কর্ণফুলির গল্প বলা সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সুজিত চট্টোপাধ্যায় (পর্ব – ২)

নীলচে সুখ 

পাহাড়ি পথে গাড়ি ছুটে চলেছে। পাকাপোক্ত ড্রাইভার। এই রাস্তার প্রতিটি ইঞ্চি তার নখদর্পনে। তবুও নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই নিরাপদে গাড়ি চালানোর নিয়ম এই পাহাড়ি পাকদণ্ডী পথে। ডানদিকে খাড়াই পাহাড়। বামদিকে বিপদজনক খাদ। সামান্য একটু ভুলে , অনেক বড়ো মাশুল দিতে হতে পারে।
চারপাশের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে এগিয়ে চলা। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতেই তো এখানে আসা।
ইটের পাঁজরে লোহার খাঁচার সাময়িক বন্ধন মুক্তি। ছুটি। কবির সেই লাইনটা মনে পরছে।
কাজের একপিঠে যেমন কেবলই ছোটা , আর এক পিঠে তেমন কেবলই ছুটি।
পাহাড়ি ঝিঁঝিঁ পোকার একটানা কান্না আর গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দ ছাড়া , আর কোনও শব্দ নেই। এমন পরিবেশে চুপ করে প্রকৃতির নির্বাক মৌনতায় মজে থাকতেই মন চায়।
কথা নয় , কথা নয়। এসো নিঃশব্দতায় যাপন করি, যেটুকু আছে সময়।
এটা নীলের লেখা কবিতার লাইন। নীল বেশ ভালো কবিতা লেখে। ফেসবুক বন্ধুরা তো ওর নামের সঙ্গে ` কবি ` পদবী জুড়ে দিয়েছে। নীলের হাসি পায়। তবে বাধা দেয়না। বুঝে নিয়েছে , ওটা অভ্যাস বশতঃ উচ্চারিত কথা। গুরুত্ব দেওয়া বৃথা।
ভদ্রমহিলা বললেন , আপনারা কী হোটেল বুকিং করে এসেছেন ?
তন্ময় বললো , না না। খুঁজেখাঁজে একটা সস্তার হোটেল দেখে নেবো। আমাদের যাহোক একটা মাথা গোঁজার জায়গা হলেই চলে যাবে।
ভদ্রমহিলা মৃদু হেসে বললেন ,,,, তা ঠিক। তোমরা ছেলেছোকড়ার দল। তোমাদের আর অসুবিধে কীসের।,,, তারপরেই হঠাৎ কুন্ঠিত গলায় বললেন , তোমাদের তুমি বলে ফেললাম , কিছু মনে করলে?
অসীম বললো , না না কাকীমা। একদমই না। আমরা তো আপনার ছেলেরই মতো।
আমার ছেলে নয়, এই একটিই মেয়ে। এই বেড়াতে আসার দুটো কারণ । একতো আমার মেয়ের বায়না। পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। বেড়াতে যাবো। তাই বেড়িয়ে পরা।
দ্বিতীয় কারণটা তুমিই বলো না,,, কর্তার উদ্দেশ্যে বললেন কথা গুলো।
হ্যাঁ , ঠিকই। সেটাও একটা কারণ নিশ্চয়। ব্যাপার হচ্ছে আমার এক বন্ধু এই বছরখানেক আগে আপার গ্যাংটকে একটা রিসর্ট লিজ নিয়েছে। প্রায়ই আসতে বলে। নানান কারণে হয়ে ওঠেনি। এই ফাঁকে সেটাও সেরে নেওয়া হবে। ওই জায়গাটা নাকি বেশ নিরিবিলি। মানে , ঘিঞ্জি নয়।
বেড়াতে এসে ঘিঞ্জি চ্যাঁচামেচি ভীড় , একদম ভালো লাগেনা। তোমরা কী বলো? বেড়ানো মানে তো শুধু মনের আরাম নয়। চোখ কান নাকের আরামও তো চাই নাকি? বলেই হা হা করে হেসে উঠলেন। ভদ্রমহিলা , কপট রাগ দেখিয়ে বললেন , ওফঃ, এখানেও তোমার মাষ্টারি শুরু করলে ?
বোঝাগেল ভদ্রলোক শিক্ষকতা করেন। শিক্ষক।
তিনি হাসি থামিয়ে হালকা গলায় বললেন ,
ওহ্ , আই এম সরি।
ভদ্রমহিলা বললেন ,,,, তোমরাও ইচ্ছে করলে সেখানেই উঠতে পারো।
ওরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো। ভদ্রমহিলা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বললেন ,,,, চিন্তার কিছু নেই। তোমাদের বাজেটের মধ্যেই হবে। সেটুকু অবশ্যই বলতে পারি। তবুও তোমরা ভেবে দ্যাখো।
গাড়ি একটাখাবারের হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে গেল। ড্রাইভারের পরিচিত হোটেল। এখানেই দুপুরের খাওয়া সেরে নিতে হবে।
গ্যাংটক পৌঁছাতে বিকেল গড়িয়ে যাবে।
খেতে খেতে খুব বেশি কথাবার্তা হলোনা ওদের মধ্যে। শুধুমাত্র এইটুকু জানা গেল। মেয়েটির নাম মানালি। বি এস সি ফাইনাল ইয়ার। পরীক্ষা শেষ। এখন এরা আপাতত একই পথের যাত্রী।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।