মার্গে অনন্য সম্মান সুচন্দ্রা বসু (সর্বোত্তম)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার
পাক্ষিক প্রতিযোগিতা পর্ব – ৩০
বিষয় – সততার মূল্য

স্ট্রেচারে বিয়ে

চিকিৎসকরা জানান, আরতি পঙ্গু হয়ে গিয়েছেন, বেশ কয়েক মাস বিছানা থেকে উঠতে পারবেন না। এমনকী চিকিৎসার পরেও তাঁর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা কম। শুনে পরিবারের সবাই হতাশ
হয়ে পড়ে।বিয়ে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায়
থমথমে হয়ে যায় বিয়েবাড়ির পরিবেশ।
পণের দাবিতে বিয়ে ভেঙে যায় কিন্তু এমন দৃষ্টান্ত
পাওয়া যায় না। কেউ কোনদিন শুনেছে, বিয়ের ৮ ঘণ্টা আগে দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে যাওয়া স্ত্রীকে স্ট্রেচারে শুয়ে থাকা অবস্থাতেই ম্লান মুখে বিয়ে করে সসম্মানে গ্রহণ করেছে?
বড় বেলু এলাকার বাসিন্দা আরতির বিয়ে ঠিক হয়েছিল পাশের গ্রামের অম্লানের সঙ্গে। বিয়ের দিন সকাল আটটায় আরতির গায়ে হলুদ হয়। সেদিনই বেলা একটা নাগাদ একটি শিশুকে বাঁচানোর চেষ্টা করে ছাদ থেকে পড়ে যান আরতি। ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় তাঁর শিরদাঁড়া। কোমর, পা সমেত শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রতঙ্গও ভয়াবহ চোট পায়। সানাইয়ের শব্দ ডুবে যায় কান্নায়, আরতিকে ভর্তি করা হয় পাশেই শ্রমজীবী হাসপাতালে।
এই পরিস্থিতিতে বিয়ে ভেঙে যাবে ভেবে আরতির বাড়ির লোকেরা আরতির বোনকে বিয়ে করার জন্য অম্লানের কাছে প্রস্তাব দেন। কিন্তু অম্লান অন্য ধাতুতে গড়া। সাধারণ পরিবারের অতি সাধারণ চেহারার এই যুবক চলে যান হাসপাতালে, ভাবী স্ত্রীর পরিচর্যায় হাত লাগান তিনি।
অম্লান জানিয়ে দেন, তিনি আরতিকেই বিয়ে করবেন। বিয়ের যে লগ্ন ঠিক ছিল, সে সময়েই হবে অনুষ্ঠান। স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন,হাসপাতালে গিয়ে অক্সিজেনের সাহায্যে শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া আরতিকেই বিয়ে করতে চান তিনি। তাঁর জেদে চিকিৎসকরা ঘণ্টাদুয়েক পর অ্যাম্বুলেন্সে আরতিকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। আরতি তখন স্ট্রেচারে শুয়ে, অক্সিজেন, স্যালাইন চলছে। সেই অবস্থাতেই তাঁকে সিঁদুর পরিয়ে স্ত্রীর সম্মান দিলেন অম্লান। মুখরিত হুলুধ্বনির সাথে বাজল শাঁখ, বাজল থেমে যাওয়া সানাই। অতিথি আপ্যায়ন থেকে শুরু করে হল একের পর এক যাবতীয় মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান। শুধু শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার বদলে আরতিকে আবার নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। পরের দিন তাঁর অপারেশন ফর্মে সই করেন স্বয়ং অম্লান।
বিয়ের পর এক সপ্তাহের বেশি কেটে গিয়েছে। হাসপাতালে স্ত্রীর পাশ থেকে সরেননি অম্লান। স্ত্রীর সেবা করে চলেছেন তিনি, দ্রুত সেরে ওঠার আশ্বাস দিয়ে চলেছেন। চিকিৎসকরা বলেছেন, অন্তত ২সপ্তাহ আরতিকে হাসপাতালে থাকতে হবে, আগামী বেশ কয়েক মাস বিছানা ছেড়ে উঠতে পারবেন না। কিন্তু কোনও কষ্টই গায়ে লাগছে না আরতির। স্বামীর হাত শক্ত করে ধরে জীবনের এই তিক্ত-মধুর সময় হাসিমুখে কাটিয়ে দিচ্ছেন তিনি।
আরতির ভাগ্য ভালো যে অম্লানের মতো একজন সৎ
মানুষকে স্বামী হিসাবে পেয়েছে।অম্লানের বাড়ি
থেকে আপত্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি পিছিয়ে আসেননি বরং একটি প্রশ্নবাণ ছুঁড়ে দিয়েছেন দুই
পরিবারে।আরতির বোনকে বিয়ে করার পরে যদি
তারও এই একই ঘটনা ঘটে তখন কি করবেন?
অম্লান নিজে একজন ডাক্তার তাই আরতি বেঁচে থাকাকালীন তার পক্ষে অন্য কাউকে গ্রহণ করা সম্ভব না। সে দেখাতে চায় মানুষকে ভালবেসে
কাছে টেনে নিলে  সুস্থ হয়ে উঠবে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।