কবিতায় সুমিতা চৌধুরী

জীবনের সন্ধিক্ষণে তুই-আমি
তোর আমার দেখা এক অদ্ভুত সন্ধিক্ষণে,
যদিও তখন সময় ছিল স্তিমিত খানেক।
মৃদু-মন্দ হাওয়ায় ছিল হৃদয়ের উত্তাপ,
কিছু কবিতার পাতায় টুপটাপ ঝরছিল কতক শব্দবন্ধ।
আগাম ঝড়ের কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই
এক উথালপাথাল ঝড়ে সময় হল বেসামাল!
তুই আমি সহসা দাঁড়ালাম সে ঝড়ের মুখোমুখি,
কত কি দিনলিপির সাক্ষী হলাম রোজ…..
স্ট্যাটাস জুড়ে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ,
কত কি গল্প গাথা সঙ্গী হলো আমাদের….
কখন যেন সব দূরত্ব লেঙ্ঘে পাশাপাশি হাঁটতে লাগলাম আমরা,
আমি বুঝিনি, রাখিনি সে দিনক্ষণের খোঁজ!
কিন্তু ক্রমেই তোতে অভ্যস্ত হলাম আমি,
সেই অভ্যেস কখন যে অপেক্ষার রূপ নিল বুঝলাম কই?
তখনও উত্তাল সময়ের রেশ ছুঁয়েছিল জীবন,
আর ছিলি তুই প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ, নির্নিমেষ….
মাঝে মাঝে আমার স্মৃতির উজান ফেরাতো আমায় একাকী কূলে,
মন জুড়ে অশ্রুর বাষ্পের ঘেরাটোপে বন্দী হতাম আমি।
সেদিনও এমনই একটা দিন ছিল, যেদিন ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল আমায় স্মৃতিরা….
শীতের সে রাত আরও করাল হয়েছিল, অতীত ঘেরা একাকী নিরালা শীতকে ছুঁয়ে।
তুই সেই প্রথম সব বাধা টপকে লিখলি বার্তায়,
“তুই কি আমার চোখ দেখতে ভুলেছিস?
আমি তো সেই কবেই থমকে আছি তোর আসার পথটায়…
আর কানে বেজে চলেছে সমানে হৃদয়ের লাবডুব, জানি না সে তোর, কি আমার!”
সময়ের থেকেও উথালপাথাল হলো সেদিন আমার মন,
হঠাৎই তোর মনের সম্পূর্ণ হদিশ পেয়ে।
কত কি বলার ছিল, লেখার ছিল,
কিন্তু সব রেখে নিশ্চুপে বসে রইলাম আমি, তোর আসা-যাওয়ার পথের পাশটায়!
তুই বয়ে চললি সাথে-সাথে হয়তো খানিক বুঝে,
হয়তো খানিক বোঝা না বোঝার দোলাচলে।
আমার মন লিখিয়ে নিল কোন সে ঘোরে আমার কিছু অব্যক্ত স্বীকারোক্তি,
তোর ঠোঁট জুড়ে হাসির রেখায় তখন মন জয়ের উচ্ছ্বাস।
সময় না জানি খেলছিল কোন খেলা,
ক্রমেই হাজারো প্রয়োজনে আমায় আনছিল তোর দ্বারে।
তবুও বাধার পাহাড় টপকাতে পারিনি,
রয়ে গিয়েছিলাম কথার মাঝে তোর থেকে খানিক দূরত্বের রেশ রেখে!
এবার দিলি তুই অভিমান মেশানো হৃদয়ের বার্তা,
“এটাই কি শেষ দিন তোর মনের কথা জানার? এটাই কি শেষ বার্তা তোকে প্রেরণের? এটাই কি শেষ শ্বাস, তোর-আমার এ হৃদয়ের যাত্রার?
তোর অস্থির চোখ এমনই হাজার ভাবনায় ঘিরে রাখে আমায় নিত্য তোর গোধূলি রাঙা মন আকাশের মাঝে।”
কোন সে মনের তাড়নায় আমি সেই প্রথম তোর কাছে নিজেকে মেলে ধরলাম,
কিছু আবডালের মাঝেও নিজের হৃদয় দিলাম সঁপে অকপটে।
কিন্তু আমার জীবনের নাগপাশ জড়িয়ে রইল আমার প্রতিটি পদক্ষেপে,
মানলি তাও, জানালি রয়ে যাবি আমার পথ চেয়ে দীর্ঘ অপেক্ষায়।
সে অপেক্ষার প্রহর কাটলো না যদিও আজও!
তবু সময়ের ঘরে আজ আবার এক নতুন ঝড়।
আবারও সেই ঝড়ের মুখোমুখি তুই-আমি।
বলতে পারিস কবে সব ঝড় পার করে তোর অপেক্ষার মর্যাদা রাখবো আমি?
সত্যিই কি রাখতে পারবো তোর মান,
সব অদ্ভুত (অ)বিচারকে পার করে????