ধারাবাহিক রম্য রচনায় সংযুক্তা দত্ত – ২

নৃত‍্যের সাথে চিত্ত তো এক্কেরে ভীষণভাবে মিলে গেল। আমাদের কথ্থক নাচ শেখাতেন অর্চনা আন্টি, গুরু বন্দনা সেনের ছাত্রী ছিলেন। সারাদিন ছটফটে মেয়েটা বাড়িতে বলে চলত
ধা ধিন্ ধিন্ ধা
ধা ধি্ন ধিন্ ধা
না তিন্ তিন্ তা
তেটে ধিন্ ধিন্ ধা

ত্রিতাল শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একটি বহুল ব্যবহৃত তাল। ত্রিতাল ১৬ মাত্রা বিশিষ্ট সমপদী তাল। এর পদ-সংখ্যা = ৪, ছন্দ-বিভাগ = ৪/৪/৪/৪ । এর তিনটি তালি ও একটি ফাঁক, তাই এর নাম তিনতাল বা ত্রিতাল বা তেতাল বা তেতালা ।
তা এই প্রাকটিসের ধুপধাপের চোটে বাড়ির লোক যখন নাজেহাল, সেই সময় আবার এল” হিন্দোলের “বার্ষিক অনুষ্ঠান। এবারে আমার প্রোমোশন হয়েছে সোলো রোলে। আর খকখক করে কেশে চেনাতে হবে না নিজেকে।
একটা খুব মিষ্টি গল্প ছিল পশু পাখিদের নিয়ে, আমি ছিলাম একটি খরগোশের চরিত্রে। গল্পটা পুরোটা মনে নেই তবে আমি, ওই যে বলে স্টেজে মারা সেরকম একখানা ম‍্যানেজ দিয়েছিলাম। একটা দৃশ্য ছিল, খরগোশ মামার বাড়িতে কিছু অতিথি এসেছে,তিনটে পাখি আর একটি ভাল্লুক , আর খরগোশ মামা তাদের জন‍্য জলযোগ নিয়ে আসছে , স্টেজ রির্হাসালের সময় আমাকে বলা হয়েছিল যে উইংগসে কাছে যেতে, সেখানে একজন আমার হাতে দুখানা কাগজের প্লেট দেবে, ওই গুলো অতিথি দের দিতে হবে। নৃত‍্যনাট‍্য চলছে, ঠিক সময়ে উইংগসের কাছে গিয়ে দেখি প্লেট নেই। এতদিন পরেও ওই মুহূর্তটা মনে পরে, এক নিমেষের জন‍্য আমি কয়েক সেকেন্ডের জন্য কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়েও আশু কর্তব্য স্থির করে ফেললাম । হাতে কাল্পনিক প্লেট নিয়েই চললাম অতিথি সৎকারে।
অনুষ্ঠান শেষের পর সব বড় দিদিরা, নাচের আন্টি, গানের স‍্যার আমাকে খুব আদর করলেন এরমভাবে পরিস্থিতি সামলে দেওয়ার জন‍্য।
সেদিন দর্শক আসনে ছিলেন গুরু বন্দনা সেন। অনুষ্ঠান শেষের পর আমায় আর্শিবাদ করে, আমার মা কে ডেকে বলেছিলেন, ” আপনার মেয়ের নাচ কোনদিন বন্ধ করবেন না। ও ভবিষ্যতে একজন খুব ভালো নৃত‍্যশিল্পী হবে।”
হয়ত সেই গুরুদের আশীর্বাদ জোরেই আজও নাচ করতে পারছি।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।