T3 || বাণী অর্চনা || বিশেষ সংখ্যায় সুজিত চ্যাটার্জি

জননী

সেদিন শরৎ সকালে, এক সন্ন্যাসী এসে দাঁড়ালেন দুয়ারে।
ভিক্ষাং দেহি,,,।
কমলা মা তখন, লালপেড়ে গরদের শাড়ি পরিধানে, শিউলি তলায় শিউলি ফুলে সাজি সাজিয়ে তুলছিলেন, দেবার্ঘ্য অর্পণ করবেন, সেই কামনায়।
সন্ন্যাসীর ডাকে, চঞ্চল পায়ে তার কাছে এসে বিনম্র প্রণাম জানালেন।
সন্ন্যাসী স্মিত হাস্যে পুনরায় উচ্চারণ করলেন,,
মাতঃ, ভিক্ষাং দেহি,,।
কমলা কিয়ৎক্ষণ সন্ন্যাসীর মুখপানে অপলক নয়নে চেয়ে রইলেন। তারপর , তার হাতের শিউলি ভরা সাজি খানি, তার ঝুলিতে উজার করে দিলেন শ্রদ্ধা ভরে।
সন্ন্যাসী পুনরায় স্মিত হাস্যে বললেন,,
মাতঃ, ফুলে মন ভরে , প্রাণ ভরে , ভক্তি উছল্লিয়া ওঠে , কিন্তু উদরপূর্তি করে না। আমি বড়ো ক্ষুধার্ত মাতঃ,,।
মা কমলা , সহাস্য বদনে করজোড়ে সন্ন্যাসীকে তার ঝুলি নীরিক্ষা করবার আবেদন করলেন।
সন্ন্যাসী সেই মতো ঝুলিতে দৃষ্টিপাত করে যারপরনাই আশ্চর্য হয়ে গেলেন।
ঝুলিতে দান করা শিউলি ফুল , সোনালী চাল হয়ে ঝুলি ভরে আছে।
এই অদ্ভুত দৃশ্য অবলোকন করে , সন্ন্যাসী স্তম্ভিত কন্ঠে বললেন,,,, একি? এ কেমন করে সম্ভব মাতঃ? আপনি কে?
কমলা মা, চোখে শরতের সোনালী রোদের ঝিলিক এনে বললেন ,,,
আমি মা। সন্তানের ঝুলিতে যা উজার করে নিবেদন করি, তাতে মিশে থাকে মাতৃত্বের সুধা। কামনাহীন, বাসনাহীন মধু।
চাওয়া পাওয়ার হিসাব সেখানে থাকে ব্রাত্য। সেখানে শুধুই স্নেহ মমতার একচ্ছত্র প্রবেশাধিকার।
মাতা অন্তর্যামী । আশীর্বাদিকা শুভাকাঙ্ক্ষী।

সেই স্বর্গীয় মুহূর্তে , সন্ন্যাসী করজোড়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে বললেন,,,,, মাতঃ, ভেবেছিলাম আমি সর্বত্যাগী, জ্ঞানী। কিন্তু এইক্ষণে উপলব্ধি করলাম, মাতৃত্বই প্রকৃত জ্ঞানের আধার। সর্বংসহা জননী, অধমের প্রণাম গ্রহণ করে , আমার অহং দূর করো মাতা।
মাতা পুত্রের এই অমৃত কথোপকথনের সাক্ষী হয়ে থাকলো , শরতের মেঘমুক্ত নীলাকাশ , কাশবন এর দোলন আর সেই কমলা বোঁটাযুক্ত শ্বেতশুভ্র শিউলি আর তার সুমিষ্ট ঋতুগন্ধ।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।