“নীল সুনীলে দিন যাপন” সনাতন পাঠকের পুরাণ কথায় শাল্যদানী

নন্দিকেশ্বর

মহাকালং মহাবীরং
শিববাহনম উত্তমম।
গণন্মত্ব প্রথম বন্দে
নন্দীশ্বরম মহাবলম।।

যে কোনও শিব মন্দিরে প্রবেশ করার সময়ে সবার আগে যাঁর দিকে দৃষ্ট যায়, তিনি এক মহাষণ্ড। যাঁকে আমরা নন্দী বলেই জানি। এবং তাঁর পরিচয় শিবের বাহন হিসেবে। কিন্তু এ কথা আমাদের অনেকেরই জানা নেই, নন্দী স্বয়ং শিবেরই অবতার।
‘শিবপুরাণ’ জানাচ্ছে, নন্দী কৈলাসে শিবালয়ের দ্বাররক্ষী। শৈব ঐতিহ্য অনুসারে, তিনি নন্দীনাথ সম্প্রদায়ের আট প্রধান পুরুষের গুরু। যে আটজনের মধ্যে যোগদর্শনের প্রবক্তা মহামুনি পতঞ্জলীও রয়েছেন। এই আট প্রবক্তাই শৈব দর্শনকে আট দিকে ছড়িয়ে দেন বলে বিশ্বাস।
নন্দীকে ষণ্ড বা ষাঁড় রূপে কল্পনা করা হয়। এর পিছনে রয়েছে দীর্ঘ ঐতিহ্য। দার্শনিক দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘লোকায়ত দর্শন’ গ্রন্থে সিন্ধু সভ্যতার সময় থেকে টোটেম হিসেবে ষাঁড়ের উপাসনার কথা জানিয়েছিলেন। ষাঁড় অনেক সভ্যতাতেই সূর্য ও শৌর্যের প্রতীক হিসেবে পূজিত হত। পরে তা শৈব ধর্মের অঙ্গীভূত হয়। এবং শিবের বাহন হিসেবে তাকে গণ্য করা হতে থাকে।
পুরাণ অনুসারে নন্দী শিলদ মুনির সন্তান। শিলদ শিবের কাছে থেকে এক অমর সন্তান চেয়েছিলেন। শিবের প্রসাদেই চিরঞ্জীব নন্দীর জন্ম হয়। নন্দী কোনও মানবীর গর্ভজাত নন। তিনি অযোনিসম্ভূত, যজ্ঞাগ্নি থেকেই তাঁর উদ্ভব।
আগম ও তন্ত্র ঐতিহ্যে নন্দীকে প্রবল জ্ঞানী বলে মনে করা হয়। এই জ্ঞান তিনি স্বয়ং শিবের কাছ থেকেই প্রাপ্ত হন। এই জ্ঞানই তিনি তাঁর আট শিষ্যকে দান করেন। এই আট জন হলেন— সনক, সনাতন, সানন্দন, সনৎকুমার, তিরুমুলার, ব্যগ্রপদ, পাতঞ্জল এবং শিবযোগ।
বিবিধ পুরাণ থেকে জানা যায়, নন্দী অসংখ্য বার বিভিন্ন পরাক্রান্ত বীরের মোকাবিলা করেছিলেন। তিনিই রাবণকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে, তাঁর স্বর্ণলঙ্কা এক বানর দগ্ধ করবে।
আজও নন্দী দ্বাররক্ষী হয়ে বিরাজ করছেন তাবৎ শিব মন্দিরে। তিনি বিরাজ করছেন বিভিন্ন শৈব সম্প্রদায়ের পতাকা।
হর হর নন্দিকেশ্বর
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।