রম্য কথায় সুজিত চট্টোপাধ্যায়

কথার কথা 

কেউ কথা রাখেনা , আক্ষেপ।
মাঝেমধ্যেই এই কথাটা কানে আসে।
নামজাদা কবিরা নাকি এই কথার ওপর কবিতাও লিখে ফেলেছেন।
আরে এতো আচ্ছা মুশকিল। কথা রাখতেই হবে এমন কথা আছে কী? নিজের কথা নিজের কাছে রাখলেই তো হয়। নিজের কথা লোকের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে মজা দেখবে , ইয়ার্কি ?
কথা কী দেওয়া যায় ! নাকি দেবার জিনিস ? কথা কী প্রাণবন্ত , নাকি জড়বৎ ?
তাছাড়া কথা নিয়ে এতো হকারী করবার কী আছে? যার দরকার আছে , সে কথা চেয়ে নেবে। নতুবা শুধুশুধু কারুর কাছে কথা রাখতে দিলে সেই কথা সে রাখবে কী রাখবেনা সেটা সম্পুর্ন তার মর্জি ।
সেই কথা সে রাখতেও পারে , না ও পারে। বাধ্যবাধকতার প্রশ্নই নেই। তাহলে স্বাধীনতার অবমাননা হবে ।
কেউ কথা রাখেনা , কথা রাখেনি ,,,,
এইসব ছেলেমানুষি প্যানপ্যানানি অভিযোগের কোনও মানেই হয়না।
কথা কী কোনও মূল্যবান সম্পত্তি? আখেরে লাভ দেবে ? ডিভিডেন্ড বাড়বে ?
সত্যিই তেমন দামী হোলে কেউ অন্যের কাছে কথা রাখতে চাইতো ? অসম্ভব। নিজেই জানে এ যাহোক তাহোক ফালতু ব্যাপার । সেই কারণেই নিজের কাঁধ থেকে নামিয়ে , অন্যের কাঁধে চাপিয়ে দেবার বদ মতলব।
আরে বাপু , এখনকার দিনে, কেউ ঐসব ফালতু , ইমোশনাল কেস ঘাঁটাঘাঁটি করে সময় বরবাদ করবার মতো বোকা নেই । সব সেয়ানা দ্যা গ্রেট।
মোদ্দাকথা হলো , কথা একটা প্রডাক্ট । ইয়েস , প্রডাক্ট । ঠিক মতো বাজারজাত করতে পারলে , প্রফিট এন্ড প্রফিট ।
কথা বেচে খাও। সেলসম্যান , উকিল , দেশের নেতা , মন্ত্রী , ব্যবসায়ী সব কথার কারবারি।
কথার মারপ্যাঁচ কিংবা জাগলিং এ, যে যত বড় ওস্তাদ , তার ততই উন্নতি ।
কথার কোনও জাত নেই। ক্ষণস্থায়ী। এই আছে , এই নেই । ভ্যানিশ।
কথার কোনও রঙ নেই। রঙ চড়াতে হয়।
যতখুশি রঙ মাখাও। কথার ফুলঝুরি ছোটাও। সবই স্বাধীনতা। কেউ মানা করবেনা।
কথার কোনও দাম নেই। শুধু দাম পাবার প্রত্যাশা আছে।
কথার কথা , কাজের কথা , ফালতু কথা , কল্পকথা কথার কোনও শেষ নেই। শেষ করে দিতে হয়। বাচাল উপাধিতে ভূষিত হবার আগেই। কেননা , সকলের কথাই , কথামৃত নয়।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।