্পের বই পড়ার, পড়াশুনা ছেড়ে দে তাহলে।শুধু পড়া না বিভিন্ন গল্পের বই পড়ে নিজের মত করে লেখাটাই ওর নেশা।কোন ছোট্ট বেলা থেকে প্রবন্ধ রচনা,কবিতা লেখা, গল্প লেখা নিজের সৃজনশীলতার নিদর্শন ও রেখেছে।স্কুলে ওদের শনিবারের প্রথম পিরিয়ডই ছিল সৃজনশীল কাজের।ওটা বেশ সুবিধাজনক হয়ে উঠত ওর কাছে।এই আগ্রহ অবশ্য বাবার কাছ থেকেই।আসলে পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৭ দিন পরই এবার পুজো।পুজো মানে ওদের স্কুলে রম রমা ব্যাপার।ওদের স্কুলে দেওয়াল পত্রিকা বেরোবে ক্লাসে ক্লাসে।ওদের ক্লাস নাইনের পত্রিকার নাম উদীচী।আর এবার ক্লাসের দেওয়াল পত্রিকার দায়িত্ব শুধু না ওদের স্কুলের পত্রিকার উদ্বোধন ও হবে তার কিছুটা অংশের বড় দায়িত্ব ওর উপর দিয়েছেন প্রিয় ভাস্বতী দিভাই।তাই সেসব নিয়ে চিন্তা ভাবনার শেষ নেই।এত বড় একটা দায়িত্ব ওকে সামলাতে হবে।তাই পড়াকে ফাঁকি দিয়ে খেয়ার এসব করার অফুরন্ত শক্তি।মায়ের কাছে বকুনি খেয়ে সম্বিৎ ফিরে পড়ায় মন দিয়ে ভালোয় ভালোয় পরীক্ষা দিল।যেদিন থেকে পরীক্ষা শেষ সেদিন থেকেই দেওয়াল পত্রিকার লেখা লেখি শুরু।স্কুলে গিয়ে সবার থেকে লেখা সংগ্রহ করে সংশোধন করে তবে দেওয়াল পত্রিকায় লেখা দেওয়া।আর বড় পত্রিকা অর্চিকে নিজের কলম দিয়ে আঁকি বুঁকি কাটাটাও আনন্দের ব্যাপার।বাইরে থেকে স্বনামধন্য লেখক/লেখিকা সমাগম হয় পঞ্চমীর দিন আনুষ্ঠানিক আর্চিক উদ্বোধনের সময়।আর এই দিনটা তে ওদের স্কুলে স্বনির্ভর মেলা হয়।স্কুলের মেয়েরা সবাই কিছু না কিছু বিক্রি করে।জুয়েলারী, শাড়ি,বাড়ি থেকে বানানো খাবার নিয়ে বিক্রি করে উপার্জনও করে খুচ খাচ।আর সব শেষে হয় অনুষ্ঠান।গান,নাচ,আবৃত্তির মাধ্যম দিয়ে অনুষ্ঠানে মার আগমনীর সুরে সুর মিলিয়ে যে দিন ছুটি পড়বে সেদিন হয় অনুষ্ঠান।সবাই অংশ গ্রহণ করে আর যারা করেনা সবাই নতুন জামা কাপড় পরে এই আনন্দের ভাগ নেয়।এবার অবশ্য শুধু মেলা বা অনুষ্ঠানেই সীমাবদ্ধ নেই।এবার হয়েছে দুই দিন ব্যাপী এক্সিবিশন।যেখানে অন্য স্কুল থেকে অনেকে এসেছে বা ওদের বিজ্ঞানের মডেলে প্রশ্নোত্তর পর্ব ও উৎসাহ পর্ব চলতে লাগলো।আর অম্লানের সাথে দেখা কিন্তু এই এক্সিবিশনে এসে।বন্ধুর দাদা খুব সহজেই প্রপোজ করে।লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা হত বটে টিউশন ব্যাচে বা স্কুল ফেরার পথে কিন্ত কোথায় যেন এই কাঁচা প্রেম টিকবে না।কারণ দুজনের চিন্তাভাবনায় বিস্তর ফারাক।অম্লান খুব হ্যান্ডসাম,পড়াশোনায় ও ভালো কিন্ত বড্ড জ্যাঠামো আর যান্ত্রিক।এখন থেকেই খেয়ালীকে বড্ড শাসন করে আর বলে ব্যাকডেটেড কেন।পুজোর সময় বয়ফ্রেন্ডের সাথেই ঘুরতে হয়,হাত ধরে ভিড়ে ঠাকুর দেখতে হয়।কিন্ত খেয়া সৃষ্টিশীল,সাবেকী ধারণাকে বুকে নিয়ে চলতে চায়।খেয়ার কাছে পুজো মানে ছুটি ছুটি দেখা টিভিতে,দেশের বাড়ির নিজের পুজো,বাবা-মা,ভাই-বোন বাড়ীর সবাই মিলে আড্ডা-হইচই।আর একরাশ ভালো লাগার মুহূর্ত গুলোকে সঙ্গী করে অনেকটা অক্সিজেন নিয়ে আগামী বছর পুজোর আবার প্রতীক্ষা।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।