মার্গে অনন্য সম্মান শংকর ব্রহ্ম (সেরার সেরা)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার

সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব – ৮৫
বিষয় – নববর্ষে বাঙালি

বাঙালির নববর্ষ

কোন কোন ঐতিহাসিক মনে করেন সৌর পঞ্জিকা অনুসারে বহুকাল আগে থেকেই সৌর বছরের প্রথম দিন বাংলা, আসাম, কেরালা, মণিপুর, নেপাল ইত্যাদি বিভিন্ন ভারতীয় প্রদেশে মূলত ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে নববর্ষ পালিত হতো।
অন্যদিকে আবার বহু ঐতিহাসিক মনে করেন যে বাংলা বর্ষপঞ্জিকার পরিমার্জন এর মাধ্যমে খাজনা আদায়ের ব্যবস্থা কে একটি সুষ্ঠু রূপ দেওয়ার জন্য মুঘল সম্রাট আকবর সৌর পঞ্জিকা এবং হিজরি সনের মেলবন্ধন ঘটিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিকার প্রচলন করেন। কিন্তু বহু ঐতিহাসিক আবার এই দাবিকে নস্যাৎ করে দিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিকে হিন্দু ঐতিহ্যের দিনপঞ্জীর সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে করেন।
একথা সত্য যে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে আকবরের শাসনকালের বহু আগেও বাংলা বর্ষপঞ্জিকা এবং নববর্ষ উদযাপনের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। সেজন্য আকবরকে বাংলা বর্ষপঞ্জির উদ্ভাবক বলে ধরে নেওয়া যুক্তিসম্মত মনে করেন না তারা। আধুনিক গবেষণার ফলে মনে করা হয় গুপ্তযুগীয় বঙ্গসম্রাট শশাঙ্কের শাসনকালেই বঙ্গাব্দের সূচনা হয়।
বাঙালির জীবনে নববর্ষ উদযাপনের সার্বিক গুরুত্ব অপরিসীম। সমগ্র একটি বছর ধরে মানুষের জীবনে যে মানসিক ক্লান্তি, গ্লানি ও হতাশা জন্ম নেয় সেগুলি থেকে মুক্তির পথ অন্বেষণেই উৎসবের সার্থকতা। বাঙালির নববর্ষ উদযাপন এক্ষেত্রে কোনো ব্যতিক্রম নয়।
নববর্ষ উদযাপনের মধ্য দিয়ে সকল বাঙালির মধ্যে গড়ে ওঠে এক অপূর্ব স্বাজাত্যবোধ, বেঁচে থাকে বাঙালিয়ানা। বিভিন্ন উৎসবের পালনের মধ্যে দিয়ে বাংলার অগণিত মূল্যবান লোকসংস্কৃতি বিশ্বের দরবারে পরিচিতি পায়। পৃথিবীজুড়ে সকল বাঙ্গালির মধ্যে ঐক্যগত মেলবন্ধনের সেতু রচিত হয়।
নববর্ষ প্রতিটি বাঙালির জীবনের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনটিতে বাঙালি পৃথিবীর যে কোনেই থাকুক সে তার জাতীয় ঐতিহ্য উদযাপন করতে মেতে ওঠে। এই দিনটিকে কেন্দ্র করে সর্বস্তরের বাঙ্গালিদের মধ্যে কিছু বিশেষ প্রথা প্রচলিত রয়েছে। যেমন এই দিনে বাঙালি পুরুষেরা সাধারনত পাঞ্জাবী ও ধুতি পরে এবং মহিলারা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক শাড়িতে সেজে ওঠে।
তাছাড়া এই দিনে বাঙালি ঘরে ঘরে পান্তা-ইলিশ বিভিন্ন রকমের ভাজা খাওয়ারও প্রচলন রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ তথা বাংলাদেশ এই দিনটিকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে মহা আনন্দ সহকারে পালন করা হয়ে থাকে। চারিদিকে পরম আনন্দের পরিবেশে বিভিন্ন মেলা ও উৎসবে বাঙালি জাতির মানুষ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। তাছাড়া সংস্কৃতিপ্রিয় বাঙালি জাতির কাছে এই দিনটি নিজেদের সংস্কৃতি চর্চার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন।
বাংলা নববর্ষ হল বাঙালির বাঙালিত্বকে উদযাপন করার সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতির মধ্যে যাতে কোনোভাবেই অপসংস্কৃতির কু-প্রভাব প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে প্রতিটি স্তরে সকল বাঙালিকে সচেতন হতে হবে।
নববর্ষ উদযাপনের মধ্য দিয়ে বাঙালির বাঙালিত্ব বিশ্বায়িত হোক, বাঙালি সংস্কৃতি মর্যাদা পাক বিশ্বের দরবারে, আধুনিক ভোগবিলাসমূলক জীবন দর্শন ত্যাগ করে আপন আত্মা ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধির দিকে বাঙালি যত্নবান হয়ে উঠুক এটুকু আশা করা যায় নিশ্চয়ই। নববর্ষে বাঙালিত্ব এবং বাঙালি সংস্কৃতির পবিত্র উদযাপনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জীবনের সকল অন্ধকার দূরীভূত হয়ে নতুন জীবনের আশার আলোয় নতুন বছর ভরে উঠুক।

“অসতো মা সৎ গময়,
তমসো মা জ্যোতির্গময়।”

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।