কর্ণফুলির গল্প বলায় স্বপঞ্জয় চৌধুরী (পর্ব – ৬)

পরজীবী

 

ছয়

পরদিন সকালে একটা মেটারনিটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয় সেলিনাকে নিয়ে। সাদিব আর সুকন্যা খিলগাঁও ফুটওভার ব্রিজের ওপর ভিক্ষা করতে থাকে। সুকন্যার নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে অনেকেই মায়া করে টাকা কয়েন এইসব দিয়ে যাচ্ছে থালায়। ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে থালা ভরে ওঠে। ফুটওভার ব্রিজের ওপর কয়েকজন হকার টুথব্রাশ, মাস্ক, মোজা আর হেডফোন বিক্রি করছে। একটু পরেই কিছু বুঝে ওঠার আগেই সবাই হকাররা টুপলি টাপলা রেখে দৌড়ে পালালো। থানা থেকে পুলিশ আসছে। মাঝে মধ্যেই উপরের নির্দেশ আসলেই তারা ঝটিকা অভিযান চালায় ওভারব্রিজে। ব্রিজের কোনায় একটা সাইনবোর্ডে লেখা আছে- “ নবীজীর শিক্ষা, কোরোনা ভিক্ষা”। পুলিশ দেখে আতঙ্কিত হয়ে যায় সাদিব। সে বোনকে রেখে দৌড়ে পালাবে কিনা, বুঝে উঠতে পারে না। সুকন্যার মুখ দিয়ে লালা ঝরছে। সে কিছু বুঝতে পারে না। পেটমোটা কনস্টেবলের দিকে ফ্যালফেলিয়ে তাকিয়ে থাকে।

‘ওই ফকিন্নীর বাচ্চারা তগো না কইছি, এই বিরিজে ভিক্ষা করবি না। ওই শুয়োরের পুতেরা।’

এই বলেই দু’তিন ঘা বাড়ি পরে সাদিবের পিঠে সাদিব। ও মাগো বলে লুটিয়ে পড়ে। পুলিশও একটু ঘাবড়ে যায়। একজন পথচারি পুলিশের দিকে মারমুখী ভঙ্গিতে এগিয়ে আসে।

‘ওই হারামখোর, তুই পোলাডাওে এইভাবে মারলি কেন , ওই শুয়োরের বাচ্চা।’

আস্তে আস্তে মানুষের ভিড় জমে যায়। একজন এসআই এসে পুলিশটাকে জনতার হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।

সবাই কিছুক্ষণ আহা-উহু করে কিছু টাকা ভিক্ষা দিয়ে চলে যায়।

সাদিব ব্যাথায় কোকাতে থাকে। সুকন্যা ভাইয়ের দিকে ফ্যালফেলিয়ে তাকিয়ে থাকে। তার চোখের কোনায় একটুখানি জল এসে ভিড় করে।

ক্ষানিক বাদেই সেলিনা আর আসমা আসে। সেলিনা উড়ন্ত চিলের মতো ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নেয়।

আমি সব হুনছি নিচের পানওয়ালা আমারে সব কইছে। খুব লাগছেরে বাবা।

আসমার চোখ চক চক করে ওঠে থালা ভর্তি টাকা দেখে।

একটু পরেই দুইজন পুলিশসহ হাজির হয় জুলমত। হো হো করে হেসে ওঠে জুলমত। আসেন স্যার, আসেন আসেন। ওই যে মাগি দুইটা। দিনের বেলায় পাগল দিয়া ভিক্ষা করায় আর রাইতে আকাম কুকাম করে। পুলিশ দুজন আসমা আর সেলিনার চুলের মুঠি ধরে বলে- ‘চল থানায়। তোগো খায়েশ আজকে মিটামু ভালো কইরা।’ সেলিনা যুদ্ধরত নারীর মতো পুলিশকে ধাক্কা মারে- ‘ডোন্ট টাচ মি বাস্টার্ড’।

‘ ওরে বাবা এই মাগি দেহি ইংলিশও কয়, দেখছেন নি স্যার’ তরাতরি জিপে উঠান স্যার। ভেরি খাতারনাক আওরাত স্যার।’ সাদিব পুলিশের পা জড়িয়ে ধরে , আমার মাকে ছাইরা দেন স্যার। আ-আমরা খারাপ না, প-পরিস্থিতির স্বীকার। পুলিশ কোনো কথা শোনেনা । সাদিবের জড়ানো পা নিয়েই পুলিশ এগুতে থাকে। ব্রিজের কাছে এসে একটা লাত্থি মেরে পুলিশ পা ছাড়িয়ে নেয়। সাদিব পুলিশের গাড়ির পেছন পেছন দৌড়াতে থাকে।

Spread the love

You may also like...

error: Content is protected !!