ইংরেজিতে intangible বলে একটা কথা আছে। যা আছে, যাকে অনুভব করতে পারি কিন্তু ছুঁতে পারি না তাই-ই হ’ল intangible. ভাবনাও হ’ল সেরকম একটা জিনিস। চিন্তা আর ভাবনাকে একসঙ্গে জুড়ে নিয়ে আমরা প্রায়শই উচ্চারণ করি। কিন্তু মনে রাখতে হবে চিন্তা আর ভাবনা দুটো এক জিনিস নয়। মানুষের মস্তিষ্কে নিরন্তর চিন্তার প্রবাহ চলছে। ঠিক যেন আলোক প্রবাহের মতো। আলোকরশ্মির মত সমান্তরাল সে চিন্তারশ্মির অন্তিম পরিণতি কি হবে তা নির্ভর করে অনেকগুলো বিষয়ের উপর। সেই বিষয়গুলো নিহিত থাকে মানুষের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, সামাজিক শিক্ষা, মস্তিষ্ক ও মনের বিকাশের জন্যে বিবিধ চর্চা, প্রকরণ ইত্যাদির উপর। এইবার আসুন একটু অন্যভাবে ভাবা যাক। মানবিক বিকাশের এই সব প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে সঠিকভাবে চললে কী হয়। আসলে মনের অন্দরে দুটো আতস কাঁচ (লেন্স) তৈরি হয়। এই আতস কাঁচও intangible. ছোঁয়ার উপায় নেই। কিন্তু অনুভব করা যায়। একটি উত্তল, অন্যটি অবতল আতস কাঁচ। উত্তলটির মধ্যে দিয়ে সমান্তরাল চিন্তারশ্মি ভেদ করে যাবার পর convergent হয়ে একই বিন্দুতে মিলিত হলে প্রচণ্ড শক্তিশালী সেই বিন্দুটি হল “বুদ্ধিমত্তা”। ভেবে দেখুন আলোকরশ্মির ক্ষেত্রে এই বিন্দুটিই হ’ল ফোকাস। শক্তিশালী সেই আলোকবিন্দু কাগজে আগুন ধরিয়ে দেয় সে তো আমরা জানি। কেন্দ্রীভূত চিন্তাবিন্দুটিও সেই ভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তখন সেটা যার হয়, সেই মানুষকে প্রকৃত অর্থে intelligent বা বুদ্ধিমান বলি।
এইবার আসুন অবতল আতস কাঁচটার কথায়। শুধু বুদ্ধিমান হলেই তো পূর্ণ-মানুষ হিসেবে কেউ পরিচিত হ’ন না। তাই দরকার এই দ্বিতীয় অবতল আতস-কাঁচটাকেও। সমান্তরাল চিন্তারশ্মি এই আতসকাঁচ ভেদ করে যাওয়ার পর divergent বা বিচ্ছুরিত চিন্তারশ্মিতে পরিণত হয়। নানা দিকে ছড়িয়ে পড়া সেই চিন্তাই হ’ল, ভাবনা। এই ভাবনা আর বুদ্ধিমত্তা একত্রে মিলিত হয়ে জন্ম দেয় সৃজনশীলতার অর্থাৎ নতুন ভাবনার। তাহলে এই দুটো আতস কাঁচই আমাদের মধ্যে থাকা দরকার।
কিন্তু এই দুই আতস কাঁচ তো বাজারে গেলাম আর কিনে নিলাম এরকম কিছু করা যায় না। দীর্ঘ পরিশ্রম, প্রকৃত শিক্ষা আর সংস্কৃতির চর্চার মধ্যে দিয়ে গড়ে ওঠে মনের অন্দরে। তবেই জন্ম নেয় নতুন নতুন ভাবনা।