সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব – ১১৪)

রেকারিং ডেসিমাল

সেই যে কলকাতার শারদীয়া দুর্গোৎসব, সেই ছবি হয়ে থাকল সবার মনে।
বিজয়ার আত্মীয় সম্ভাষণ সেরেই পেটে ব্যথায় কাহিল রোগিণীকে বড় ডাক্তার ভর্তি করে নিলেন হাসপাতালে।

অনভিজ্ঞ ক্ষুদ্র ডাক্তার ভাবছিলো পেটের ওপর দিকে, মানে পাকস্থলীতে কোন অসুস্থতা খুঁজে পাওয়া যাবে। বহু অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ চিকিৎসক রোগিণীর পেটে হাত দিয়ে পরীক্ষা করতে করতে মাথা না ঘুরিয়েই বললেন, না না তলায় পাবে। এখুনি ভর্তি করো।

সবাই ভাবলো কেনই বা ভর্তি ? কত কত পরীক্ষায় ত কিছুই পাওয়া যায়নি। শুধু রক্ত একটু কম, সে তো আয়রন টায়রন খেলেই ঠিক করে ফেলা যায়।

সেই অভিজ্ঞ মানুষটি ছোট ডাক্তারকে পড়ালেন যত্ন করে। সারা জীবনের মত গেঁথে যাওয়া শিক্ষা।

… একশ কেজির বেশি ওজনেও হিমোগ্লোবিন ছয় কেন ভাবো। ছিদ্র কোথায়?
ভর্তি করো।

হলো ভর্তি।
কোলোনোস্কপি করার আদেশ হল।
পরীক্ষার আগের দিন এক লিটার সাবান গোলার মত ওষুধ খেতে হয়। পেটটা ধুয়েমুছে সাফ হলে তবেই ভিতরে ক্যামেরা দিয়ে দেখা তো।
সকাল সকাল সবাই হাসপাতালে।
রোগিণীর ট্রলির সাথে বৌমা ও ওটিতে ঢুকে পড়ল।
কিন্তু নাহ. পেটে নোংরা ভর্তি। হল না।
বাইরে বেরিয়ে ফিসফিস করেন শ্বাশুজী, এ বাবা আবার কাল সেই সাবান খেয়ে আসা। হায় হায়, বাবুর পয়সা গুলোর শ্রাদ্ধ হল রে। আমি ত বুঝতে পারিনি। কী বিচ্ছিরি খেতে রে। ধ্যুত। আমি যে আদ্ধেকটা খেয়ে বাকি বাথরুমের বেসিনে ফেলে দিলাম।
যাঃ
কাল পুরোটাই খেতে হবে তার মানে।

বৌমার ত চক্ষু চড়কগাছ!

হয়েছিল কোলোনোস্কপি পরের দিন।
গোটা তিনেক টিউমার পাওয়া গেলো। তিন নম্বরটা বড় ছিল বেশি, তারপর আর ক্যামেরা যায়নি।
বায়োপসি নেয়া হল।
কিন্তু ডাক্তার ছুটি দিলেন না।
পরের দিন কালি পুজো।
সন্ধ্যায় বাড়ির সবাই বাচ্চাদের তাদের আম্মু দাদার কাছে রেখে হাসপাতালে এলো।
তিতিবিরক্ত রোগিণী অস্থির হয়ে যাচ্ছেন।
পরের পরের দিন ভাইফোঁটা।
ছেলে মেয়ের ফোঁটার দিকে তাকিয়ে থাকেন মা।
তাঁর ত ভাই নেই। এদের ফোঁটার আনন্দেই তাঁর আনন্দ।
এরা চিন্তায় মুখ কালো করে বলছে ফোঁটা হবে না।

বৌমা ভিতরে প্যাথলজিতে ঢুকে পড়ে। বন্ধুরা আছে সেখানে ও।
রিপোর্ট হয়েছে কিনা খোঁজ নেয়।
জুনিয়র চিকিৎসক বন্ধু জানায় দশটা বায়োপসি নেয়া হয়েছিল ছোটো ছোটো। সাতটা দেখা হয়েছে। বিনাইন। মানে ক্যান্সার নেই।
তিনটি স্লাইড সবচেয়ে বড় ডাক্তার ওনার ড্রয়ারে রেখেছেন।
চাবি বন্ধ। তাই দেখা যাচ্ছে না।
তবে সাতটা যখন সুস্থ রিপোর্ট, বাকিও ভালোই হবে। নিশ্চিন্ত হয়ে বাড়ি যা।

বৌমা এসে এক গাল হেসে খবর দেয়। বরকে বলে, যাও ত কাল ফোঁটা নিতে। এসে দেখবে ছুটি লিখে দিয়েছেন ডাক্তার।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।