গায়ত্রীদির অনেক চুল। মস্ত বড় একটা বিনুনি পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে খোঁপা করে রাখে। পড়াশোনা ও জানে। নাকি বাগনানের কোন প্রাইমারি ইস্কুলে পড়াতো।
এখানে তার নিজের একখানা ঘর তিন তলায়। লম্বা রান্নাঘরের মুখোমুখি, ট্যাঙ্কের দিকে নামার সিঁড়ির পাশে। বড়ই ঘরখানা। তাতে ওর খাট, আয়না, ট্রাঙ্কে জিনিসপত্র। দেয়ালের হুকে রোজকার ব্যবহারের জামাকাপড়, চুল বাঁধার লম্বা ফিতে, পরিপাটি গামছা।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন মানুষটা। ছিমছাম। দাদু দিদা মেয়ের মতই দেখেন তাকে। আর চক্ষে হারান।
সারাক্ষণ ডাক পড়ে, গায়ত্রী জল, গায়ত্রী চা, গায়ত্রী পানের ডাব্বা, গায়ত্রী চবন বাহার কোথায় গেলো….
বেঁটেখাটো মানুষটা বাঙলা করে পড়া শাড়ির আঁচল আঁটোসাটো করে কোমরে গুঁজে দৌড় দেয়।
যাই যাই, এই আসি। উফ বাবা কত দিকে যাব। কারোর এক বিন্দু তর সয় না যে।
বেশি বক বক করলে বৌদিদের কাছে বকুনি খায় গায়ত্রী।
থামাবি বকর বকর? এত কথা কোথা থেকে আসে হ্যাঁ?
এই জন্যই ত সব গণ্ডগোল হয়। চুপ।
তর্ক করতে শুরু করে গায়ত্রী।
কই গণ্ডগোল?
আবার কথা ? কে কাল বেশি নুন দিলো মাছের ঝোলে? হ্যাঁ?
আর এই যে জর্দা দেয়া কম চুণের পানটা সেজ জামাইবাবুকে না দিয়ে সেজ দাকে দিয়ে এলি, আর আমরা গালি খেলাম। বলি কার জন্য?
অগত্যা চুপ করে গায়ত্রী।
রান্নাঘরে গজগজ করতে থাকে।
দিদা পাশে নিজের ঘরের থাকে আস্তে করে ডাক দেন।
খাটের বাজু ধরে দাঁড়িয়ে থাকা গায়ত্রীকে বৃদ্ধ দম্পতি আদরের কথা বলেন কত।
সে হাসি মুখে রান্নাঘরে ফিরে যায়।
বৌমারা বিরক্ত হয়ে বলে, দেখছ, দেখছ, কি ভাবে মাথায় তোলে গায়ত্রী কে?
এই জন্য কারো শাসন মানে না। দিন দিন বেয়াড়া হয়ে যাচ্ছে।