বিহার রাজ্যের মানুষ স্বদেশী মানুষকে ভালোবাসে। নিজেদের প্রতি টান প্রচুর । কাঁকড়া প্রজাতির মত একজনকে উপরে উঠতে দেখলে অন্যরা তার ঠ্যাং ধরে টেনে নামিয়ে আনতে চেষ্টা করে না। সেটা বাঙালির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট।
কৃষ্ণমোহন নিজে বড় ব্যবসায়ী হয়েই নিজের ভাইবন্ধুদের কলকাতার সোনার খনির খবর দিয়ে ডেকে এনেছিল। তার ছেলেদের কলকাতার ইস্কুল কলেজে পড়িয়েছিল। ব্যবসায় হাতেখড়ি হচ্ছিল সকলেরই। এই প্রথমে ভাড়া নেওয়া গ্যারাজে বেড়ে উঠছিল তার ভাইয়ের পরিবার।
নিজের গ্রামের আরও লোকজনও নিয়ে এসেছিল। তার মধ্যে দুলন থেকে গেল পাশেই। ইস্তিরির ঠেলা বানিয়ে।
একখানা ছোট চালা দেয়া কাঠের ঠেলা একটা বাড়ির দেয়ালের গায়ে দাঁড় করানো থাকত সারা দিন । ভোর থেকে উনোনে লোহার ইস্তিরি চাপায় দুলন। বড় বড় টানা টানা চোখ,পাকানো গোঁফ, বেশ একটা ঢিলেঢালা চেহারা। দেখলেই মনে হত নিরীহ ভালো মানুষ লোক।
দুপুরে ওইখানেই ছাতু বা রুটি আচার খেয়ে ঠেলার ওপর দেয়ালের দিকে মুখ করে এক ঘুম। বিকেলে ফের উনোন জ্বললে ইস্তিরি শুরু ।
দাদুদের বাড়িতে জামাকাপড় পৌঁছে দিয়ে যেত এসে। এরা কিনা তার মুরুব্বি কিষনদাদার আশ্রয়দাতা।
মা এ বাড়ির প্রথম নাতবউ।
তিনি এসেই শ্বাশুড়ি মায়ের থেকে বরের জামাকাপড় হ্যান্ড ওভার পেয়েছেন। তাই দুলনের সঙ্গে নতুন বউয়ের ভারি ভাব।
নতুন বউ সাইজে ছোট।
এ বাড়িতে সবাই বেশ লম্বাচওড়া মানুষ।
তার ওপরে বাবা মায়ের একটি মাত্র সন্তান আর পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকা মানুষ মহিলা-জাতীয় পটুত্ব থেকে বহুদূরে থেকেছেন চিরকাল।
তাঁর মায়ের বক্তব্য থাকত, শুধু মানুষ হও, মাইয়া মানুষ হোয়োনা।
অনেকগুলি বিষয় পাস করে তবে ডাক্তার হয়া যায়। কিন্তু জামার কলার পরিষ্কার করা বা ইস্তিরি ত তারমধ্যে ছিল না।
কাজেই তিনি জলদি বন্ধুত্ব পাতিয়েছেন দুলনের সঙ্গে।