সম্পাদকীয়

দ্বৈত রূপে জুন মাস
জুন মাস, ভারতীয় উপমহাদেশে একটি অদ্ভুত সময়। এই সময়ে প্রকৃতি দ্বৈত রূপে ধরা দেয়— কখনো তীব্র দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ, আবার কখনো হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টি নিয়ে আসে প্রশান্তির আবহ। এই দ্বৈত রূপই জুন মাসকে করে তোলে বৈচিত্র্যময় ও ঘটনাবহুল।
এই মাসে গ্রীষ্মকাল তার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়। শহর হোক কিংবা গ্রাম— দাবদাহে জ্বলছে রাস্তাঘাট, পুড়ছে মাঠঘাট। বিদ্যুৎবিভ্রাট, জল সংকট এবং স্বাস্থ্য সমস্যা মানুষের কষ্ট আরও বাড়িয়ে তোলে। তাপপ্রবাহে বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষদের জীবন হয়ে পড়ে দুর্বিষহ।
অন্যদিকে, এই দাবদাহের মধ্যেই যখন আকাশ ভেঙে নামে প্রথম বর্ষার বৃষ্টি, তখন সেই বৃষ্টি শুধু জমিকে নয়, মনকেও সিক্ত করে। রাস্তায় জমে থাকা ধুলো ধুয়ে যায়, গাছপালার পাতায় নতুন জীবনের ছোঁয়া লাগে। কৃষক অপেক্ষা করেন এই বৃষ্টির জন্য, কারণ এটাই তাদের খেত-খামারে নতুন ফসলের বীজ বোনার সময়।
তবে এই স্বস্তির বৃষ্টিও সব সময় আশীর্বাদ নয়। কোথাও কোথাও অসম বৃষ্টিপাত বা জলাবদ্ধতা নতুন সমস্যার জন্ম দেয়। শহরে ড্রেনেজ ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় সৃষ্টি হয় জলজট, ব্যাহত হয় যানচলাচল। ঠাণ্ডা গরমে জ্বরজারি ও অন্যান্য রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে।
জুন মাস তাই আমাদের জন্য একধরনের প্রস্তুতির সময়। এই মাস আমাদের শেখায় প্রকৃতির পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে, ধৈর্য ধরতে, এবং নতুন আশা নিয়ে এগিয়ে যেতে। প্রকৃতির এই বৈচিত্র্য, চরম তাপ ও শান্তিময় বৃষ্টির সমন্বয়ে গঠিত জুন মাস আসলে জীবনের রূপক — যেখানে কষ্ট ও স্বস্তি পাশাপাশি চলে।
সায়ন্তন ধর