Cafe কলামে ডঃ সঞ্চারী ভট্টাচার্য্য – ১৪

মটন কারীর জন্ম বৃত্তান্ত

ভোজন রসিক বাঙালীর ছুটির দিন মানেই কিন্তু দুপুর বেলা জম্পেশ করে কব্জি ডুবিয়ে ধোঁয়া ওঠা ভাত ও গরম পাঁঠার মাংসের কারী খাওয়ার দিন, তা সে যতই স্বাস্থ্য সচেতন হোক না কেন। আর এর ঝলক দেখতে চান! বেশ-তাহলে বাজার পানে উঁকি দিলেই নজরে পড়বে সেই ভক্তকুলের সংখ্যা। যাই হোক, এই যে মাংসের ঝোল বা কারীর এহেন কদর তার কিন্তু জন্মের এক বৃত্তান্ত আছে। সেই কথাই বলবো আজ।
এর জন্ম হয়েছিল ভ্রাম্যমান এক যানে- ব্রিটিশ ভারতের সুপারফাস্ট, বিলাস বহুল ফ্রন্টিয়ার মেলে, তাও এক সাহেবের হাত ধরেই। এখানে ছিল তৎকালীন যাবতীয় আধুনিক বন্দোবস্ত। এই মেল ট্রেন ঠান্ডা রাখতে ব্যবহার করা হতো বরফের চাঁই। আর সেই যাত্রাকে আরো একটু স্বাচ্ছন্দ্য পূর্ণ করতে শুরু হলো প্যান্ট্রির ব্যবস্থা। আর এক মাহেন্দ্রক্ষনেই সেই প্যান্ট্রিতে জন্ম হয়েছিল এই মটন কারীর।
ঘটনা হলো এক ব্রিটিশ অফিসার বেশ রাতে খাদ্যের সন্ধানে হাজির হন ট্রেনের প্যান্ট্রিতে। ক্যান্টিনে পাচকরা তখন নিজেদের জন্য জম্পেশ করে তেল, ঝাল, মশলা সহযোগে মাংস রান্নায় ছিল ব্যস্ত। আর সেই সুবাসে কাবু হন খোদ সাহেবও। কথায় আছে ঘ্রাণেই অর্ধভোজন! সাহেবের হলো তেমন দশা। সেই গন্ধে মজে গেলেন সাহেব,আবদার জানালেন চেখে দেখার। আর তা খেয়ে অত্যন্ত প্রীত হয়ে সাহেব পাচকদের আর একটু কম ঝাল, মশলা দিয়ে এই রান্নার অনুরোধ করেন।
কিছুকাল পর আবার সাহেবের আগমন ঘটলে পাচকরা তাঁর কথা মেনেই একটু হালকা করে বানান এই পদটি। ব্যাস- সাহেব তো বেজায় খুশি। আনন্দে পাঁঠার মাংসের সেই পদের নাম করেই ফেললেন ‘Railway Mutton Curry’- সেই জন্ম হল ভোজন রসিক বাঙালীর ভালোবাসার এক স্পর্শকাতর ক্ষেত্রস্থলের। যার জন্ম কি না ফ্রন্টিয়ার মেলে তার কথা শুনে যে সেই গতিতেই পেটের ভিতর গণেশের বাহনদের দাপাদাপি শুরু হবে তাতে আর আশ্চর্যের কি! যদিও ফ্রন্টিয়ার মেল আর নেই, স্বাধীনতার পর নাম হয়েছিল গোল্ডেন টেম্পল মেল। কিন্তু বহু অভীষ্ট এই পদটির জন্ম বৃত্তান্ত ইতিহাস হয়ে গেছে। ঘোর বাস্তব হিসেবে আজও বাঙালীর ছুটির দিনের সঙ্গী হয়ে রয়ে গেছে এই মটন কারী।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।