T3 || অবিস্মরণীয় নজরুল || বিশেষ সংখ্যায় সোমা চট্টোপাধ্যায় রূপম
by
·
Published
· Updated
আমার নজরুল
আমার ছোটোবেলায় বেশিরভাগ সময়ে সন্ধেগুলো কাটতো বাবার রবীন্দ্রসঙ্গীত আর মায়ের নজরুলগীতিতে। আমি তখন খুবই ছোটো। এতটাই ছোটো যে হারমোনিয়ামের রিড’এ আঙুল দিলে বেলো তে হাত পেতামনা, প্রায় শুয়ে পড়তাম। বাবা যত্ন করে শেখাতেন সা, রে, গা, মা, পা…
মা রান্নার ফাঁকে এসে বসতেন, মনে আছে দরাজ গলায় গেয়ে উঠতেন “ধানি রং ঘাঘড়ি, মেঘ রং ওড়না
পরিতে আমারে মাগো অনুরোধ কোরো না”- সেই প্রথম আমার নজরুল চেনা। তারপর একটু বড়ো হতেই বাবা শেখালেন আবৃত্তি- বাবুদের তালপুকুরে, হাবুদের ডালকুকুরে… লিচুচোর- আমার জীবনের প্রথম স্টেজ- প্রথম পুরস্কার, আমার বয়স তখন ছয়।
একটু একটু বড়ো হতে বাবা ভর্তি করলেন গানের স্কুলে তাঁরই মাস্টারমশায়ের কাছে। আমি স্যার বলি। স্যার জিজ্ঞেস করেছিলেন “কী গান শিখবে তুমি?” আমার উত্তর ছিলো “কাবেরী নদী জলে আর প্রিয় যবে দূরে চলে যায়।(কতদিন দেখিনি তোমায়)” স্যার খুব হেসেছিলেন আমার বালখিল্যতা দেখে। আসলে আমি কখন নজরুলকে ভালোবেসে ফেলেছি জানি না। কখন যে অস্থিমজ্জায় মিশেছে তাও জানা নেই আমার। নজরুল আমার সুখে, দুঃখে, বিষাদে, মরণে, প্রেমে সবজায়গাতে।
নজরুল নিয়ে লিখতে বসলে আমি হয়তো নিজেকে নিয়েই বেশি লিখবো কারণ আজকের দিনেও যদি কেউ আমাকে প্রশ্ন করেন আমার প্রিয় কবি কে- যাকে দেখতে পাই সে আমার নজরুল। সবচেয়ে বড়ো প্রাপ্তির মাঝে আমার বরের দেওয়া সাতটা নজরুলগীতির স্বরলিপি সহ বই ও ধ্যাতানি মেরে আমার অজানা নজরুল গীতিগুলো শোনানো ও রেওয়াজ করানোর মধ্যেও আমার নজরুল মিশেছে রোজকার নুন তেলের সংসারে।
মোটা ফ্রেমের চশমায়, গায়ে শাল জড়ানো, মাথায় মুকুটের মতো টুপি পরা একটু লালচে যে ছবিটা আমার নজরুলগীতির নীল মলাটের বইয়ে আছে, যেন এখুনি ঠোঁটের ফাঁক থেকে গেয়ে উঠবে ” মোরা আর জনমে হংস মিথুন ছিলাম বা আলগা করোগো খোঁপার বাঁধন, দিল ওহি মেরা ফাঁস গায়ি… কিংবা দরাজ কন্ঠে বলবে…”বন্ধুগন, আপনার যে সওগাত আজ হাতে তুলে দিলেন… বা বলো বীর- চির উন্নত মম শির…”
আমি জানি না আমার নজরুল কে এইটুকু পরিসরে বাঁধা যায় কিনা, তবে আমার মনন জানে রোজ রাতে যখন হাসনুহানা ফোটে সে রোজ আসে, আমাকে গান শোনায়, তার “মধুর বাঁশরী” বাজায়। আর কানে কানে বলে – মোর প্রিয়া হবে এসো রানী, দেবো খোঁপায় তারার ফুল…