লেন্সের কালি-গ্রাফি – ১

অবলোকন এবং অবগাহনের পুণ্যস্নান গঙ্গাসাগর

মনখারাপি দিনগুলোতে ঘুরতে যাওয়ার মত অনাবিল আনন্দ আর কিছুতে পাওয়া যায় না। শুধু মনখারাপি বললে ভুল হবে, যখন যে কোন সময়েই বেরিয়ে পড়া যায় এই অপরূপ প্রাকৃতিক শোভা চাক্ষুস করার জন্য।

কোথাও বা আকাশ ছোঁয়া পাহাড় আবার কোথাও বা আকাশ এবং মাটির মেলবন্ধনের অপরূপ সমুদ্র। গুচ্ছ গুচ্ছ মঞ্জুল শোভায় পরিপূর্ণ প্রকৃতির ঝুলি।

কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও, সাধ্যের মধ্যে সবার সম্ভব হয়ে ওঠে না প্রকৃতি অবলোকনের। তার জন্যেও রয়েছে উপায়। কাছাকাছি, অর্থানকুল এবং অল্প সময়ের মধ্যেই বেরিয়ে আসা যায়, এরকম ও কয়েকটি জায়গা রয়েছে। যেখানে প্রয়োজন শুধু অফুরান উদ্যমের।

একেই তো শীতকাল তায় আবার পৌষ মাস উঁকি মারবে, মারবে করছে। গরম কালের ঠাঁটা পড়া রোদের থেকে অনেকেই শীতকালের আরামদায়ক আবহাওয়াকে বেছে নেয় বেড়ানোর অনুকূল সময় হিসাবে।

এমত অবস্থায় দু’দিন ছুটি কাটানো, এবং মনরোম আবহাওয়া উপভোগ করার জন্য রয়েছে গঙ্গাসাগর মেলা। কুম্ভ মেলার পরেই ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম হিন্দু মেলা হলো গঙ্গাসাগর মেলা। নানা প্রান্ত থেকে নানাবিধ মানুষের সমাগম হয় এই গঙ্গাসাগর মেলা বা পুণ্যস্নানে।
গঙ্গা সাগর মেলা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণে সাগর দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত কপিলমুনির আশ্রমে প্রতি বছর মক্রর সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত একটি মেলা ও ধর্মীও উৎস। গঙ্গা নদী (হুগলি নদী) ও বঙ্গোপসাগরের মিলন স্থানকে বলা হয় গঙ্গাসাগর। এটি একদিকে তীর্থভূমি আবার অন্যদিকে মেলাভূমি। এই দুয়ের মেলবন্ধনে আবদ্ধ গঙ্গাসাগর-মেলা।

যাত্রাপথ:
বেশ দূর এবং সময় সাপেক্ষ যাত্রাপথ হওয়ার দরুন, একদম ভোরবেলা বেড়োনোই অনুকূল।
শিয়ালদহ থেকে ট্রেন ধরে নামখানা বা কাকদ্বীপ স্টেশনে নামতে হবে। অথবা ধর্মতলা থেকে বাসে করে কাকদ্বীপ বা নামখানা যাওয়া যেতে পারে। সেখান থেকে মিনিট ১০এর পথ ফেরিঘাট। স্টেশন এর বাইরেই অটো পাওয়া যায়। অটো ফেরিঘাট পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। ফেরিঘাটের লাইন বেশ সময় সাপেক্ষ। বেশ সময় নিয়ে সেই লাইনে অপেক্ষা করতে হবে। যেহেতু লঞ্চে লোকসংখ্যা বাধা থাকে।

এছাড়াও ভাটার সময় লঞ্চ পরিষেবা বন্ধ থাকে। ফলত ফেরিঘাটের জন্য একটু বেশি সময় হাতে রাখবেন। এরপর লঞ্চ পেরোতে প্রায় ঘন্টা খানেক মত লাগবে। ফেরিঘাট পেরোনোর পর, সেখান থেকে বাসে করে গঙ্গাসাগরের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে।

লঞ্চে করে ওপর প্রান্তে পৌঁছানোর পর সেখান থেকে বাসস্ট্যান্ড মিনিট পাঁচেকের হাঁটা পথ। বাস পরিষেবা যথেষ্ট সুন্দর। বাসে যেতেও প্রায় ঘন্টা খানেক মত লাগবে। মোটামুটি গঙ্গাসাগরে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সূর্য্য পাটে বসে যাবে।

তবে একটু রাত করে পৌঁছালেও এখন আর সেরকম কোন অসুবিধা হয় না। জীবনযাত্রা আধুনিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই পরিবেশ ও পরিবর্তন এনেছে প্রচুর। আগে শুধু কিছু মাত্রই আশ্রম ছিল। শৌচালয় পরিষেবাও তুলনামূলক ছিল অপরিচ্ছন্ন। যেহেতু এখন গঙ্গাসাগর মেলা ছাড়াও  সারাবছরই প্রায় লোক ঘুরতে যায়, তাই জন্য গড়ে উঠেছে অনেক হোটেল। এছাড়াও আশ্রম পরিষেবাও রয়েছে। যদি একটু ভালো এবং পরিচ্ছন্ন ভাবে থাকতে চান তবে অবশ্যই হোটেল বেটার। তবে আশ্রমের পরিষেবাও এখন আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। এছাড়াও জায়গায় জায়গায় শৌচালয় তৈরি হয়েছে এবং যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন ও বটে।

চিত্রগ্রহণে – সুবীর মন্ডল
লেখায় – অনিন্দিতা ভট্টাচার্য

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।